• facebook
  • twitter
Thursday, 18 December, 2025

অভিষেক ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ক্রিকেটার কনস্টাস সবার নজর কাড়লেন

বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনেই ভারতকে চাপে রাখল অস্ট্রেলিয়া

ফাইল চিত্র

বক্সিং ডে টেস্ট ক্রিকেটের খেলা একেবারে অন্য মেজাজে হয়ে থাকে। সেই কারণে এই দিনের খেলা দেখার জন্য দর্শকরাও উন্মুখ হয়ে থাকেন। টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। অনেক দর্শক মাঠে এসেও খেলা দেখতে পারেননি। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই আবেগে ভেসে গিয়েছিল সারা স্টেডিয়াম। তারপরেই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা যখন টস করতে আসেন মাঠে, সেই সময় মাঠের দর্শকরা চিৎকারকরে দুই অধিনায়ককে অভিনন্দন জানান। টসে জিতেই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার হিসেবে নাথানকে বাদ দিয়ে সেই জায়গায় তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার স্যাম কনস্টাসকে নিয়ে আসা হয় দলে। অভিষেক ম্যাচেই তাঁর ব্যাট থেকে ভালো রান এলো এবং প্রমাণ করে দিলেন, তাঁর সংযোজনে কোনও ভুল ছিল না। তাই তো অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স কনস্টাসকে উৎসাহ দিয়ে তাঁর হাতে ব্যাট তুলে দিয়ে খেলার সূচনা করার জন্য এগিয়ে দেন। সঙ্গে উসমান খাওয়াজা মাঠে নেমেই ভারতীয় বোলারদের মোকাবিলা করতে গিয়ে কোনওরকম তাঁদের ভয় ছিল না। একের পর এক রান তুলে নিচ্ছিলেন দুই ওপেনার। নতুন ওপেনার কনস্টাস ৬০ রানের মাঠেয় আউট হলেও, তিনি ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন। এই তরুণ প্রতিভা আগামী দিনে অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে বড় হাতিয়ার হবেন, তা বলার অপেক্ষা থাকে না। মাত্র ৬৫ বলে ৬০ রান করেছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, বুমরার বলে ছক্কাও মেরেছেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে দু’টি ছক্কা ও ছ’টি বাউন্ডারি। তাঁর খেলার মধ্যে আলাদা একটা ছন্দ আছে। যখনই তিনি দেখেছেন উইকেটের বাইরে বল আছে, তখনই তিনি বাউন্ডারি বা ছক্কা মারতে কোনও ভুল করেননি। তাঁর সাহসীকতাকে অবশ্যই তারিফ করতে হয়। পাশাপাশি খাওয়াজাও তরুণ ব্যাটসম্যান কনস্টাসকে যোগ্য সহযোগিতা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট পড়ে ৮৯ রানের মাথায়। রবীন্দ্র জাদেজার বলে কনস্টাস এলবিডব্লু হন। খাওয়াজাকে জুটি বেঁধে আসেন লাবুশেন। দু’জনেই জুটি বেঁধে বড় রানের অঙ্কে পৌঁছে যান। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় উইকেটটি পড়ে ১৫৪ রানের মাথায়। আউট হন খাওয়াজা ৫৭ রানে। এই উইকেটটি পেয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। খাওয়াজা তাঁর বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন লোকেশ রাহুলের হাতে। মাঠে আসেন স্টিভ স্মিথ। স্টিভ স্মিথ বেশ গুছিয়ে খেলতে শুরু করেন প্রথম থেকেই। সঙ্গী লাবুশেন। দিনের শেষে স্মিথ ৬৮ রানে অপরাজিত রয়েছেন আর লাবুশেন আউট হয়ে যান ৭২ রান করে। বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে দেন ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে। অনেকেই ভেবেছিলেন, ট্র্যাভিস হেড প্রথম একাদশে থাকবেন না। বেশ কয়েকদিন ধরেই তাঁর চোট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলে থেকে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। হেডকে সরাসরি বোল্ড আউট করে দেন ভারতের নির্ভরযোগ্য বোলার যশপ্রীত বুমরা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে স্মিথের সঙ্গে খেলতে থাকেন মিচেল মার্শ।

Advertisement

কিন্তু তিনিও সেই অর্থে কোনও রান না করে ড্রেসিং রুমের দিকে পা বাড়িয়ে দেন। তিনি করেছেন মাত্র ৪ রান। যশপ্রীত বুমরার বল মার্শের ব্যাটে লেগে সরাসরি উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থের হাতে চলে যায়। অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেট হারাতে হয় ২৪৬ রানে। মাঠে আসেন উইকেটরক্ষক ক্যারি। তিনি শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন। রানও হচ্ছিল তাঁর ব্যাট থেকে। ক্যারি বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারলেন না। আকাশদীপের বলে ঋষভের হতে বন্দি হয়ে ক্যারি ৩১ রান করে প্যাভিলিয়নের দিকে হেঁটে যান। মাঠে আসেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কামিন্স ও স্টিভ স্মিথ সপ্তম উইকেট জুটিতে রান তুলতে থাকেন স্কোর বোর্ডে। প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ৩১১ রান করেছে ৬ উইকেটের বিনিময়ে। ক্রিজে রয়েছেন প্যাট কামিন্স ৮ রানে এবং স্টিভ স্মিথ ৬৮ রানে।

Advertisement

ভারতের বোলার যশপ্রীত বুমরা প্রথম দিনেই নজর কাড়লেন। তিনি তিনটি উইকেট তুলে নিয়েছেন। আর আকাশদীপ, ওয়াশিংটন সুন্দর ও রবীন্দ্র জাদেজা একটি করে উইকেট পেয়েছেন। তবে, অভিষেক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ব্যাটসম্যান যেভাবে একটা বর্ণোজ্জ্বল ব্যাটিং উপহার দিলেন, তা অনেকের কাছেই মনে থাকবে। তাই ১৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে যে স্পর্ধা দেখালেন, তাতে অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটসম্যানদের ঘুম উড়ে যাবে। বুমরার বলকে যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন, তখনই বোঝা গিয়েছিল, তাঁর ব্যাট কন্তু অন্য কথা বলছে। সেই ঘটনাই ঘটল। তাঁর ব্যাট ঝলসে উঠেছে একের পর এক রানের বাহাদুরিতে। ১৯ বছর বয়ীস এই ক্রিকেটার কনস্টাস আগামী দিনে তারকা হওয়ার পথে।

কিন্তু এদিনের খেলার সময় কনস্টাসের সঙ্গে বিরাট কোহলির সংঘর্ষ নিয়ে শোরগোল উঠেছে। দেখা যায়, যখন রণংদেহি মনোভাব নিয়ে ওই তরুণ ব্যাটসম্যান খেলছেন, তখন কোহলি স্লিপ কর্ডন থেকে তাঁকে তাতাচ্ছিলেন। এমনকি একটা সময় একটু ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর কাঁধে হাত দিয়ে একটু ধাক্কাও মারেন। সেই সময় পরিবেশ উত্তপ্তও হয়। কোহলি ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়েছেন বলে আম্পায়াররাও মেনে নেন। কোহলিকে ইতিমধ্যেই শাস্তি দিয়েছে আইসিসি। কোহলির ম্যাচ ফি থেকে ২০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে এবং ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হবে তার সঙ্গে। তবে, তরুণ ক্রিকেটার কনস্টাস বলেছেন, বিরাট কোহলি হয়তো দুর্ঘটনাক্রমেই আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। আমি তখন গ্লাভস ঠিক করছিলাম। আমি বুঝে ওঠার আগেই আমার কাঁধে ধাক্কা দেওয়া হয়। ক্রিকেট তো স্নায়ুর যুদ্ধের খেলা। এরকম হতেই পারে। দু’জনের মধ্যেই আবেগ প্রবাহিত হয়েছিল। আমি নিজে ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের মধ্যে ছিলাম। আর কোহলি হয়তো তার উল্টোদিকে ছিলেন। তাই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর এটা আমার জন্য ভালোই হয়েছে। যার ফলে আমি সেরা ম্যাচ খেলতে পেরেছি। আশা করব, পরের ম্যাচেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। আর এটাও মনে রাখবেন, আমি কিন্তু কোহলিরই ভক্ত।

Advertisement