রোহিত শর্মাদের ভারতীয় দলের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল ম্যাচটা শুধু চ্যালেঞ্জ নয়, অত্যন্ত মর্যাদার লড়াই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তাই মঙ্গলবার এই ম্যাচকে ঘিরে ভারতীয় দলে নতুন করে আস্থা খুঁজে পেয়েছেন ক্রিকেটাররা। সবার মুখেই একটা কথা বারবার শোনা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে। তাহলেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যাওয়ার জবাবটা দেওয়া যাবে। শেষ ম্যাচে রোহিতরা ৪৪ রানে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচ জিতে শীর্ষস্থানে পৌঁছয়। তখনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল শেষ চারের খেলায় ভারতের সামনে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল। হয়তো সেদিনই ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা শপথ নিয়ে ফেলেছেন মধুর প্রতিশোধ নিতে হবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু তার আগে ভারতীয় দলের প্রথম একাদশে কারা খেলবেন, তা নিয়ে কোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিরাট কোহলির সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে।
তাঁরা স্বীকার করেছেন, এই ম্যাচটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় দলের কাছে। এটা ঠিক, ভারতীয় দল সংগ্রামী ভূমিকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে থাকবে। কোনওভাবেই প্রতিপক্ষ দলকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া চলবে না। তাই কোচ গৌতম গম্ভীর মনে করেন, তাঁদের কাছ টসটা একটা বড় ফ্যাক্টর। যাঁরা চিৎকার করে উঠেছিলেন দুবাইয়ের মাঠে খেলতে নেমে ভারতীয় দল বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে, তাঁদের জানান দিতে হবে, দুবাইয়ের মাঠটা কিন্তু ভারতের ঘরের মাঠ নয়। উইকেট তৈরি হয় ব্যাটসম্যান ও বোলারদের জন্যই। সেই উইকেটে ব্যাটসম্যানরা কীভাবে মোকাবিলা করবেন প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের বিরুদ্ধে সেটাই হল আসল কথা। তাই উইকেট কাদের পক্ষে খেলা করবে, তা মাঠে নামলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
এখন অনেকেই বলছেন, ভারত যেহেতু ধারাবাহিকভাবে দুবাইয়ের মাঠে খেলছেন, সেক্ষেত্রে তাদের বাড়তি সুবিধা থাকবে। এই ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়ে অধিনায়ক রোহিত শর্মার অভিমত, উইকেটকে ব্যবহার করতে হয় নিজের খেলার মধ্যে দিয়ে। সেখানে কোনওভাবেই কথার সাগরে ভাসিয়ে দিলে চলবে না। এই নিয়ে হয়তো বিতর্ক তৈরি হয়েছে বা অভিযোগ করছেন অনেকে। এই অভিযোগ বা বিতর্ককে কোনওভাবেই আমল দিতে চাইছেন না ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। রোহিত বলেছেন, সেমিফাইনালের ম্যাচটা একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। আর এটাও মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকবার উইকেট নতুন করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। পরপর তিনটি ম্যাচে উইকেটের চরিত্র ছিল একেবারে আলাদা। আমরাও দুবাইতে এসে নতুন উইকেটে খেলেছি। আমরা তো কখনও বলিনি, এই উইকেট আমাদের পক্ষে সুবিধাজনক নয়। আবার বোলারদের মুখেও শুনিনি তাঁদের সহায়ক পিচ হয়েছে। তাহলে ভারত কোথা থেকে বাড়তি সুবিধা পেল। এখনও আমাদের জানা নেই, সেমিফাইনাল ম্যাচ কোন পিচে হবে? কিন্তু যে উইকেটে খোলা হোক না কেন, তাকে মানিয়ে নিতে হবে। বোলাররা যে পিচে ভালো খেলবেন, তার উপরই ভিত্তি করে সবাইকে খেলতে হবে। তাই উইকেটের চরিত্র দেখেই মাঠে নামতে হবে এবং কীভাবে তাকে ব্যবহার করতে হবে, তা দিনকে দিন উপলব্ধি করতে হবে ক্রিকেটারদের।
আবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুতগামী বোলাররা সেইভাবে সুবিধা আদায় করে নিতে পারেননি। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা চেষ্টা করেছেন, এটাই তো খেলার গতি বদলে দেন। সেক্ষেত্রে সতীর্থ ক্রিকেটারদেরও সচেতন হতে হয়। এদিকে অধিনায়ক রোহিত শর্মা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাঁচজন স্পিনারকে খোলানো নিয়ে কথা প্রসঙ্গে বলেন, দুবাইতে আইএলটি টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দেখার পরে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, দুবাইয়ের উইকেট খুব মন্থর হয়ে থাকে। সেই কারণে স্পিনারদের গুরুত্বকে এখানে কদর করতে হবে। আর সেভাবেই ভারতীয় দলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় দলে কারা খেলতে পারেন, সেই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা প্রকাশ করেননি কোচ গৌতম গম্ভীর। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া দলের ম্যাথু শর্ট ছিটকে গিয়েছেন। তাঁর পরিবর্তে ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ওপেন করবেন হয়তো জেক ফ্লেজার ম্যাককার্ট।
মনে করা হচ্ছে ভারতীয় দলে প্রথম একাদশে খেলবেন যাঁরা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন তাঁরাই। খুব সম্ভবত হর্ষিত রানাকে বাইরে থাকতে হবে। যদি চার স্পিনার দিয়ে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়া দলকে চাপের মধ্যে রাখতে পারে, সেক্ষেত্রে মহম্মদ শামির পরিবর্তে আর্শদীপ সিংকে দলে রাখা যেতে পারে। অবশ্য এবারের এই প্রতিযোগিতায় আর্শদীপ এখনও পর্যন্ত ভারতীয় দলে প্রথম একাদশে খেলেননি। রোহিত শর্মার পাশে সহকারী অধিনায়ক হিসেবে শুভমন গিলকে দেখতে পাওয়া যাবে। রোহিত শর্মা ব্যাটে ফিরে এসে বড় রান করার চেষ্টা করবেন। শুভমন তাঁর দক্ষতা প্রকাশ করার জন্য অবশ্যই তৈরি রয়েছেন। বিরাট কোহলির উপরে বড় প্রত্যাশা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিরাট নিজেকে নতুনভাবে পরিচয় দিতে পারেন কিনা। শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাটে রান আসছে। এটা একটা ভালো দিক। অক্ষর প্যাটেলও নিজেকে তৈরি করে নিয়েছেন। আবার উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল নিজেকে ব্যাটসম্যান হিসেবেও তুলে ধরতে চাইছেন। হার্দিক পাণ্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব, মহম্মদ শামি বা বরুণ চক্রবর্তী প্রতিপক্ষ দলকে কীভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবেন, সেটাও কিন্তু দেখার বিষয়। আবার অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ জোরের সঙ্গে বলেছেন, প্রতিপক্ষ ভারতীয় দলকে হারাতে শিবিরের প্রত্যেক ক্রিকেটার প্রস্তুত রয়েছেন। খেলার উত্তেজনা প্রথম থেকেই উচ্চমার্গে পৌঁছে যাবে বলে বিশ্বাস।