• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রহরশেষের রাঙা আলোয়

ধারাবাহিক উপন্যাস

কাল্পনিক চিত্র

তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

৬.
সুরঞ্জনা

Advertisement

বসন্তে কি শুধু কেবল ফোটা ফুলের মেলা রে৷

Advertisement

গাড়ি থেকে সুরঞ্জনা যখন নামল রবীন্দ্রসদনের পিছনের গেটে, সদনের সাজসজ্জা দেখে বিস্ময়ে হতবাক৷ গেটের সামনে পলাশফুলের একটা মস্ত আর্চ, পলাশ নয়, বোধ হয় রুদ্রপলাশ৷ পলাশ হলে গৈরিক রঙের হত, আর্চের রং কিছুটা লাল–ঘেঁষা রুদ্রপলাশ, তাতেই যেন ল-ল করছে আগুনের শিখা৷

চত্বরে আরও অনেক ফুলের প্রদর্শনী৷ কিছু আছে টকটকে লাল, নিশ্চয় শিমুল৷ শিমুলের রং রক্তের, চোখ আটকে যায় দ্রুত৷

গেটের ডানদিকে একটা মস্ত হোর্ডিং, তাতে বসন্তপঞ্চমী উৎসবের ঘোষণা৷ তার একদিকে সুরঞ্জনা বসুর হাস্যমুখ ছবি, কী সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে৷ অন্যপাশে তমোনাশ গুপ্তের কালো সানগ্লাস পরা ছবি৷ দুটি ছবিই একই মাপের৷

গেটের সামনেই অপেক্ষায় ছিলেন রত্নদীপবাবু, হাত জোড় করে অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন, একেবারে ঠিক সময়ে এসে পৌঁছেছেন৷ তমোনাশবাবু এসেছেন পনেরো মিনিট আগে৷

সুরঞ্জনা ঘড়িতে চোখ রেখে দেখল পৌনে পাঁচটা৷ চারপাশে কিছু কৌতূহলী চোখ তাকে দেখছে আর কী যেন বলাবলি করছে৷
সুরঞ্জনা বলল, খুব সাজিয়েছেন, রত্নদীপবাবু৷
রত্নদীপবাবুু খুশি হয়ে বললেন, খুব সাড়া পড়েছে আজকের অনুষ্ঠান নিয়ে৷
সুরঞ্জনা বলল, দেখলাম, সামনের গেটে বিশাল লাইন পড়েছে৷
—এখনও গেট খোলেনি তো, তাই৷ এতক্ষণে বোধ হয় খুলে দিয়েছে৷

রত্নদীপবাবুু তাকে সঙ্গে নিয়ে চলে এলেন সাজঘরে৷ বেশ বড়ো সাজঘর, নাটক বা নৃত্যনাট্য বা নাচের অনুষ্ঠান থাকলে জমজম করে এই ঘরটা৷ আজ অবশ্য তার সাজের প্রয়োজন নেই৷ যেটুকু সাজার, সুরঞ্জনা নিজেই সেজে এসেছে ফ্ল্যাট থেকে৷ আজ একটু বেশিরকম সেজেছে৷ পরেছে একটা ভালো কাঞ্জীভরম শাড়ি, বাসন্তী রঙের৷ লাল রঙের ব্লাউজ৷ কপালে একটা মাঝারি টিপ৷ খোঁপায় জড়িয়েছে রজনীগন্ধার মালা৷ সুগন্ধির উপর তার বরাবরের ঝোঁক৷ আজও গায়ে স্নিগ্ধ সুগন্ধি৷

সাজঘরে তখন বসে আছে তমোনাশ, ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর চোস্ত পাজামা৷ চোখে কালো সানগ্লাস৷ দীর্ঘদেহী, পাঁচ ফুট আট তো হবেই৷ সুপুরুষ চেহারা৷ সুরঞ্জনা ঢুকতেই বলল, আপনি দরজা ঠেলে ঢুকতেই আমি বুঝতে পেরেছি আপনি এসেছেন৷
সুরঞ্জনা একটু অবাক হল৷ তমোনাশ কি এত দূর থেকেও সুরঞ্জনার গায়ের গন্ধ পায়?

তমোনাশ বলল, আমি একটু আগেই এলাম৷ রাস্তায় যা জ্যাম হয়, কোথায় আটকে যাব তাই বেরিয়ে পড়েছি আগেভাগে৷ রত্নদীপবাবু বললেন প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ৷
সুরঞ্জনা বলল, আমাকেও বলেছেন৷ দেখে এলাম সামনের গেটে বিশাল লাইন৷
তমোনাশ গলা নামিয়ে বলল, আমার খুব ভয় করছে৷ এত বড়ো অনুষ্ঠানে কখনও গাইনি তো৷
সুরঞ্জনা বলল, ভয় কীসের, আমি তো আছি৷
তমোনাশকে দেখে সুরঞ্জনা ভাবছিল তার পাশে চিত্রজিৎ পাঁচ ফুট পাঁচ, নিতান্তই হ্রস্ব৷
রত্নদীপবাবু হন্তদন্ত হয়ে গিয়েছিলেন মঞ্চের খবর নিতে, ফিরে এসে বললেন, তা হলে আপনারা কথা বলে নিন৷ ঠিক পাঁচটায় শুরু করে দেব অনুষ্ঠান৷ মালবিকা রেডি৷
মালবিকা সোম খুবই দক্ষ সঞ্চালক, বড়ো বড়ো অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার জন্য তার ডাক পড়ে৷
ঠিক পাঁচটা বাজার দু’মিনিট আগে ধীমানবাবু এসে নিয়ে গেলেন দু’জনকে৷ সুমিতাভ অপেক্ষা করছিল কোথাও, এসে হাত ধরল তমোনাশের৷
মঞ্চের এপাশে প্রশস্ত গ্রিনরুম, সেখানে অনেকগুলি চেয়ার পাতা৷ তারই দু’টি চেয়রে সুরঞ্জনা আর তমোনাশকে বসিয়ে রত্নদীপবাবুু চলে গেলেন মালবিকার কাছে৷ তার সঙ্গে কথা বলে ইঙ্গিত করলেন মঞ্চের পর্দা তোলার৷
বাচিকশিল্পী ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বসেছিলেন চেয়ারে, তাঁর সঙ্গে নমস্কার বিনিময় করল সুরঞ্জনা৷

মঞ্চে তখন অসামান্য সুন্দরী মালবিকা সোম দারুণ সেজেগুজে দাঁড়িয়ে পোডিয়ামের সামনে৷ তারও পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি–ব্লাউজ৷ রত্নদীপবাবুু নিশ্চয় সুরঞ্জনার মতো তাকেও বলেছিলেন বসন্তের সাজে সেজে আসতে৷

মঞ্চের পিছনেও রুদ্রপলাশের মালা টাঙানো সাতনরি হারের মতো৷ কী অপরূপ দেখাচ্ছে গোটা মঞ্চ৷ এতক্ষণে সুরঞ্জনার ভিতরেও সামান্য কাঁপন৷ এর আগে বহুবার এই মঞ্চে গান গেয়েছে, কিন্তু তার একক অনুষ্ঠান বলে প্রচারিত হয়নি কখনও৷ তমোনাশের অন্তর্ভুক্তির পর আজ সে একা নয়৷

পর্দা উঠতেই মালবিকা সবাইকে বসন্তকালীন শুভেচ্ছা জানিয়ে বলল, আজ বসন্তপঞ্চমী৷ বসন্ত তো শুধু একটা ঋতুই নয়, বসন্ত ভালোবাসার প্রতীক৷ বৃক্ষশাখে নতুন পাতা, নতুন কুঁড়ি, নতুন ফুল৷ কত রঙের ফুল, কত রকমের ফুল৷ বসন্তের অন্য পরিচয় বসন্ত প্রেমেরও প্রতীক৷ পুরোনোকে নতুন রঙে রাঙিয়ে দিতে এসেছেন ঋতুরাজ৷

আসলে এই উৎসব সৃষ্টির উৎসব৷ সৃজনের নিয়ম অনুসরণ করে মাঘের শেষ হলে ফাল্গুনের আরম্ভে রঙিন সাজে সেজে ওঠে প্রকৃতি৷ শুরু হয় বসন্তের উদ্‌যাপন৷

রবীন্দ্রনাথের এক পুত্র শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর উনিশশো সাত সালে সূচনা করেছিলেন ঋতু–উৎসবের৷ সেই থেকে আজও প্রত্যেক বছর ফাল্গুনী পূর্ণিমায় পালিত হয় বসন্ত উৎসব৷ এই উৎসব মানেই শুভ ও আনন্দের প্রতীক৷ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের রং মেলানোর উৎসব৷ বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার উৎসব৷

‘রবি-অনুরাগ’ সংস্থা এই উপলক্ষে এক অভিনব অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এই মঞ্চে৷ বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সুরঞ্জনা বসুর সংগীতজীবনের কুড়ি বছর পূর্ণ হল৷ এই সময়কালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনেকগুলি অ্যালবাম৷ তাঁর নাম এখন বাংলার সংগীতপ্রিয় মানুষদের অতিপরিচিত৷ উচ্চ-প্রশংসিত হয়েছে প্রতিটি অ্যালবাম৷
এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা সংবর্ধিত করতে চাই সুরঞ্জনা বসুকে৷ তাঁকে সংবর্ধনা দেবেন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী ইন্দ্রজিৎ ঘোষ৷
আমরা আরও আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, সুরঞ্জনা বসুর সঙ্গে আজ আরও এক নবীন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী তমোনাশ গুপ্ত গাইবেন শেষ অংশে৷ তিন শিল্পীকেই মঞ্চে আসতে অনুরোধ করছি৷
তারপরের কয়েকটি মুহূর্ত সুরঞ্জনার কাছে স্বপ্নের মতো৷ গলায় উত্তরীয় পরা, ফুলের মস্ত বোকে পাওয়া৷ মানপত্র পাওয়া৷ মেমেন্টো পাওয়া৷ ঘন ঘন হাততালির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠল প্রেক্ষাগৃহ৷
সংবর্ধনাপর্ব শেষ হলে মালবিকা বলল, এবার আপনারা শুনুন সুরঞ্জনা বসুর কণ্ঠে গান৷

স্বপ্নের ঘোর কেটে গেলে সুরঞ্জনা চোখ রাখল প্রেক্ষাগৃহের দিকে৷ সমস্ত হল কানায় কানায় ভর্তি৷ শুধু একেবারে সামনের রোয়ে এ১২ সিটটা তখনও খালি৷ রত্নদীপবাবুর কাছ থেকে কার্ডটা চেয়ে নিয়েছিল পরশু৷ আজ সকালে দিয়ে এসেছিল চিত্রজিতের টেবিলে। বলেছিল, ‘বন্ধুর প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষ হলে অন্তত কিছুক্ষণের জন্য আমার অনুষ্ঠান শুনতে এসো৷’ কিন্তু এখনও সিটটা খালি দেখে মনের ভিতর একটা ছোট্ট কামড়৷ ভাবল নিশ্চয় শেষ দিকে হলেও একবার আসবে চিত্রজিৎ৷

পরক্ষণে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করল, বাঙালি–জীবনে রবীন্দ্রনাথ এক এবং অদ্বিতীয়৷ আমাদের কর্মবহুল দিন শুরু হয় তাঁর গান শুনে৷ দিনের শেষেও শুনতে পাই তাঁর গানের সুর৷ তার মধ্যে কোনও একটি বিশেষ গান, কোনও একটি বিশেষ সুর আমাদের মনের মধ্যে সারাদিন গুনগুন করে বাজতে থাকে, আমাদের মন ভরিয়ে দেয় এক অনাস্বাদিত ভালোলাগায়৷ সুর ছাড়াই কোনও কোনও গানের কথার অর্থ, তার দ্যোতনা কালোত্তীর্ণ করে রেখেছে রবীন্দ্রগান৷

আজ বসন্তপঞ্চমী উৎসবের সন্ধেয় আমি প্রথমেই রবীন্দ্রনাথের বসন্ত পর্যায়ের এই গানটি গাইছি যার রাগ— বাহার-বাউল, তাল— কাহারবা৷ গানটি পূর্ব বাংলার (অধুনা বাংলাদেশ) সারিগানের সুরে বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ—
বসন্তে কি শুধু কেবল ফোটা ফুলের মেলা রে৷
দেখিস নে কি শুকনো-পাতা ঝরা-ফুলের খেলা রে৷

দু’কলি গেয়ে সুরঞ্জনা গান থামিয়ে বলল, রবীন্দ্রনাথের গানের সুরের সঙ্গে কথাগুলিও খেয়াল করবেন৷ বসন্ত তো শুধু প্রস্ফুটিত ফুলের রঙের মেলা নয়, তার মধ্যে আছে পাতা শুকিয়ে যাওয়া, ফুল ঝরে যাওয়ার বার্তাও৷
বলে আবার শুরু করল— রবীন্দ্র অনুরাগী মৈত্রেয়ী দেবী বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ যে আমাদের সুরের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছেন সেটাই তো যথেষ্ট৷ গানের সুর হৃদয়কে যে অতল গভীরে ডাক দেয়, তাঁর গানের কথাগুলোও সেখানে হৃদয়ের একটা অবলম্বন হয়ে তাকে ধারণ করে থাকে৷ এমন কোনও দুঃখ নেই, যা তাঁর গানে অমৃত হয়ে ওঠে না, এমন কোনও আনন্দ নেই, যা তাঁর সুরের বেদনায় গভীর হয়ে হৃদয়কে ডুবিয়ে দেয় না৷ কথা আর সুরের আশ্চর্য মিলনে মন বাজতে থাকে বীণার মতো৷ তাঁর গানের মূর্ছনা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের জীবনে৷

যে ঢেউ উঠে তারি সুরে বাজে কি গান সাগর জুড়ে।
যে ঢেউ পড়ে তাহারও সুর জাগছে সারা বেলা রে।
বসন্তে আজ দেখ রে তোরা ঝরা ফুলের খেলা রে৷।
আমার প্রভুর পায়ের তলে শুধুই কি রে মানিক জ্বলে।
চরণে তার লুটিয়ে কাঁদে লক্ষ মাটির ঢেলা রে৷।
আমার গুরুর আসন-কাছে সুবোধ ছেলে ক জন আছে৷
অবোধ জনে কোল দিয়েছেন, তাই আমি তাঁর চেলা রে৷
উৎসবরাজ দেখেন চেয়ে ঝরা–ফুলের খেলা রে৷৷

গানের পর প্রবল হাততালি৷ সুরঞ্জনা আবার বলল— রবীন্দ্রনাথ এই গানে এনেছেন আধ্যাত্মিকতার স্পর্শ৷ প্রভুর পায়ের নীচে শুধু কি মানিক জ্বলে, লক্ষ মাটির ঢেলাও লুটিয়ে কাঁদে৷ প্রভু অবোধজনকেও কোলে টেনে নেন, তাই কবিও আজ তাঁর শিষ্য৷

পরের গান শুরু করার আগে অদূরে তমোনাশ মৃদু কণ্ঠে বলল, সুরঞ্জনাদি, কী যে ভালো গেয়েছ!
সুরঞ্জনা বলল, আমার পরপর তিনটি গান:
বসন্তে বসন্তে কবিরে দাও ডাক— যায় যদি সে যাক৷
মাধবী হঠাৎ কোথা হোতে এল ফাগুনদিনের স্রোতে।
ওরে আয় রে তবে মাত রে সবে আনন্দে / আজ নবীন প্রাণের বসন্তে।

গান তিনটি গাওয়ার পর সুরঞ্জনা বলল, বসন্ত নানা রূপে, নানা রঙে এসেছে রবীন্দ্রনাথের গানে৷ কত গান বসন্ত ও বাহার রাগে৷ বসন্ত এসেছে কোমল, সুন্দর, আলোকোজ্জ্বল বেশে৷
কথা বলছে আর সামনের রোয়ে চোখ রেখে দেখছে৷ চিত্রজিৎ তখনও আসেনি৷
পরের গান শুরুর আগে দর্শকদের কেউ বললেন ‘মধুর, তোমার শেষ যে না পাই’ গানটা চাই৷
সুরঞ্জনা বলল, ওই গানটা আমি তমোনাশের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে গাইব৷
আর একজন দর্শক বললেন, তা হলে ‘বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী’ গানটা গাইবেন?

সুরঞ্জনা হেসে বলল, ঠিক আছে, গাইছি৷ গানটি কবির ‘নবীন’ পালার আরম্ভ সংগীত হিসেবে আছে৷ রাগ— বসন্ত পঞ্চম৷ তাল— কাহারবা৷ শান্তিনিকেতন-কলাভবনের ছাত্রী সুগায়িকা শ্রীমতী সাবিত্রী দেবীর কণ্ঠে তাঁদের দেশের সুরে কিছু গান গাইতে শুনে ভারী পছন্দ হয়ে যায় কবির৷ তখনই এই গানটির জন্ম৷ এখানে বসন্ত ভুবনমোহিনী, তার অনন্ত মাধুরী ছড়িয়ে আছে দিকপ্রান্তে, বন-বনান্তে, সবুজ প্রান্তরে, আমগাছের ছায়ায়, সরোবরের তীরে, নগরে, গ্রামে, বনে, দিনের বেলায়, রাতের বেলায়, কোকিলের গানে, সর্বত্রই এক উন্মাদনা৷ গাইছি:
বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী,/দিকপ্রান্তে, বনবনান্তে,/ শ্যামপ্রান্তরে, আম্রছায়ে,/ সরোবরতীরে, নদীনীরে, /নীল আকাশে, মলয় বাতাসে/ ব্যাপিল অনন্ত তব মাধুরী৷৷ /নগরে গ্রামে কাননে, দিনে নিশীথে,/পিকসঙ্গীতে, নৃত্যগীতকলনে বিশ্ব আনন্দিত৷/ ভবনে ভবনে বীণাতান রণ–রণ ঝঙ্কৃত৷/মধুমদমোদিত হৃদয়ে হৃদয়ে রে/ নবপ্রাণ উচ্ছ্বসিল আজি/ বিচলিত চিত উচ্ছ্বলি উন্মাদনা/ঝন–ঝন ঝনিল মঞ্জীরে মঞ্জীরে৷

সুরঞ্জনা থামতে প্রেক্ষাগৃহে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাধ্বনি৷ ‘আর একটা, একটা’ বললেও সঞ্চালিকা মালবিকা বললেন, সুরঞ্জনা বসু আবার পরে গাইবেন৷ এখন আপনাদের গান শোনাতে আসছেন একজন নতুন গায়ক তমোনাশ গুপ্ত৷ উদীয়মান গায়ক, খুবই প্রতিভাবান, কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর চোখে কোনও দৃষ্টি নেই৷ আপনারা শুনলেই উপলব্ধি করবেন তাঁর কণ্ঠের অসামান্য কারুকাজ৷ এখন তমোনাশ গুপ্ত––
তমোনাশ তার প্রস্তুতির মধ্যে মৃদুকণ্ঠে বলল, সুরঞ্জানাদি, আমার বেশ ভয় করছে৷

(ক্রমশ)

অলঙ্করণ: সোময়েত্রী চট্টোপাধ্যায়

Advertisement