• facebook
  • twitter
Saturday, 22 March, 2025

নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত যুবককে জামিন দিল বম্বে হাইকোর্ট

অভিযুক্ত যুবক উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তিনি আদালতে জানান, তিনি ওই কিশোরীর সঙ্গে প্রায় দু'বছর ধরে মেলামেশা করেছেন।

ফাইল চিত্র

এক নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া এক যুবককে জামিন দিয়েছে বম্বে হাইকোর্ট। পাঁচ বছর ধরে কারাবন্দি থাকার পর অভিযুক্ত যুবককে জামিন দেয় আদালত। বম্বে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, যে মেয়েটি ওই যুবকের প্রেমে পড়েছিল, সেই মেয়েটি স্বেচ্ছায় ওই যুবকের সঙ্গে থেকেছিল এবং তাঁর সম্মতিতেই দেখা করেছিল। বম্বে হাইকোর্ট রেকর্ডে থাকা তথ্য পর্যালোচনা করে, যেখানে মেয়েটির বক্তব্যেই ছিল যে, তাদের দুজনের সম্মতিতে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের অপরাধে পকসো আইনের অধীনে ২০১৯ সালে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৪ বছরের মেয়েটির বাবার দায়ের করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন অভিযুক্তর বয়স ছিল ১৯ বছর। নিম্ন আদালতে অভিযোগ প্রমাণিতও হয়। এর পরে হাইকোর্টে যান ওই যুবক। বিচারপতি মিলিন্দ এন যাদবের একক বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘নিঃসন্দেহে মেয়েটি নাবালিকা ছিল।তবে বর্তমান মামলার তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, মেয়েটি জানত সে কী করেছিল। সে সম্পর্কে বোঝার মতো যথেষ্ট জ্ঞান ও বু্দ্ধি তার ছিল। সে স্বেচ্ছায় অভিযুক্তের সঙ্গে চার দিন ছিল।’

আদালত জানায়, ওই যুবক পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচারাধীন অবস্থায় কারাবন্দি। আদালত বলে, যদিও যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন একটি বিশেষ আইন, এবং এর অধীনে অপরাধগুলি কঠোর প্রকৃতির, কিন্তু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আদালত জামিন মঞ্জুর করল।

মেয়েটির বাবার দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, মেয়েটি তাঁকে বলেছিল সে তার বিবাহিত বোনের সঙ্গে দেখা করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটি বোনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তিন-চারদিন ধরে ফিরে আসেনি। চার দিন পর বাবা মেয়েকে খুঁজে পান এবং অভিযোগ দায়ের করেন। ২০১৯ সালে মুম্বইয়ের ডি এন নগর থানায় এই মামলা নথিভুক্ত হয়।

জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তিনি আদালতে জানান, তিনি ওই কিশোরীর সঙ্গে প্রায় দু’বছর ধরে মেলামেশা করেছেন। তাঁর পরিবারে কেউ নেই। ধরা পড়ার পরে তিনি বারবার নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন করলেও জামিন মেলেনি। কারণ নিম্ন আদালতের মতে, মেয়েটি নাবালিকা হওয়ায় তার সম্মতির কোনও আইনি ভিত্তি নেই। পরে এই মামলা হাইকোর্টে উঠলে, আদালত খতিয়ে দেখে যে পুলিশের মূল অভিযোগপত্র এবং পরবর্তীতে মেয়েটির দেওয়া বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে। এমনকি, তার মেডিক্যাল পরীক্ষার সময় দেওয়া বয়ানেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও, সাক্ষীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে আদালত জানতে পারে, অভিযুক্ত যে হোটেলে কাজ করতেন, সেই হোটেলের মালিক জানিয়েছেন মেয়েটির বাবা তাঁদের সম্পর্কের কথা জানতেন।

আদালত সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের প্রসঙ্গ টেনে জানায়, অভিযুক্তর আগে কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই। ইতিমধ্যেই তিনি পাঁচ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। অভিযুক্তকে জামিন দেওয়ার সময় আদালত খতিয়ে দেখেছে যে, অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত হয়ে ফের একই ধরনের অপরাধ করতে পারেন কিনা, তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করবেন কিনা, তিনি প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবেন কিনা, এবং সর্বোপরি তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকবেন কিনা। এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করেই আদালত অভিযুক্তর জামিন মঞ্জুর করেছে।
বিচারপতি যাদব আরও উল্লেখ করেছেন যে, সুপ্রিম কোর্ট এবং অন্যান্য আদালত কারাগারের পরিবেশের প্রতিকূল প্রভাব এড়াতে এবং তাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বারবার বিচারাধীন তরুণ অপরাধীদের জামিনে মুক্তি দেওয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।