নিজস্ব প্রতিনিধি : এখনও শান্ত হয়নি বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এর মাঝেই দুটি বিপরীতধর্মী চিত্র ধরা পড়লো শিলিগুড়ির বুকে। তবে তার সাথে বাংলাদেশের কি সম্পর্ক? বস্তুত, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পলায়নের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের যে কার্য শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত। এই অবস্থায় প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশের দিনাজপুর পুরসভার বাসিন্দা তথা আওয়ামী লীগের নেতা মহম্মদ রুবেল ইসলাম ভারতে চলে এসেছেন, থাকছেন শিলিগুড়িতে তাঁরই এক আত্মীয়ের বাড়িতে। অন্যদিকে, খোশ মেজাজে ভারত থেকে বাংলাদেশ ফিরতে দেখা গেল পঞ্চগড়ের এক বাসিন্দা তথা বিএনপি সমর্থক ইশাক জমান পাটোয়ারীকে। উভয়ই ব্যক্ত করেছেন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা।
রুবেল ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি জানিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাংলাদেশে থাকা দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছে। যেখানেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের পাচ্ছে, সেখানেই মারধর করা হচ্ছে। বাড়ি লুট করা হচ্ছে। আমি নিজের পরিবার ছেড়ে ভারতে এসে প্রাণ বাঁচালাম।”
Advertisement
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থক ইশাকের বক্তব্য, “আওয়ামী লীগের তাণ্ডবে আমার বাবাকে টানা ১৭ দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। মা একা থেকেছেন। আমার বাড়ি যাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। আমরা বিরোধী দল করি বলেই এত অত্যাচার। হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। হ্যাঁ, আজ আমি খুশির মেজাজে দেশে ফিরছি। দেশের পরিস্থিতি এখন ঠিক আছে।”
Advertisement
আওয়ামী লীগের নেতার বক্তব্য, বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ছাত্র-যুবরা, সেটা এখন শুধু ক্ষমতা দখলের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। রুবেল বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হয়েছে। দেশের একের পর এক শপিং মল, সরকারি কার্যালয়ে হামলা চালাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। যাঁরা এসব করছেন, তাঁরা দেশের ভাল চান না।” এরপরই নিজ অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে রুবেল বলেন, “ভয়াবহ! আসার সময় রাস্তায় দেখলাম কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে। দোকানপাট খোলা থাকলেও লোক নেই। বেশির ভাগ দোকানেই লুট হয়েছে। কোনও মালপত্র নেই।” পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ওই নেতার বক্তব্য, “অনুমতি পেলে তাদেরও সাথে নিয়ে আসতাম। চিন্তায় আছি।
প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার পর নাকি তারা স্বাধীনতা পেয়েছে! আসলে যারা লুটপাট চালাচ্ছে, তাদের স্বাধীনতা হয়েছে। যারা দেশ চালাবে বলে ভাবছে, তারা দেশপ্রেমী না। সংসদ ভবন, গণভবন লুট করছে। তারা কী ভাবে দেশ চালাবে?” পাশাপাশি, হাসিনার দেশ ছাড়ার বিষয়ে রুবেলের সংযোজন, “তিনি ফেরত না আসলে আমরা অবশ্যই নেতৃত্ব হারাব। তিনি দেশ ছাড়াতে আমরা হতাশ।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার থেকেই ফুলবাড়ির ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে দেশ পারাপারের ভিড় অনেকটাই থমকে গিয়েছে। যাঁরা ভারতে এসেছিলেন চিকিৎসা অথবা পড়াশোনার কারণে, তাঁদের অনেকেই এখন দেশে ফেরা নিয়ে চিন্তিত। তবে এর মাঝেও বাংলাদেশ থেকে ভারতের সিকিমে পড়তে আসা ইশাক জমান পাটোয়ারী খোশ মেজাজেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই বিএনপি চেয়ারপার্সন তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। ২০১৮ সালে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন। খালেদার সঙ্গে একের পর এক জেলবন্দি বিএনপি নেতাকেও মুক্তি দেওয়া হচ্ছে মঙ্গলবার।
Advertisement



