ভাবতে অবাক লাগে ভারতের ৩৭১ রানের জবাবে ইংল্যান্ড দল স্বচ্ছন্দেই ৫ উইকেটে জয় তুলে নিল। ভারতীয় দল এইভাবে হারের মুখে পড়বে প্রথম টেস্ট ম্যাচে, তা কোনও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ভাবতেই পারেননি। এমনকি একটা সময় মনে হয়েছিল ভারতীয় দল জেতার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু ভারতীয় দলের বোলাররা সেইভাবে ঝলসে উঠতে পারেননি। সবচেয়ে অবাক হতে হয়, ভারতের সেরা বোলার যশপ্রীত বুমরা প্রথম ইনিংসে ৫টি উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর বলে কোনও ধার ছিল না। যার ফলে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা কোনও চাপের মধ্যেই পড়েননি। সেই কারণে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার তালিকায় ইংল্যান্ড দল ১০ নম্বরে নাম লিখিয়ে ফেলল। কিন্তু এর পিছনে কারণ কী? একথা বলতে গিয়ে জয়ী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস বলেছেন, দলের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং আন্তরিকতা জয়ের জন্য সবসময় কথা বলে থাকে।
পাঁচ টেস্ট সিরিজে প্রথম ম্যাচে ভারতীয় দল শুরুটা ভালোই করেছিল। এই কথা বলে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মাঠে যখনই দল ভালো জায়গায় খেলে, তখন প্রথম ও মাঝের সরির ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব থাকে। কখনওই নিচের সারির ব্যাটসম্যান বা বোলারদের উপর নির্ভর করলে চলবে না। সেইখানে ভারতীয় দল কিন্তু পিছিয়ে পড়েছে। নিঃসন্দেহে ভারতের চারজন ব্যাটসম্যান শতরান করেছেন। তার মধ্যে আবার উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থের মুন্সিয়ানাকে তারিফ করতেই হবে। ঋষভের দু’টি শতরান একই ম্যাচে, তার জন্য কুর্নিশ করতেই হবে। কিন্তু আরেকটা কথা বলতেই হবে, জিততে গেলে লক্ষ্য থাকবে, সেই লক্ষ্যকে জয় করতে গেলে সমবেত প্রয়াস থাকার প্রয়োজন। ভারতের নিচের সারির ব্যাটসম্যানরা যেভাবে কম রানের মধ্যে আউট হয়ে গেছেন, সেটা কিন্তু দলের পক্ষে শুভ নয়। ঋষভরা যে কাজটা করেছেন, সেখানে বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলারদের ভূমিকা সেইভাবে চোখে পড়েনি।
টসে জিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস কেন বোলিং নিয়েছিলেন, তা নিয়ে সমালোচনায় মুখর ছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। ম্যাচ জেতার পরে সেইসব বিশেষজ্ঞরা এখন কী বলবেন? একদিনের বা সীমিত ওভার ক্রিকেটে খেলার চরিত্রের সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ মেলালে হবে না। এই প্রসঙ্গে বেন স্টোকস বলেছেন, টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিনের খেলা। তাই আগে থেকে কেউ সিদ্ধান্ত নিয়ে বলতে পারেন না, কোন দল জিতবে? দু’দলের কাছেই ভাগ্য একটা কথা বলে। শুধু ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা ক্যাচ ফেলেছেন, তাই-ই নয়। আমাদের দলের খেলোয়াড়রাও ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন। তাহলে সেই অঙ্কে বলতে পারা যায়, ক্রিকেটারদের মানসিকতাকে যদি শক্ত না করা যায়, তাহলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হয়ে যেতেই পারে। আবার অধিনায়ক বেন স্টোকস বলেছেন, যতবারই চাপের মধ্যে দল পড়েছে, ততই মনে হয়েছে, চ্যালেঞ্জে আরও সাহসী ভূমিকা প্রদর্শন করতে হবে। দক্ষতা অনেক সময় হারিয়ে যায়। তাই বলে দলের মানসিকতা জিইয়ে রাখতে হয়। সাজঘরে প্রত্যেকের মধ্যে একটা সমন্বয় গড়ে তোলা উচিত। আর তার প্রতিফলন পড়ে খেলার মধ্যে।
জয়ী অধিনায়ক বেন স্টোকস মনে করেন, ভারতের এই হারটা মানসিকতার। এটাও ঠিক মাঠের যুদ্ধে খেলোয়াড়রা যদি অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যায়, সেখানেও কিন্তু বিপদ ডেকে আনে। মনে হয় ভারতীয় শিবিরে এই ব্যাপারটা খেলা করেছে। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় দল ৬ রানে এগিয়ে থাকলেও এবং তিনজন খেলোয়াড় শতরান করলেন। সবাই ভেবেছেন, ভারতীয় দল দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড দলকে বেগ দেবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের দু’জন ব্যাটসম্যান শতরান করলেও স্কোরবোর্ডে বড় অঙ্কের রানও হল। তাই দেখে ইংল্যান্ড শিবিরে ভয় শব্দটা খেলা করেনি। বরঞ্চ দলের খেলোয়াড়রা আরও বেশি উজ্জীবিত হয়ে দুরন্ত ক্রিকেট খেলে জয় তুলে নিলেন।