কেজরিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জামিন হলেও ফাইলে সই নয়

Written by SNS May 8, 2024 11:42 am

দিল্লি, ৭ মে – জামিন পেলেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ আগামী ২০ মে, পঞ্চম দফার লোকসভা ভোট পর্যন্ত তিহার জেলেই থাকতে হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিনের আবেদন মামলায় এদিন কোনও রায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট৷ আগামী বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি হবে দেশের শীর্ষ আদালতে৷ সুপ্রিম কোর্ট আরও বলে, যদি কেজরিওয়ালের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর হয়, তা হলেও তিনি কোনও সরকারি ফাইলে সই করতে পারবেন না৷ এদিকে আবগারি মামলায় ধৃত অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জামিনের আবেদন মামলায় ইডির কাছে এদিন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট৷ সুপ্রিম কোর্ট বলে, কেজরিওয়াল এক জন মুখ্যমন্ত্রী৷ আপ প্রধানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সাধারণ মামলা নয়৷ মঙ্গলবার শুনানিতে এই মন্তব্য করে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ৷ বেঞ্চ ইডিকে আরও বলে, ‘‘কাউকে জীবনের অধিকার থেকে আপনি বঞ্চিত করতে পারেন না৷’’
গত ২১ মার্চ দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন কেজরিওয়াল৷ তারপর থেকেই জেলবন্দি তিনি৷ তাঁর গ্রেফতারিকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে প্রথমে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরিওয়াল৷ কিন্ত্ত দিল্লি হাইকোর্ট চলতি মাসের শুরুতে সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হন আপ প্রধান৷

বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ এর আগের শুনানিতে মন্তব্য করেছিল, ‘‘লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কেজরিওয়ালকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে৷’’ আদালত আরও মন্তব্য করে, গ্রেফতারির বিরুদ্ধে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনের শুনানির জন্য সময় লাগতে পারে৷ তাই আদালত অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের কথা ভাবতে পারে৷ এর পর থেকেই কেজরিওয়ালের জামিন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়৷ মঙ্গলবারও শুনানির সময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর জামিনের প্রসঙ্গ ওঠে৷ কেজরিওয়ালের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি৷ তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া কেজরিওয়ালের গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পডে়৷’’ বিচারপতি খান্নার বেঞ্চ জানায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন শোনা হবে৷ কারণ কেজরিওয়াল একজন জনপ্রতিনিধি৷ তিনি নির্বাচনে জিতেছেন৷ নির্বাচনে তাঁর প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করবে আদালত৷

কেজরিওয়ালের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি আদালতে জানায়, ফৌজদারি মামলায় ধৃত সকলের অধিকার সমান৷ কেজরিওয়ালকে জামিন দিলে ভুল বার্তা যাবে৷ তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ছয় মাসের মধ্যে নয় বার সমন পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত তিনি একবারও হাজিরা দেননি৷ সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘‘দেশে সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে, আমরা তা উপেক্ষা করতে পারি না৷’’ সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘‘আমরা কাউকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার আগে দেখি তার অপব্যবহার হবে কি না৷’’ তদন্তে ‘অসহযোগিতা’র কারণেই কেজরিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আদালতে জানায় ইডি৷ সওয়াল জবাব চলাকালীন ইডি বলে, যদি কেজরিওয়ালকে জামিন দেওয়া হয়, তবে মানুষের ধারণা হবে তিনি কিছুই করেননি৷ বিচারপতি খান্নার বেঞ্চ বলে, ‘‘যদি কেজরিওয়ালকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়, তবে আদালত চায় না তিনি সরকারি কোনও কাজে যুক্ত থাকুন৷ না হলে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে৷ আমরা সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাই না৷ নির্বাচন না হলে এই জামিনের বিষয় বিবেচনা করা হত না৷’’ কেজরিওয়ালের আইনজীবী আদালতে জানান, লেফটেন্যান্ট গর্ভনর না বললে কোনও সরকারি কাজ করবেন না তাঁর মক্কেল৷

মঙ্গলবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পডে় ইডি৷তদন্তে কেন এত বিলম্ব হচ্ছে, সেই প্রশ্ন করে শীর্ষ আদালত৷ এই মামলায় সাক্ষী এবং অভিযুক্তদের জেরা করতেই বা ইডি কেন এত সময় নিল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ শুনানিতে ইডির পক্ষে জানানো হয়, প্রাথমিক তদন্তের সময় এই মামলার সঙ্গে কেজরিওয়ালের কোনও যোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে৷ পাশাপাশি মামলায় অন্য অভিযুক্তের থেকেও কেজরিওয়ালের নাম পাওয়া যায়৷ সব পক্ষের বক্তব্য শোনে সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে মঙ্গলবার এই মামলায় কোনও নির্দেশ দেয়নি বিচারপতি খান্নার বেঞ্চ৷
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, কেজরিওয়াল দাগি অপরাধী নন৷ তাঁর পক্ষে ও বিপক্ষে-দু’রকম ক্ষেত্রেই যদি প্রমাণ মেলে তাহলে কোনটাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে? সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর ভোটপ্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে৷ তাঁকে ভোটের জন্য জামিন দেওয়া যায় কি না, তাও বিচার করে দেখছে সুপ্রিম কোর্ট৷