সিএবি পরিচালিত প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। খেলছে ইস্টবেঙ্গল ও ভবানীপুর। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের খেলায় ভবানীপুরের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা বল করছেন। এদিনের খেলা নিয়েও বেনজির বিতর্ক সৃষ্টি হল। এদিন খেলার শুরুতেই এইরকম ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন ইডেনে উপস্থিত থাকা দর্শকরা। প্রথম এক ওভারে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে বোলাররা মাত্র তিন ওভার বল করলেন। অবাক কাণ্ড! এমন ধীর গতিতে বল করার পিছনে কী কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
গত সোমবার খেলার দ্বিতীয় দিনে একটি আউটকে কেন্দ্র করে টানা পাঁচ ঘণ্টা খেলা বন্ধ ছিল। আম্পায়ার কৃষ্ণেন্দু পাল ভবানীপুরে হাবিব গান্ধিকে আউট ঘোষণা করেন। গান্ধি ওই বলটি মারতে গিয়ে ব্যাটের কোনায় লেগে বল চলে যায় ইস্টবেঙ্গলের সন্দীপন দাসের কাছে। তিনি ক্যাচ ধরেছেন বলে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার কৃষ্ণেন্দু পাল। কিন্তু তারপরেই আম্পায়ার কৃষ্ণেন্দু পাল স্কোয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা আম্পায়ার অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে ডাকেন। সেই সময় সাকিব হাবিব গান্ধি ব্যাট হাতে প্যাভিলিয়নের পথে পা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গিয়েছিল দুই আম্পায়ারের আলোচনা শেষে সাকিব হাবিব গান্ধিকে আবার ব্যাট করার জন্য ডেকে আনা হয়। তবে এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয়ে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
এমনকি তাঁরা খেলবেন না বলে আম্পায়ারকে জানান। সমস্যা মেটাতে মাঠে আসেন সিএবির সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি, বরঞ্চ জল আরও ঘোলা হতে ঙাতে। শেষ পর্যন্ত সৌরভ গাঙ্গুলিকে ডেকে আনতে হয় বাড়ি থেকে। সৌরভ গাঙ্গুলি দুই দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। শেষ পর্যন্ত খেলা শুরু হলেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা। যেখানে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই শেষ কথা বলবে, সেখানে কেন সিএবি’তে কোনও পদে না থাকা সৌরভ গাঙ্গুলিকে হস্তক্ষেপ করতে হল, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি শোনা গেছে, সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি সহ যে সমস্ত কর্মকর্তারা এই মুহূর্তে দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা কী করলেন? তাহলে কি ওই পদগুলি শুধুই অলঙ্কার? সিএবির প্রশাসনে যদি সৌরভ গাঙ্গুলিকে এই মুহূর্তে প্রয়োজন হয়, তাহলে বিশেষ কোনও পদ দিয়ে তাঁকে আহ্বান করা উচিত।
আর এদিন এক ঘণ্টায় তিন ওভার বল করা হল, তার পিছনে কারণ কী? ইডেনে কোনও বৃষ্টি হয়নি। অন্ধকারও নেমে আসেনি। ঝড় ওঠেনি। তবে কেন এই পরিস্থিতি হল? তবে দেখা গেছে, বার বার মাঠে শুয়ে পড়ছেন লাল-হলুদের বোলার থেকে ফিল্ডাররা। ইচ্ছাকৃতভাবে বল দূরে থ্রো করা হচ্ছে। খেলার কোনও ইচ্ছেই ছিল না তাঁদের। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ম্যাচের প্রথম দিনে ভবানীপুর ক্লাব ব্যাট করতে নেমে তিন উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান করে। বল হয়েছিল ৮৩ ওভার। সাকিব ১০২ রানে নটআউট ছিলেন। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভবানীপুরের স্কোর বোর্ডে দেখা গিয়েছে ৪ উইকেটে ৩৯২ রান। সাকিব ১৭৫ রান ও বিবেক সিং ৪৪ রানে নটআউট থাকেন। মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরু হলেও ধীর গতিতে তা চলতে থাকে। ভবানীপুর শিবির থেকে বলা হয়, প্রতিপক্ষ দলের খেলার ইচ্ছে না থাকলে এমনই অবস্থার সঙ্গে সামিল হতে হয়। ইস্টবেঙ্গল চাইছে যুগ্ম বিজয়ী হয়ে এবারের মতো খেলা শেষ করতে। কিন্তু সিএবি’র কর্মকর্তারা এই ব্যাপারটাকে কেন কঠিন হাতে মোকাবিলা করতে চাইছেন না, এই প্রশ্নে সিএবি’র নির্বাচন খেলা করছে? আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সিএবি’তে নির্বাচন রয়েছে। তাই কোনও দলকেই ঘাঁটাতে চাইছেন না কর্মকর্তারা। এই রকম অখেলোয়াড়িচিত মনোভাব যে দল প্রকাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি হওয়া উচিত। ভবানীপুর ক্লাবের সচিব সৃঞ্জয় বসু বলেছেন, যেহেতু বড় দল এমন ঘটনা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া সিএবি’র পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না। যদি ভবানীপুর মাঠ ছেড়ে চলে যায় এবং পাঁচ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে, তখন কি এই মনোভাব প্রকাশ করা হত সিএবি’র পক্ষ থেকে? ভবানীপুর কেন, অন্য যে কোনও দল এই ধরনের ব্যবহার করত, তাহলে কি তারা শাস্তি থেকে দূরে থাকত। সিএবি’র বড় দলের প্রতি যে মনোভাব প্রকাশ করেছে, তা সঠিক নয়। সিএবি’র প্রাক্তন সচিব বিশ্বরূপ দে অভিমত প্রকাশ করে বলেন, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই তো শেষ কথা বলে। কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা অবশ্যই সমীক্ষা করে দেখা উচিত।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা ক্রিকেটকে কখনওই কলুষিত করতে চাই না। যে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে ড্রেসিং রুমে চলে গিয়েছেন, তাঁকে কীভাবে আবার ডেকে নিয়্ছে ব্যাট করতে বলা হয়, আমাদের সে বিষয়ে কোনও কিছু জানা নেই। আমরা মাঠে রয়েছি, দল তুলে আনিনি। এই প্রচণ্ড তাপদাহে খেলোয়াড়রা কীভাবে খেলবেন, তা উপলব্ধি করা উচিত ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বোলারদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছয়, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আর যদি সিএবি’র ওভার লিমিট সংক্রান্ত কোনও নিয়ম থাকে, তাহলে
শাস্তি দিক।
উল্লেখ্য, আইপিএল ক্রিকেটে নির্দিষ্ট ক্রীড়াসূচি অনুযায়ী এদিন ইডেন উদ্যান মেতে থাকত ফাইনাল খেলাকে ঘিরে। সেই খেলার পরিবর্তে ইডেনে উপস্থিত থাকা দর্শকরা বাংলা ক্রিকেটে একটা লজ্জার সাক্ষী
হয়ে রইলেন।