• facebook
  • twitter
Thursday, 14 August, 2025

এবার বন্ধ হতে চলেছে নিউটাউনের রুফটপ রেস্তরাঁগুলি

শহরজুড়ে শুরু হয়েছে অভিযান

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মেছুয়া বাজারের মতো জনবহুল এলাকার হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর কড়া পদক্ষেপ কলকাতা পুরসভার। এবার নজর শহরের রুফটপ রেস্তোরাঁগুলির দিকে। কলকাতা পুরসভা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, শহরে কোনও রুফটফ রেস্তোরাঁ আপাতত চালানো যাবে না। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই বার্তা দিয়েছেন। শুক্রবার মেয়র জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই এই নিয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। ইতিমধ্যে শহরে কতগুলি ‘রুফটপ’ রেস্তরাঁ রয়েছে, কলকাতা পুলিশের কাছে তার বিস্তারিত তালিকা চেয়ে পাঠানোর পর শনিবার বিকেলে ৮৩টি রেস্তরাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবার সেগুলিকে বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার কাজ শুরু হতে চলেছে।

কলকাতা পুরসভার এই অবস্থানের পর অভিযানে নেমেছে নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা এনকেডিএ। দুই দিন ধরে এই অভিযান চলবে বলে জানা গিয়েছে। এই নজরদারি চালাতে ছয়টি টিম শহরের বিভিন্ন জায়গার রেস্তোরাঁগুলি পরিদর্শন করছে। প্রতিটি টিমে রয়েছে তিনজন করে সদস্য। প্রশাসনের সিনিয়র অধিকারিকরাও এই টিমে রয়েছেন। প্রতি টিমে রয়েছেন অ্যাসেসমেন্ট ও সার্ভেল্যান্স সেকশনের প্রতিনিধিরাও। এইসব আধিকারিকরা খতিয়ে দেখছেন কেউ সম্পত্তিকর ফাঁকি দিচ্ছে কিনা সেই বিষয়টিও। পাশাপাশি, এইসব রেস্তোরাঁ তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট বিল্ডিংয়ে কোনও বেআইনি নির্মাণ হয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত শনিবার থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে শহরের ২২৭টি জায়গায় অভিযানের খবর সামনে এসেছে। পুরসভার নির্ধারিত প্রটোকল মেনে ব্যবসা চলছে কিনা, সেখানে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। এইসব রেস্তোরাঁগুলির ফায়ার লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সব শর্ত পূরণ করার প্রয়োজন, আবেদনকারী সেই সব শর্ত পূরণ করেছে কিনা, বিশেষ করে এনওসি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় নথি না থাকলে তা কড়া হাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কোনও রেসিডেন্সিয়াল প্লটে নন রেসিডেন্সিয়াল কার্যকলাপ চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার কোনও রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট নিয়ে সেই বিল্ডিংয়ে রেস্তোরাঁ চলছে কিনা বা অন্য কোনও কার্যকলাপ চলছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পৃথকভাবে কেউ অভিযোগ করলে সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা এনকেডিএ-র তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

এভাবে প্রথম পর্যায়ে দুই দিনের ড্রাইভে ইনস্পেকশনের কাজ চলবে। সেই কাজ শেষ হলে পরবর্তী পর্যায়ে অ্যাসেসমেন্টের কাজ শুরু হবে। রেস্তোরাঁগুলি যে বিল্ডিংয়ে রয়েছে, সেইসব বিল্ডিংয়ে কোথাও কোনও অংশ অনৈতিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে কিনা, সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে। কারণ অগ্নিকাণ্ডের সময় জরুরি ভিত্তিতে এইসব দিকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে রেস্তোরাঁ বা বিল্ডিংয়ের ইমার্জেন্সি এক্সিট। এনকেডিএ-র বক্তব্য অনুযায়ী, মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কোনও কিছুকে কোনও মতেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। এ জন্য সোমবার সেখানে টিম যাবে। জানা গিয়েছে, যত দিন না পর্যন্ত এনকেডিএ এলাকায় ইনস্পেকশন শেষ হচ্ছে, তত দিন কাজ চলবে।

প্রসঙ্গত চলতি সপ্তাহে বড়বাজার সংলগ্ন মেছুয়া বাজারের ফলপট্টিতে একটি হোটেলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর হোটেল কর্তৃপক্ষের একাধিক অনৈতিক কাজ সামনে আসে। হোটেলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়ে প্রশাসনিক অধিকারিকদের চোখ কপালে ওঠে। হোটেলের ভিতর অনুমতি ছাড়াই একাধিক অবৈধ নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় আক্রান্তরা সময়মতো বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি। ফলস্বরূপ ধোঁয়া ও আগুনের দাপটে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এতগুলি মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তবে শুধু যে এই একটি হোটেলেই এরকম অনিয়ম হয়েছে, তা নয়। শহরের আরও অনেক হোটেলের একাধিক অনিয়ম সামনে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারপ্রাইজ ভিজ়িটে গিয়ে পার্কস্ট্রিটের ম্যাগমা হাউজ়ের অবস্থা দেখে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে সেখানকার ৬টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর সেজন্যই শহরজুড়ে অভিযান শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতার পাশাপাশি কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে নিউটাউনেও।