• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

কোচ মোলিনার মোক্ষম চালে বাজিমাত সবুজ মেরুন ব্রিগেডের

কোচ জোসে মোলিনা দু'বার দুই ভিন্ন দলের দায়িত্ব নিয়ে দু'বারই আইএসএল ট্রফি জয় করলেন। আইএসএলের ইতিহাসে এমন ১০০% সাফল্য কোনো কোচের নেই।

ফাইল চিত্র

রনজিৎ দাস

আইএসএল লিগ শিল্ড জয়ের পর মোহনবাগান এসজি আইএসএল কাপও জয় করলো। যুবভারতীতে ষাট হাজার সমর্থকদের উপস্থিতিতে মোহনবাগান ২-১ গোলে বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়ে কাপ জয় করলো। দেড় মাসের ব্যবধানে ঘরের মাঠে পরপর দুটো টুর্নামেন্ট জয়ে মোহনবাগান সমর্থকরা বেজায় খুশি হয়েছেন। আইএসএল কাপের ফাইনাল ম্যাচ দারুন উত্তেজনার মধ্যে শেষ হলো। কোচ জোসে মোলিনার একের পর এক চালে ম্যাচ রোমাঞ্চকর হয়ে উঠে। আইএসএল লিগ শিল্ড জয়ের সুবাদে মোহনবাগান সরাসরি আইএসএল কাপের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পায়। সেমি ফাইনালের অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে গিয়ে মোহনবাগানকে বিপক্ষের জামশেদপুর এফসির কাছে হার মানতে হয়। ঘরের মাঠে ফিরতি সেমি ফাইনাল ম্যাচে অবশ্য মোহনবাগান প্রতিপক্ষ জামশেদপুর এফসিকে হারিয়ে ফাইনালে প্রবেশ করে। বিপুল পরিমাণ সমর্থকদের উপস্থিতিতে পরপর সেমি ফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ জিতেই মোহনবাগান আইএসএএল কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো।

সমর্থক পরিপূর্ণ গ্যালারির চাপ সামলে মোহনবাগান ক্লাবের এমন পরপর সাফল্যে কোচ জোসে মোলিনার অবদান অস্বীকার করা যাবে না। সেমি ফাইনাল ও ফাইনাল-দুটো ম্যাচই মোহনবাগানের মাষ্ট উইন ম্যাচ ছিল। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে কোচ জোসে মোলিনা একের পর এক রণকৌশলের পরিবর্তন এনে জয় তুলে নিলেন।

কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনার নজির কোচ মোলিনা এর আগেও দিয়েছেন। নিজের জীবনের কঠিনতম লড়াই তাকে একসময় করতে হয়েছে। স্পেনের ডেপোর্তিভো লা করনায় খেলার সময় যখন হাঁটুর চোটে টিমের বাইরে ছিলেন, সেসময় মাত্র ৩৩ বছরে তার কঠিন ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে তিনি আবার খেলার মাঠে ফিরে আসলেন‌। খেলার সুযোগ পেতে ডেপোর্তিভো এলসি ক্লাব ছেড়ে ভ্যালেন্সি ক্লাবে যোগদান করেন‌। অবশ্য, ২০০৬/০৭ মরশুম শেষেই খেলা থেকে অবসর নেন। স্পেনের জাতীয় দলের গোলকিপার জোসে মোলিনা দেশের হয়ে ইউরো ও বিশ্বকাপেও খেলেছেন। এ্যটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে স্পেনের লা লিগা জিতেছেন। ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের হয়ে দু’বার কোপা দেল রে জিতেছেন। স্পেনের লা লিগায় ৪১৫টা ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই খেলা ছাড়ার সাথে সাথেই কোচিংয়ে মন দেন। স্পেনের ভিল্লারিয়ালের জুনিয়র দলের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেন। তারপর বিভিন্ন সিনিয়র দলের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। হংকং ও মেক্সিকোর ক্লাব দল যথাক্রমে কিট্সি এফসি ও অ্যাটলেটিকো সান লুইস ক্লাবের দায়িত্ব সামলান। এএফসির কাপে হংকংয়ের কিট্সি এফসির প্রশিক্ষক হয়ে ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের বিপক্ষেও লড়াই করে দু-দু’বার অপরাজিত থাকেন।

২০১৬ সালে আইএসএলের তৎকালীন এটিকে ক্লাবের দায়িত্ব নেন। এবং সেই মরশুমে এটিকে আইএসএল ট্রফি জয় করে। মাত্র ৪ মাসের প্রশিক্ষণে এটিকেকে আইএসএল ট্রফি দিলেও পরের মরশুমে তিনি এটিকের কোচ ছিলেননা। সেসময় তিনি রয়্যাল স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের স্পোর্টিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব নেন। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি ঐ পদে ছিলেন।গত মরশুমে জুয়ান ফার্নান্দোর প্রশিক্ষণে মোহনবাগান লিগে খারাপ অবস্থায় থাকলে, দলকে কোচিং করানোর জন্য জোসে মোলিনার ডাক পড়ে। কিন্তু অল্পসময়ের জন্য তিনি সেই দায়িত্ব নেননি। পরবর্তী সময়ে অ্যান্টোনিও লোপেজ হাবাস মোহনবাগানের টিডি হয়ে আসেন। এবং মোহনবাগান আইএসএল লিগ শিল্ড জয়ী হয়। কিন্তু আইএসএল কাপ জয়ে ব্যর্থ হয়।

এই মরশুমের শুরুতেই কোচ জোসে মোলিনাকে মোহনবাগানের কোচিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। জোসে মোলিনা সে প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এই মরশুমের প্রথম টুর্নামেন্টেই মোলিনার মোহনবাগান কাপ জয়ে ব্যর্থ হয়। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে তার দল নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের কাছে প্রথম হাফে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও টাইব্রেকারে পরাজিত হয়। তারপর আইএসএলের ম্যাচ খেলতে গিয়ে প্রথম তিন ম্যাচেই আশানুরূপ ফল আসেনি। কোচ জোসে মোলিনাকে নিয়ে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত আইএসএলে রেকর্ড সংখ্যক ১৫টা ম্যাচে দলের ক্লিনশিট রেখে লিগ শিল্ড জয়ী হন। লিগ শিল্ড জয়ের পর আইএসএল কাপ জয়ে মরশুমে দ্ধিমুকুট পাওয়া হলো। লিগ শিল্ড ও কাপে মোট ২৭টা ম্যাচ খেলে ২৪টা ম্যাচ অপরাজিত হয়েছে। মাত্র তিনটে ম্যাচে হার হয়েছে। ১৯টা ম্যাচে জয় ও ৫টা ম্যাচে ড্র হয়েছে। ২৭ম্যাচে তারা ৫২টা গোল করেছে। আইএসএলে এবার দ্ধিমুকুট জয়ে নানাবিধ রেকর্ড করে মোহনবাগান স্বপ্নের দৌড় শেষ করলো।

কোচ জোসে মোলিনা দু’বার দুই ভিন্ন দলের দায়িত্ব নিয়ে দু’বারই আইএসএল ট্রফি জয় করলেন। আইএসএলের ইতিহাসে এমন ১০০% সাফল্য কোনো কোচের নেই। সামনেই সুপার কাপের খেলা শুরু হবে। জুনিয়র ফুটবলারদের তুলে আনার সিদ্ধহস্ত কোচ মোলিনা পরবর্তী টুর্নামেন্টে কি কৌশল নেন, তা নিয়ে কৌতূহল থাকবে। সুপার কাপের ফলাফলের অপেক্ষা না করেও বলা যায়, কোচ জোসে মোলিনা মোহনবাগান এসজির সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন।