• facebook
  • twitter
Saturday, 19 July, 2025

মোহনবাগান নির্বাচনে সমঝোতায় দু’পক্ষই হাত মেলানোর পথে

এতদিন ধরে যে নির্বাচনী সভাগুলিতে ভিড় দেখা গিয়েছে, সবাই যে তাঁরা সদস্য ছিলেন, তা নয়। অনেকক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের ও সমর্থকদের ভিড়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ছোটবেলায় আমরা প্রায়ই দেখতাম, আড়ি-ভাব খেলা। কিছুদিন কেউ কারওর সঙ্গে কথা বলত না। তারপরে কিছুদিন বাদে আবার তাদের ভাব হয়ে যেত। ঠিক সেইরকম খেলাই এবারে মোহনবাগান নির্বাচনে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শাসক গোষ্ঠী এবং বিরোধী গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে যেভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করে দিয়েছিল, তা ক্লাবের ঐতিহ্যে কালিমা লাগছিল। বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্ত সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, ক্লাবের গরিমায় কোনওরকম কালির দাগ যাতে না লাগে, সেই ভাবনাতে যদি টুটু বসু সচিব পদে লড়াই করেন, তখন আমি নিজেই সরে দাঁড়াব, কিন্তু কোনওভাবেই তিন বা চার মাস বাদে পদত্যাগ করে ছেলে সৃঞ্জয় বসুকে বসানো চলবে না। তা লিখিতভাবে জানাতে হবে।

আবার বিরোধী গোষ্ঠীর সচিব পদপ্রার্থী সৃঞ্জয় বসু বলেছিলেন, ক্লাব যেভাবে চলছে, সেখানে পরিবর্তন আনা উচিত। সচিব দেবাশিস দত্ত নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করার একটা প্রবণতা ক্লাবের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। এটা কোনওদিনই মোহনবাগানের সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আবার টুটু বসু বলেছেন, এই দেবাশিস পরিবারের মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছেন। শুধু আমাদের নয়, প্রয়াত বন্ধু সচিব অঞ্জন মিত্রের পরিবারের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। সেই কারণে একে অপরের বিরুদ্ধে যেভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে, তা মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষে কোনও শুভ বার্তা নয়। দুই পক্ষই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে যে হারে অর্থ ব্যয় করে ভোটের দামামা বাজিয়েছেন, তা কী বার্তা দিয়েছে, এই প্রশ্ন এখন দেখা দিয়েছে।

গত শুক্রবার থেকে দুই পক্ষই নিজেদের মধ্যে একটা সমঝোতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। তাঁদের কাছে নাকি বার্তা আছে, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা মোহনবাগানের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন কিছু না ঘটুক, যা সদস্যদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছয়। তারপরেই ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়, কীভাবে সমঝোতার প্রশ্নে দুই পক্ষ এগিয়ে আসবে। এরই মাঝে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বার্তা দিয়েছিলেন, মোহনবাগানের নির্বাচন না হয়ে সমঝোতায় নতুন কর্মসমিতি গঠন করা হোক। এক্ষেত্রে বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তকে সভাপতি পদে এবং প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসুকে আবার সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া হোক। ক্রমেই এই বার্তা আরও বড় আকারে পৌঁছে যেতেই দুই পক্ষই নির্বাচন থেকে সরে আসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। সমঝোতার প্রশ্নে এখন বড় করে দেখা দিয়েছে দুই গোষ্ঠীর কত জন কর্মসমিতিতে আসবেন। সত্যিই যদি দেবাশিস দত্ত সচিব পদ থেকে সরে যান, সেক্ষেত্রে তাঁর সমর্থিত সদস্যরা কর্মসমিতিতে কতজন জায়গা পাবেন, তা নিয়ে টানাপোড়েন হবে। আবার সচিব পদপ্রার্থী সৃঞ্জয় বসু তাঁর সমর্থিত সদস্যদের কতজনকে জায়গা দিতে পারবেন ওই কর্মসমিতিতে, এটাও দেখার বিষয়। বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় দুই পক্ষেই রয়েছেন। তাঁদেরকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেই কথা এখন বড় করে সবার মুখে মুখে ঘুরছে। অনেককেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে সভায় তাঁরা ভিড় করেছেন এবং বক্তব্য রেখেছেন। তাই এখন দুই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা যদি মিলিঝুলি কর্মসমিতি গঠন করেন, সেক্ষেত্রে অনেকেরই নাম বাদ চলে যাবে। তখন তাঁদের কাছে কী বার্তা দেবে?

এতদিন ধরে যে নির্বাচনী সভাগুলিতে ভিড় দেখা গিয়েছে, সবাই যে তাঁরা সদস্য ছিলেন, তা নয়। অনেকক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের ও সমর্থকদের ভিড়। অনেকেই মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য নন। এখন সমঝোতা হওয়ার খেলাটা সেই আড়ি-ভাব খেলায় পরিণত হয়ে গেল।

এদিকে নির্বাচন কমিটি মনোনয়নপত্র নেওয়া এবং জমা দেওয়ার পাশাপাশি স্ক্রুটিনি করার পরে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কবে যে নির্বাচন হবে, সেই দিনটা ঘোষণা করেননি। সাধারণত যে কোনও সাধারণ নির্বাচনে কবে, কোথায় নির্বাচন হবে, তার দিন ঘোষণা করে দেওয়া হয়। সঙ্গে মনোনয়নপত্র নেওয়া, জমা দেওয়া, মনোনয়ন প্রত্যাহার করা এবং স্ক্রুটিনি করার দিনের পাশে ফলাফল কবে বের হবে তাও ঘোষণা করে দেওয়া হয়। আর মোহনবাগান নির্বাচনে তা ঘটল না। এখন অনেকেই বলছেন, যদি নির্বাচন না হয়, তার আগে কোনও হল বুক করে নেওয়ার দরকার কী? তাহলে কি এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়, তখন থেকেই এই সমঝোতার খেলাটা শুরু হয়েছিল? এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে দৈনিক স্টেটসম্যান কাগজে মোহনবাগান নির্বাচন যে সমঝোতার পথেই এগোচ্ছে, এই খবর গত ২৪ মে প্রকাশিত হয়েছিল। অবশেষে সেই পথেই মোহনবাগানের নির্বাচনে দুই পক্ষই হাত মেলাতে চলেছে।