নিম্ন আদালতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে সমস্ত এফআইআর এবং দাখিল চার্জশিট কপি তলব করল হাইকোর্ট

Written by SNS April 5, 2024 1:59 pm

মোল্লা জসিমউদ্দিন: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সন্দেশখালি ঘটনা নিয়ে চারটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলে৷ তীব্র সওয়াল-জবাব মেটার পর রায়দান স্থগিত রেখেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ এদিন কেন্দ্রের আইনজীবী জনস্বার্থ মামলায় অভিযুক্তের আইনজীবীর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ এদিন রাজ্যের শীর্ষ আদালত সন্দেশখালি ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শাহজাহান শেখ-এর বিরুদ্ধে এখনও অবধি সমস্ত মামলার এফআইআর কপি এবং চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ শাজাহানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দায়ের হওয়া এফআইআর এবং দাখিল করা চার্জশিট তলব করল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ প্রধান বিচারপতির টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ মুখবন্ধ খামে সমস্ত এফআইআর এবং চার্জশিট জমা দেবে রাজ্য৷ ইডি ওই মামলার দায়িত্ব নিতে চাইলে এখনই সেই দায়িত্ব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কে দিতে নারাজ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট জানিয়েছে, ‘শাহজাহানের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত দায়ের হওয়া এফআইআর ও চার্জশিটের নথি মুখবন্ধ খামে রাজ্যকে জমা দিতে হবে৷’ সেই নথির কপি চেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডিও৷ এই নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল রাজ্য৷

রাজ্যের আইনজীবীর প্রশ্ন, ‘ওই সব মামলা আর্থিক দুর্নীতি সম্পর্কিত নয়, তাহলে কেন তথ্য চাইছে ইডি?’ এর পাল্টা ইডির আইনজীবীর দাবি, ‘আর্থিক দুর্নীতির তদন্তেই নথি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে৷’ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘রাজ্যের রিপোর্ট জমা পড়ার পর তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে তদন্ত কে করবে?’ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সন্দেশখালির বর্তমান পরিস্থিতি জানতে পেরেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতে এসসিএসটি কমিশন সহ যারা যারা রিপোর্ট দিয়েছে সব রিপোর্ট খতিয়ে দেখবে আদালত৷ বৃহস্পতিবারই শাহাজাহানের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ছাড়াও তাঁর মাছ ব্যবসা সংক্রান্ত অন্য একটি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে৷ এই দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও শাহজাহানের আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যে নজরে রাখছে কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি৷ ইতিমধ্যে শাহজাহানের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তথ্য খতিয়ে দেখে প্রায় ১৩৩ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে ইডি৷ এখনও অন্তত ১৫টি অ্যাকাউন্টের যাবতীয় লেনদেনের ওপর নজর রাখছে ইডি বলে জানা গেছে৷ এদিন এই মামলার শুনানিতে সন্দেশখালির ঘটনায় নিয়ে আদালতের ভৎর্‌সনার মুখে পডে় রাজ্য৷

এদিন কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, ‘সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক৷ সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে তার নৈতিক দায় বর্তায় গোটা জেলা পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দলের উপর৷ যদি কোনও একটি অভিযোগও সত্যি হয় তাহলে পুলিশ এবং প্রশাসনকে তার দায় নিতে হবে৷ শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে যত এফআইআর এবং চার্জশিট দাখিল হয়েছে সেগুলির কপি আমাদের দেওয়া হোক৷’ আদালতের কাছে আবেদন রাখেন ইডির আইনজীবী৷ রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘আমাদের অবস্থান জানানোর জন্য একটু সময় দেওয়া হোক৷ বাকি মামলা তো আর্থিক দুর্নীতির নয়৷ তাহলে সেই এফআইআর এবং চার্জশিটের কপি ইডি নিয়ে কি করবে?’ এর প্রতুত্তরে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘ওই অভিযোগগুলোর তদন্ত আমরা করতে চাই না৷ কিন্ত্ত আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে সেগুলি দেখার প্রয়োজন আছে৷’

আবেদনকারীর আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, ‘সন্দেশখালির তদন্তে কমিশন গঠন করা হোক৷ মহিলারা এলাকা ছেডে় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ একটা শাহজাহান জেলে আছে, কিন্ত্ত ওখানে এখনো অনেক শাহজাহান আছে৷ সন্দেশখালির এই ঘটনার সঙ্গে প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকরা যুক্ত আছেন, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হোক৷’ অভিযুক্ত শেখ শাজাহানের আইনজীবী আদালতে জানান, ‘আমাদের সঙ্গে অনেক গ্রামবাসী আছেন যারা আদালতে হলফনামা দাখিল করে বলতে পারেন যে এই গোটা ঘটনার সঙ্গে বহিরাগতদের যোগাযোগ আছে৷’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি (শাহজাহান এর আইনজীবী) যদি একই সঙ্গে শেখ শাজাহান এবং গ্রামবাসীদের হয়ে সওয়াল করেন তাহলে এটা ধরে নিতে হবে যে এই গ্রামবাসীদের সাজিয়ে এবং শিখিয়ে আনা হয়েছে৷ আগে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দেখুন, তারপর কথা বলবেন৷ ধর্ষণের একটি অভিযোগও যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা অত্যন্ত লজ্জাজনক৷ জাতীয় রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য সবথেকে সুরক্ষিত৷ এই অবস্থায় যদি একজন মহিলার অভিযোগও সত্যি হয় তাহলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক’৷ চলতি বছরের গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখের বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় ইডি৷