মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন উদ্ধব ঠাকরে

নানা টালবাহানার পর অবশেষে উদ্ধব ঠাকরে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।

Written by SNS Mumbai | November 29, 2019 12:13 pm

উদ্ধব ঠাকরে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। (Photo: Twitter/@OfficeofUT)

নানা টালবাহানার পর অবশেষে উদ্ধব ঠাকরে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। শপথ গ্রহণের আগে উদ্ধব ছত্রপতি শিবাজির ‘শিবরাজ্যাভিষেক’ করেন। মারাঠিতে শপথ বাক্য পাঠ করেন। শিবসেনার পক্ষে উদ্ধব তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনােহর যােশি ও নারায়ণ রানের পর শপথ গ্রহণ করলেন।

শিবাজি পার্কে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়েছিল। কারণ এখানেই উদ্ধবের পিতা বাল ঠাকরে ১৯৬৬ সালে দশেরা উৎসবের দিনে শিবসেনা প্রতিষ্ঠার কথা ঘােষণা করেছিলেন এই শিবাজি পার্কেই। শিবাজির মূর্তিকেই সভাপতি হিসেবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতীকী পৌরােহিত্য করার জন্য রাখা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উদ্ধবের স্ত্রী রশ্মি ঠাকরে ও পুত্র বিধায়ক আদিত্য উপস্থিত ছিলেন।

শপথ গ্রহণের মঞ্চটি নির্মাণ করেন হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্ট শিল্প নির্দেশক নীতিন দেশাই। সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস মহা বিকাশ জোটের দুইজন করে মন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ভগt সিং কোশিয়ারি। শপথ অনুষ্ঠানের মঞ্চে সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি, স্ত্রী নীতা আম্বানি ও পুত্র অনন্ত আম্বানি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন রাজ ঠাকরেও। বিজেপির সদ্যপদত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশও উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে।

উদ্ধব ঠাকরের মুখ্যমন্ত্রীত্বের শপথ অনুষ্ঠান দেখতে শিবাজি পার্কে সাধারণ মানুষের ঢল নামে । এদিন এনসিপি’র অজিত পাওয়ার আবারও উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এনিয়ে ছয়দিনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়বার শপথ নিলেন।

উদ্ধব ঠাকরে নিজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান। পুত্র আদিত্য ঠাকরে দিল্লিতে গিয়ে সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করে তাঁকে এবং রাহুল গান্ধিকে এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিংকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তাঁরা কেউই উপস্থিত থাকতে পারেননি, কিন্তু শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। উদ্ধব ঠাকরে বিধানসভার সদস্য না হয়েও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ছেন।

গতমাসে বিজেপি-সেনা নির্বাচনী জোট করে লড়াই করে সরকার গঠনের প্রয়ােজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিজেপি ১০৫ এবং সেনা ৫৬ টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু সেনা বিজেপির মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে বিরােধ বাধে। বিজেপি সেনার আব্দার মেটাতে অস্বীকার করে। ফলে উদ্ধব ত্রিশ বছরের বেশি সময়ের বিজেপি-সেনা জোট ভেঙে দেন। এনসিপি-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে আলােচনা শুরু করেন সরকার গঠনের জন্য। এই প্রথমবার বিরােধী এনসিপি-কংগ্রেসের সমর্থকদের সঙ্গে সেনা সমর্থকরাও তাদের পতাকা নিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যােগ দেন।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি উদ্ধব ঠাকরের সরকারকেই সঠিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকার বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে কংগ্রেস সভাপতি সােনিয়া গান্ধি তাঁর বার্তায় বলেছেন, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে যে নােংরামি হল তাতে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল একেবারে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে এবং রাজ্যের অর্থনীতির চরম ক্ষতি হল। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি দলের অভূতপূর্ব চোখ রাঙানিকে অগ্রাহ্য করে এক চরম ব্যতিক্রমী অবস্থায় শিবসেন এনসিপি-কংগ্রেস জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষায়। রজ্যের কৃষকরা এক অভাবনীয় দুর্দশার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আমি আশা করব সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস সরকার শুধু কথাতেই নয় বাস্তবিকভাবে কৃষকদের দুর্দশা দূর করার জন্য কাজ করবে। মানুষের সামগ্রিক দুর্দশা দূর করার জন্য দায়িত্বশীল ও রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কাজ করবে।

রাহুল গান্ধি জানিয়েছে, সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস বিজেপির সংবিধানবিরােধী কাজের প্রতিবাদে একতাবদ্ধ হয়ে এক স্থায়ী সরকার গঠনের জন্য জোট বাঁধতে পেরেছে। এই সরকার রাজ্যের মানুষের আশা আকাঙ্খা পূরণে সমর্থ হবে বলে আশা রাখি।