• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ধেয়ে আসছে ‘খুনি’ গ্রহাণু, ধ্বংসের মুখে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ

২০২৪ ওয়াইআর৪-এর গতি ও কক্ষপথই বলে দেবে এটি পৃথিবীর জন্য কতটা বিপজ্জনক। সত্যিই সেটি পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবে কিনা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পৃথিবীর দিকে ক্রমশ ধেয়ে আসছে বিশালাকার এক গ্রহাণু। অজানা এই বস্তু বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বড়সড় বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসতে পারে পৃথিবীর বুকে। মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে পৃথিবীর একাধিক দেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মানব সভ্যতার একটি বৃহদ অংশ। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে এই আশঙ্কার তালিকায়। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৪০ থেকে ১০০ মিটার এই গ্রহাণুর পোশাকি নাম ২০২৪ ওয়াইআর৪। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ভয়ঙ্কর গ্রহাণুর নাম দিয়েছেন ‘সিটি কিলার’ বা ‘শহরের খুনি’।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩২ সাল নাগাদ পৃথিবীর ধার ঘেঁষে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসবে এই বিরল গ্রহাণু। আর ঠিক তখনই ধাক্কা লাগার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তবে বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরিবর্তে এর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়বে ওই গ্রহাণু। আর সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে বিরাট বিস্ফোরণ ঘটবে, যা ৮০ লক্ষ টন ট্রাই নাইট্রো টলুইনের সমান। অর্থাৎ জাপানের হিরোশিমায় ফাটা পরমাণু বোমার থেকে ৫০০ গুণ বেশি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ সহ্য করতে হবে পৃথিবীর বাসিন্দাদের।

Advertisement

ধারনা করা হচ্ছে, প্রায় ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে ধ্বংসলীলা চালাবে এই ২০২৪ ওয়াইআর৪। সেজন্য পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কোন প্রান্ত এই ‘গ্রহাণু দুর্ঘটনাপ্রবণ’, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন। নাসার বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্বে দিয়েছেন ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার ডেভিড র‌্যাঙ্কিন এবং তাঁর দলের সদস্যদের। গ্রহাণুটির গতিবেগ হিসাব কষে পৃথিবীর কোন কোন এলাকায় এটি আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সম্প্রতি সেই রিপোর্টটি প্রকাশ্যে এনেছে। র‌্যাঙ্কিনের টিমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রহাণুটি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, আরব সাগর অথবা আফ্রিকার যে কোনও জায়গায় আছড়ে পড়তে পারে। এর জন্য ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, সুদান, নাইজ়েরিয়া, ভেনেজ়ুয়েলা, কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরের বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নাসা আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, এই সম্ভাব্য তালিকা যে কোনও সময়ে বদলে যেতে পারে বলে।

ইতিমধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গোটা মানবজাতিকে বাঁচাতে সমস্ত আন্তর্জাতিক সংগঠনকে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিকল্পনা করা হচ্ছে, ২০২৪ ওয়াইআর৪ যদি প্রকৃতই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তাহলে তা ঠেকানোর কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনও সেই নকশা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। জানা গিয়েছে, বিশ্বের তাবড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ২০২৪ ওয়াইআর৪-এর খোঁজ মেলা অবধি সেটির উপর কড়া নজর রেখে চলেছে। আমেরিকার নাসা, রাশিয়ার রসকসমস, চিনের সিএনএসএ থেকে শুরু করে ভারতের ইসরো।

নাসার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ বছর অন্তর মাঝারি আকারের গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়। বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে তা আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়। বায়ুমণ্ডলে সংঘর্ষের ফলে গ্রহাণুর খুব কম অংশ অবশিষ্ট থাকে, যা জল কিংবা স্থলভাগে এসে পড়ে। গ্রহাণুগুলি তীব্র গতিবেগে আসার ফলে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হলেই গ্রহাণুর ওজনের কারণে সেই এলাকায় গর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০২৪ ওয়াইআর৪-এর গতি ও কক্ষপথই বলে দেবে এটি পৃথিবীর জন্য কতটা বিপজ্জনক। সত্যিই সেটি পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াবে কিনা। এ ব্যাপারে চলতি বছরের মার্চ মাসে টেলিস্কোপের সাহায্যে ২০২৪ ওয়াইআর৪ নামের এই গ্রহাণুটি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। তারপর কিছু দিনের জন্য মহাশূন্যে অনেকটা দূরে চলে যাবে। গ্রহাণুটি মহাশূন্যে একবার হারিয়ে গেলে ফের তার গতিপথ খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। সেটা হলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে হতে পারে। তাই মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই গ্রহাণুর ওপর নজরদারিতে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত প্রায় তিনশো বছর আগে অর্থাৎ ১৭০৪ সালে পৃথিবী ধ্বংসের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কর্তা স্যার আইজ্যাক নিউটন। তাঁর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, কেবলমাত্র গ্রহাণুর সংঘর্ষের কারণে ২০৬০ সাল নাগাদ পৃথিবী একটি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হতে পারে। তাঁর লেখা সেই মূল্যবান চিঠিটি সুরক্ষিত করা হয়েছে। সেটি রয়েছে বর্তমানে জেরুসালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির সংগ্রহশালায়।

সুতরাং পৃথিবীজুড়ে আশঙ্কা বাড়ছে, সত্যিই যদি গ্রহাণুটি পৃথিবীতে ধেয়ে আসে, তাহলে বিজ্ঞানের যুগের উন্নত মানুষ কি এই ধরনের বিপর্যয়কে আটকাতে পারবে, নাকি নিউটনের সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি সত্যি ফলে যাবে!

Advertisement