জেল থেকে ছাড়া পেয়েও রক্ষা নেই। জামিনে আপাতত রেহাই পেলেও তাঁর বিরুদ্ধে এখনও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। সেজন্য বিরোধী শিবির বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন। এবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালই পদত্যাগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বাদ সেধেছেন মমতা সহ অন্য বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে। তাঁদের কেজরিওয়াল পরামর্শ দিয়েছেন, পদত্যাগ করবেন না। প্রয়োজনে জেল থেকেই সরকার চালাবেন। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। তাহলে কেজরিওয়াল অন্যদের ক্ষমতায় থাকার পরামর্শ দিলেও তিনি নিজে কেন পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন?
প্রসঙ্গত শুক্রবারই আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিনে ছাড়া পান আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি জেল থেকে বেরিয়েই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে পদত্যাগ না করার পরামর্শ দেন। দুই দিন পর রবিবার ঘটল তার উলটপুরাণ। এবার নিজে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও দেশের অন্যান্য বিরোধী দলের নেত্রীদের মুখ্যমন্ত্রীদের পদত্যাগে বারণ করেছেন। বিশেষ করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। যাতে তিনি কোনও পরিস্থিতিতে পদত্যাগ না করেন। এই নিয়েই জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অন্যদের ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী পরামর্শ দিলেও নিজের ক্ষেত্রে কেন একরকম সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন? তাহলে কি এর মধ্যে লুকিয়ে আছে গোপন কোনও রাজনৈতিক রহস্য?
Advertisement
রবিবার কেজরিওয়াল মমতা সহ অন্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হলেও বা যে কোনও পরিস্থিতিতেও কেউ পদত্যাগ করবেন না। জেলে গিয়েও সেখান থেকে সরকার চালাবেন।’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এই বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আজ কেজরিওয়াল আরও বলেন,’আমাদের দল ভাঙেনি, বিধায়ক-কার্যকর্তাদের ভাঙাতে পারেনি। এদের এতবড় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা আছে আমাদের। ভেবেছিল মনোবল ভেঙে দেবে। যেখানে যেখানে হেরেছে, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করে, গ্রেফতার করে, ইডি-সিবিআই পাঠিয়ে সরকার ফেলার দেওয়ার চেষ্টা। জেলে এই ১৫০-২০০ দিনে আমার মনোবল ১০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। ইস্তফা দিইনি কারণ দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। এটা বিজেপি-র নয়া ফর্মুলা। ‘
Advertisement
অরবিন্দ কেজরিওয়াল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আলাদাভাবে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি ‘দিদি’-কে বলেছেন, ‘হেমন্ত সোরেন, সিদ্দারামাইয়া, পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধেও একই জিনিস চলছে। বিরোধী শিবিরের একজন মুখ্যমন্ত্রীকেও ছাড়ে না এরা। ভুয়ো মামলা করে, জেলে ঢোকায়। ১০ দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়, জেলের ভিতর থেকে সরকার চলতে পারবে না কেন? অর্থাৎ জেলের ভিতর থেকে সরকার চলতে পারে। তাই দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হতজোড় করে বলব, প্রধানমন্ত্রী যদি জেলে ঢোকানোর হিম্মত দেখান, ইস্তফা দেবেন না। জেল থেকে সরকার চালান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লোভী নই। চেয়ার আঁকড়ে পড়ে থাকার বাসনা নেই। কিন্তু সবিধান, দেশ, গণতন্ত্রকে বাঁচানো জরুরি। যে সরকার সংখ্য়ারগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হচ্ছে, সেই সরকাকে জেলে ভরছে, ইস্তফা চাইছে। সকল মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ, ওদের এই নতুন ফর্মুলা ব্যর্থ করে দিন। বিধায়ক ভাঙানো, ইডি, সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো, ভুয়ো মামলা করে জেলে ভরে দেওয়া এবং সরকার ফেলে দেওয়াই বিজেপি-র ফর্মুলা। ভেবেছিল, কেজরিওয়ালকে জেলে ভরলে আম আদমি পার্টি ভেঙে যাবে। বিধায়ক ভাঙিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়ে ফেলবে বিজেপি। পাঞ্জাবেও বিধায়ক ভাঙিয়ে সরকার গঠন করা সম্ভব হবে।’
Advertisement



