ভোপালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল বিশাখাপত্তনম | মৃত ১১, অসুস্থ কয়েক হাজার

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনা স্থলে গিয়ে নিকটবর্তী তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায়।

Written by SNS New Delhi | May 8, 2020 10:00 am

মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। (Photo: AFP)

অন্ধ্রপ্রদেশের বন্দর শহর বিশাখাপত্তনমে গত রাতে একটি কেমিক্যাল প্ল্যান্ট থেকে এলজি পলিমার গ্যাস লিক করার ফলে অন্ততপক্ষে এগারো জনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।

১৯৮৪ সালে মধ্যপ্রদেশের ভয়াবহ ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এদিনের গ্যাস লিকের ঘটনা। ভোপাল ইউনিয়ন কার্বাইডের প্ল্যান্টে গ্যাস দুর্ঘটনায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ দীর্ঘ রোগে আক্রান্ত ও পঙ্গু হয়ে পড়েন। এখনও তারা গ্যাস দুর্ঘটনার ক্ষত বহন করে চলেছেন।

দীর্ঘ চল্লিশ দিন লকডাউনের ফলে বন্ধ থাকার পর বুধবার রাতে প্ল্যান্ট চালু করার সময়েই এই বিপত্তি ঘটে বলে জানা গিয়েছে। চালুর আগে কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই প্ল্যান্ট চালুর জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করেছেন।

গ্যাসের প্রভাবে সড়ক পথে দুই স্কুটার আরোহী সঙ্গাহীন হয়ে একটি খালে পড়ে যায়, আর ফুটপাথে শুয়ে থাকা ভবঘুরে স্পন্দনহীন হয়ে পড়ে, নিকটবর্তী একটি আবাসনের তিনতলা থেকে সঙ্গা হারিয়ে এক মহিলা নীচে পড়ে মারা যান। এসব ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনা স্থলে গিয়ে নিকটবর্তী তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায়। বাড়ির দরজা ভেঙে অচেতন বাসিন্দাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও করোনাভাইরাসের জেরে মাস্ক পড়ে অচেতন হয়ে পড়া মানুষজনকে অ্যাম্বুলেন্সে নিতে সাহায্য করতে দেখা যায়।

গ্যাসে অসুস্থ দুই ব্যক্তি একটি কুয়োয় পড়ে নিহত হন। এক মহিলা স্কুটার আরোহী রাস্তাতেই অচেতন হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্ল্যান্টের নিকটে বসবাসকারী বাসিন্দারা তাদের চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির কথা জানাচ্ছেন। এর ফলে স্নায়ু ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রধান এস এন প্রধান জানিয়েছেন, প্ল্যান্টের তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধ পর্যন্ত গ্যাসের প্রভাবে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

বিশাখাপত্তনমের নগরপাল স্বরূপ রানি জানিয়েছেন, প্ল্যান্টের দু’টি ৫ হাজার টনের ট্যাঙ্ক লিক হয়ে যাওয়ার ফলেই এই বিপত্তি ঘটে। দীর্ঘ ৪০ দিন করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের ফলে প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার ফলে তা রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়নি। ফলে কেমিক্যাল প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়েছিল। কাজের ব্যবহারের জন্য চেষ্টা করতেই লিক করে।

সকাল থেকেই পুরনিগমের আধিকারিকরা নিকটবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের ভিজে কাপড় দিয়ে নাকমুখ ঢেকে রাখার অনুরোধ জানাতে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। ঘর থেকে না বেরোতেও অনুরোধ করা হয়। প্ল্যান্টে ফাইবারগ্লাস, রাবার এবং ল্যাটেক্স উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনে পলিস্টারিন উৎপাদন করা হয়।

১৯৬১ সালে হিন্দুস্থান পলিমার নামে কোম্পানিটির পত্তন হয়। কোম্পানিটি ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি কেম সংস্থাটি কিনে নেয় এবং নাম পরিবর্তন করে এলজি পলিমার রাখে। সংস্থার পক্ষে অসুস্থদের চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

লিক হওয়া স্টাইরিন গ্যাসের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী ও মারাত্মক হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। দীর্ঘরাোগভোগ ও পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভান্না রয়েছে।

ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কারখানার পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বসবাসকারীদের অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গ্যাসের প্রভাবে মানুষ চিরকালের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন। এমনকী লিউকোমিয়াও হতে পারে।