• facebook
  • twitter
Saturday, 17 May, 2025

১০৪ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে মার্কিন বিমান নামলো অমৃতসরে

কেউ অপরাধী থাকলে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার  

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আমেরিকা থেকে ১০৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে নিয়ে রওনা হওয়ার পর বুধবার দুপুর দুটো নাগাদ প্রথম মার্কিন বিমানটি নামে ভারতে। টেক্সাসের সান আন্তোনিও থেকে যাত্রা করে সি-১৭ মার্কিন সামরিক বিমানটি দুপুর ১.৫৯ মিনিটে অমৃতসরের শ্রী গুরু রামদাসজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ৭৯ জন পুরুষ ও ২৫ জন মহিলা সহ ১০৪ জন ব্যক্তিকে স্বাগত জানাতে পুলিশ ও প্রশাসনের অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন দূতাবাসের একজন প্রতিনিধিও বিমানবন্দরে ছিলেন। কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আঁটোসাঁটো করা হয় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সতর্ক ছিল পুলিশও। পিউ রিসার্চ রিপোর্ট  ২০২৪ অনুযায়ী, আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ভারতীয়রা হল তৃতীয় বৃহত্তম। আমেরিকায় সব থেকে বেশি অনুপ্রবেশকারী মেক্সিকোর, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সালভাদোর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম এই নির্বাসন প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত ১.৫ মিলিয়ন ব্যক্তির মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় নাগরিকের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে আসা প্রায়  ৭ লক্ষ ২৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে। অন্যদিকে বিমানটি নামার পরই সেখানে উপস্থিত ভারতীয়দের সবার আগে ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করা হবে বলে জানা গিয়েছে। সেই তথ্য যাচাইয়ের পর যদি দেখা যায় তাঁদের মধ্যে কারুর অতীত জীবনে কোনও অপরাধের অভিযোগ থাকে, তাহলে তাকে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার করবে কর্তৃপক্ষ। সরকারি সূত্রে এই ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই বা গ্রেপ্তারির খবর স্বীকার করা না হলেও বিভিন্ন সমাজমাধ্যম জানাচ্ছে ইতিমধ্যে ফেরত আসা ভারতীয়দের ব্যক্তিগত তথ্য যাচাইয়ের কাজ শেষ করে ফেলেছে কেন্দ্র।

এদিকে সামরিক বিমানে করে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর বেশ কিছু ছবি সম্প্রতি প্রকাশ করেছিল হোয়াইট হাউস। সেই সব ছবিতে দেখা যায়, মানুষকে সারিবদ্ধভাবে বিমানে তোলা হচ্ছে। তাঁদের সকলের কোমরে বাঁধা রয়েছে চেন। ছবির ক্যাপশনে উপরের অংশে লেখা রয়েছে—‘প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি রাখা হল।’ নীচের অংশে লেখা রয়েছে– ‘ফেরত পাঠানোর বিমানের যাত্রা শুরু।’ এই ছবি নিয়ে নানা মহলে চর্চা শুরু হয়। ১০৪ জন অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে ৩৩ জন হরিয়ানা ও গুজরাত, ৩০ জন পাঞ্জাব, ৩ জন মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশ এবং ২ জন চণ্ডীগড়ের নাগরিক রয়েছেন। সূত্রের খবর, নির্বাসিত ব্যক্তিদের অধিকাংশই মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে ধরা পড়েন। আমেরিকায় এঁদের অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও ভারতে অপরাধী তাঁরা অপরাধী নন, কারণ তাঁরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় আইনি পথ নিয়েছিলেন। তাঁরা ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করেননি বলে গ্রেপ্তারের কোনও ভিত্তি নেই। তবে সূত্রের খবর, যদি তাঁদের পাসপোর্ট না পাওয়া যেত, তাহলে বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করে তাঁদের চিহ্নিত করা যেত। তবে প্রথমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদ সংস্থা ২০৫ জন ভারতীয়  ফিরছেন বলে জানালেও পরে নিশ্চিত করা হয় যে বিমানে ছিলেন ১০৪ জন। মঙ্গলবার পাঞ্জাবের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ গৌরব যাদব বলেন, রাজ্য সরকার অভিবাসীদের গ্রহণ করবে এবং বিমানবন্দরে কাউন্টার তৈরি করবে।

অন্যদিকে রাজ্যের অনাবাসী ভারতীয় বিষয়ক মন্ত্রী কুলদীপ সিং ধালিওয়াল বলেছেন, অভিবাসীদের নির্বাসনের ব্যাপারে মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তে তিনি হতাশ। তিনি আগামী সপ্তাহে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
ধালিওয়াল বলেন, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠানোের বদলে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল। তিনি আরও দাবি করেন যে অনেক ভারতীয় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান, কিন্তু তাঁদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে তাঁদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই আমেরিকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই মার্কিন মুলুক থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজের  নিজের  দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী হয় ট্রাম্প প্রশাসন। অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে ধরপাকড়ও শুরু করেছিল আমেরিকার প্রশাসন। ভারত ছাড়াও আমেরিকায় বসবাসকারী বেশ কয়েকটি দেশের অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে শুরু করে আমেরিকা। এর আগে গুয়াতেমালা, পেরু, হন্ডুরাসের মতো দেশেও সামরিক বিমানে করে সে দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এই প্রথম সে দেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী ভারতীয়দের এভাবে ‘ডিপোর্ট’ করল আমেরিকা।