নিজ নিজ র্ধম পালন বা ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠানে লাউডস্পিকারের ব্যবহার অপরিহার্য নয়। অর্থাৎ তারস্বরে মাইক বাজানোর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই বলে পুলিশকে জানিয়ে দিল আদালত। একইসঙ্গে পুলিশকে এ ব্যাপারে আগাম পদক্ষেপেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একটি মামলার শুনানিতে বম্বে হাইকোর্ট বলে, কোনও ধর্মেই লাউডস্পিকার বাজানো আবশ্যক নয়। আদালতের আরও নির্দেশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শব্দবিধি ভঙ্গ করে লাউডস্পিকারের ব্যবহার বন্ধ করতে আগাম ব্যবস্থা নিক মহারাষ্ট্র পুলিশ।
রাজ্য সরকার ও পুলিশকে উদ্দেশ্য করে আদালতের নির্দেশ, লাউডস্পিকার ও বক্স যন্ত্রে শব্দ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শব্দের উচ্চমাত্রা বা ডেসিবেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষভাবে সমস্ত প্রার্থনাস্থল, মন্দির-মসজিদ-গির্জায় শব্দ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির ব্যবহার করে মাইকগুলিতে এমন কোনও যন্ত্র বসাতে হবে যাতে আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে লাউডস্পিকার জরুরি নয়, আবার লাউডস্পিকার ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ার অর্থ নাগরিক অধিকার খর্ব করাও নয়। মসজিদে মাইক বন্ধের দাবিতে দায়ের হওয়া এক মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ বম্বে হাই কোর্টের। তবে একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানাচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত সব ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আদালতের এই বক্তব্যকে যেন কারও বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ব্যবহার না করা হয়। বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি এএস গড়করি ও এসসি চন্দকের বেঞ্চ জানায়, শব্দআইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা পুলিশের আছে। শব্দদূষণ বিধি, ২০০০ প্রয়োগ ও তা কঠোরভাবে মান্য করার অধিকারও পুলিশকে দেওয়া আছে। কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অধিকার নেই লাউডস্পিকার চালিয়ে পরিবেশে শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ানো।
আদালত আরও বলে, সাধারণত এলাকার বাসিন্দারা ভয়ে কোনও অভিযোগ জানান না। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই আওয়াজ তাঁদের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব হয়ে ওঠে এবং সীমা না ছাড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তা মেনে নেন। কিন্তু, আমরা মনে করি, অভিযোগ পর্যন্ত অপেক্ষা নয়। নির্দিষ্ট অভিযোগের আগেই পুলিশকে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বম্বে হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে দেওয়া নির্দেশে জানিয়েছে, পুলিশের হাতে ডেসিবেল মাপার যন্ত্র দিতে হবে, যাতে তাঁরা যেখানেই মাইক বাজবে, সেখানেই সেই যন্ত্র নিয়ে গিয়ে শব্দ দূষণের মাত্রা মাপতে পারেন। পুলিশকে তার ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বেঞ্চ আরও বলে, যেখানেই এই ধরণের ঘটনা ঘটবে, সেখানেই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। এক্ষেত্রে ওই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাইক ব্যবহারের অনুমতিও প্রত্যাহার করে নিতে পারে পুলিশ।
মুম্বইয়ের কুরলার দুটি আবাসনের নাগরিক কমিটির দায়ের করা একটি মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ ওই পর্যবেক্ষণ করেছে আদালত। ওই দুই আবাসিক কমিটির অভিযোগ ছিল, এলাকায় বেশ কিছু মসজিদে এবং মাদ্রাসায় দেদার লাউডস্পিকার বাজানো হচ্ছে। অথচ পুলিশ নিষ্ক্রিয়। বারবার জানিয়েও কাজের কাজ হয়নি। বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতি এএস গড়করি এবং এসসি চন্দকের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, এক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য।
সংগঠের আইনজীবী আদালতে জানান, চুনাভাট্টি বা নেহরু নগর থানায় বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেঞ্চ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর পর্যবেক্ষণে বলে, মুম্বই হল একটি মিশ্র জনজাতির শহর। এই শহরে বিভিন্ন ভাষা ও ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। আবেদনকারীদের আর্জি শব্দদূষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এমনকী এই আদালতেরও আগের নির্দেশগুলি কার্যকর করা হোক।
এর আগে ২০২২ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টও একই রকমের পর্যবেক্ষণ করেছিল। এলাহাবাদ হাই কোর্ট সেসময় জানায়, মসজিদে লাউডস্পিকার লাগানোর দাবি মৌলিক অধিকার নয়। প্রায় একই কথা বলল বম্বে হাই কোর্টও।