ভূস্বর্গ কাশ্মীর আমাদের গর্ব। কাশ্মীরের পহেলগামকে বলা হয় মিনি সুইৎজারল্যান্ড। সেই পহেলগামেই জঙ্গি আক্রমণে রক্তাক্ত হল। মঙ্গলবার ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে পহেলগামের বৈসারন ভ্যালি রিসর্টে। সেখানে পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচিত জানতে চেয়ে রীতিমতো ‘টার্গেট কিলিং’ চালায় জঙ্গিরা। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও অনেক পর্যটক। কিন্তু এত বড় ঘটনার পরও বিসিসিআই অথবা আইপিএলের তরফ থেকে কোনো বার্তাই দেওয়া হয়নি। পহেলগামের এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে, অন্যদিকে আইপিএলের খেলার প্রতিদিনের মতো শুরু হয় সন্ধে সাড়ে সাতটায়। এদিন দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টসের খেলা ছিল। এই বীভৎস হত্যাকাণ্ডে দেশ যখন শোকস্তব্ধ, তখন কিন্তু আইপিএল ক্রিকেট শুরুর আগে সেইসব প্রয়াত পর্যটকদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হল না। অবশ্যই এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানা ঘটনার ২৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই নিহতদের স্মরণে বড় সিদ্ধান্ত নেয় বিসিসিআই। বুধবার আইপিএল ক্রিকেটে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ানসের খেলায় কোনওরকম আলোর রোশনাই ও আতশ বাজির প্রদর্শিত হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি চিয়ার গার্লসদের নাচও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এদিন খেলা শুরুর আগে নীরবতা পালন করা হয়েছে। দুই দলের সমস্ত খেলোয়াড় ও আম্পায়ারদের কালো আর্ম ব্যান্ড পরে মাঠে দেখা যায়।
এই জঙ্গি আক্রমণের নিন্দায় মুখর হয়েছেন ভারতের ক্রিকেটাররা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন শুভমান গিল, কে এল রাহুল, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, গৌতম গম্ভীর সহ আরও অনেকে।
দিল্লি ক্যাপিটালসের তরফ থেকে বার্তায় বলা হয়েছে যে, ‘পহেলগামের ঘটনা অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। এই কঠিন সময়ে আমরা পাশে আছি।’
এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরে নিরীহ পর্যটকদের উপর হামলায় গভীরভাবে শোকাহত এবং মর্মাহত। এই ভয়ঙ্কর ঘটনায় যাঁরা শিকার হয়েছেন সেইসব পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। শান্তিপ্রিয় মানুষের উপরে এই ধরনের হিংসাত্মক হামলা মানবতার মুখে করাঘাত।’ ভারতীয় দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। যারা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত ভারত প্রত্যাঘাত করবেই।’ দুঃখ প্রকাশ করে কেএল রাহুল বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরে জঙ্গি আক্রমণের ঘটনা শুনে ভেঙে পড়েছি। মৃতদের পরিবারের জন্য আমার প্রার্থনা রইল।’
অন্যদিকে বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার শ্রীবৎস গোস্বামী বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আর কোনও দিন ক্রিকেট খেলা উচিত নয়। যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিসিসিআই বা ভারত সরকার পাকিস্তানে দল পাঠাতে চায়নি, তখন অনেকে বলেছিল, খেলাকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত। এখন তারা কী বলবে? এবার সময় এসেছে, যে ভাষা তারা বোঝে, সেই ভাষায় উত্তর দেওয়া।’
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, এই ধরনের পদক্ষেপ ক্রিকেট মাঠে নতুন নয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছিল বিসিসিআই। এমনকি ওই সময় নিহতদের পরিবারের জন্য অর্থদানও করা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওই বছরই একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে ভারতীয় খেলোয়াড়রা সেনাবাহিনীর ক্যামোফ্লাজ ক্যাপ পরে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজীব শুক্লা জানিয়েছেন, এই জঙ্গি হামলার নিন্দা করি। এই পরিস্থিতির জন্যই পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ভারত খেলে না। ভবিষ্যতেও খেলবে না। তিনি আরও বলেছেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নেব।
