এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২২ হাজারের বেশি নিয়োগ বাতিল করল হাইকোর্ট

Written by SNS April 22, 2024 12:49 pm

কলকাতা, ২২ এপ্রিল:  ভোটের মুখে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে বড়সড় রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আজ, সোমবার বিচারপতি দেবাংশ বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ এসএসসি-র ২৩ হাজার ৭৫৭ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দ্বাদশের ২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেলে এই নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে এই প্যানেলে নিয়োগ হয়েছিল ২২ হাজারের কিছু বেশি সংখ্যক। আজ সেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ৩৮১ পাতার রায়দান করল হাইকোর্ট। আদালত আজ এই মামলার রায় দিয়ে জানিয়ে দিল, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি কখনও বৈধ হতে পারে না। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে চাকরি প্রাপকদের আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত। এবং টাকার বিনিময়ে যাঁরা চাকরি কিনেছিলেন, সেই ব্যক্তিদেরকে প্রাপ্ত বেতন ১২ শতাংশ সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে।

তবে প্রকৃত কতজনের চাকরি গেল, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, এখনও আদালতের রায়ের অর্ডার কপি ওয়েবসাইটে আপলোড হয়নি। তবে ২৪ হাজার ৬৪০ শূন্যপদ ছিল গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে। বোর্ড যে তথ্য দেয়, তাতে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগপত্র ইস্যু করে। নিয়োগপত্র ইস্যু হলেও সকলেই যে চাকরি পেয়েছেন তেমনটা নয়। ফলে সংখ্যাটা ২২ হাজারের মতো হতে পারে। রায়ের কপি সামনে এলে সংখ্যাটা স্পষ্ট হবে।

এই টাকা জেলাশাসকের কাছে জমা করতে হবে তাঁদের। পরে জেলাশাসক পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা হাইকোর্টে জমা দেবেন। এব্যাপারে ডিএমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিআই বিষয়টি ডিএমকে জানাবেন। এই প্যানেলের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ সকলকে মাইনে ফেরাতে হবে। এই নির্দেশের মধ্যে সোমা দাস ছাড়া বাকি প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। কারণ, সোমা দাসের ক্ষেত্রে একটি মানবিক দিক রয়েছে বলে জানিয়েছে মহামান্য আদালত। হাইকোর্টে আজ বিচারপতি বসাক জানান, সোমা দাস নামক এক ক্যানসার আক্রান্ত চাকরিপ্রাপককে মানবিক কারণে তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হবে না।

পাশাপাশি সিবিআই-কে এই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে এই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন হবে, তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের করতে পারবে বলে জানিয়ে দিল আদালত। যাঁরা অতিরিক্ত পদ তৈরির জন্য যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরকে অবিলম্বে খুঁজে বার করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০১৬ সালে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁদের ওএমআর শিট পুনরায় মূল্যায়ণ করা হবে। সেখান থেকে যোগ্যদের বেছে নেওয়া হবে। সেজন্য এসএসসির সার্ভারে দ্রুত ওএমআর শিট আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

যুগান্তকারী এই রায়দানের ফলে লোকসভা ভোটের মুখে বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। বেকার সমস্যায় জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে সরকারের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হল। রাজ্যের বেকারদের কাছে সরকারের মানবিকবোধ প্রশ্ন চিহ্নের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল।

উল্লেখ্য, এর আগে তমলুক লোকসভার বর্তমান বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন এই সমস্ত চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম দশম ও একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তখন রাজ্য সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলাকে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে পাঠায়। এবং ৬ মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।

গত ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টে গঠিত হয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রাশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। গত ডিসেম্বর মাস থেকে এই বিষেশ বেঞ্চে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হয়। চাকরিপ্রাপকদের হয়ে মামলা লড়া সেই আইনজীবী দলের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ ও প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে আজ, সোমবার সেই মামলার রায় দিল হাইকোর্ট। এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া সেই রায়ই বহাল রাখল বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও মহম্মদ সাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।