দেবাশিসের মনোনয়ন বাতিলে বীরভূমে বিজেপি প্রার্থী দেবতনু

Written by Subhash Pal April 27, 2024 2:16 pm

খায়রুল আনাম: এভাবে যে তাঁকে পিছু হটতে হবে তা বোধহয় স্বপ্নে বা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি পুলিশের উর্দি ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে আসা প্রাক্তন আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধর৷ বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁদের তিনবারের তারকা সাংসদ শতাব্দী রায়কে চতুর্থবারের জন্য প্রার্থী করার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছিল, এই কেন্দ্রে বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে তা নিয়ে৷ এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধর পুলিশের উর্দি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই বিজেপি বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের জন্য দেবাশিস ধরের নাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পরই৷ দেবাশিস ধর এক সময় এই জেলায় পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কাজে থেকে কাজ করে গিয়েছেন৷ তিনি বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিকও ছিলেন৷ ২০২১ সালে তিনি যখন কোচবিহার জেলা পুলিশ আধিকারিক ছিলেন, সেই সময় রাজ্য বিধানসভা ভোটে গণ্ডগোলের জেরে শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের গুলিতে চারজন সংখ্যালঘু এবং একজন রাজবংশি মারা যান৷ এই ঘটনায় তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে দেবাশিস ধর যে রিপোর্ট দেন, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য দেখা দিলে তাঁকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দিয়ে রাজ্য সরকার ঘটনার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়৷ ২০২২ সালে সিআইডি দেবাশিস ধরের কলকাতার বাড়িতে আয়বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগে তদন্ত চালায়৷ সেই তদন্ত এখনও চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে দেবাশিস ধর চাকরি ছেড়ে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে পারেন কী না, সে প্রশ্নও ওঠে৷ এ ব্যাপারে দেবাশিস ধর জানিয়েছিলেন, একজন আইপিএস অফিসারকে ছাড়পত্র দেওয়া, না দেওয়ার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের হাতে নেই৷ তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ছাড়পত্র নিয়েই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ভোটে প্রার্থী হয়েছেন এবং তিনি জোর কদমে ভোট প্রচারও চালিয়ে যেতে থাকেন৷

রাজনৈতিক এই পরিস্থিতির মধ্যেই ২২ এপ্রিল সিউড়িতে জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে চতুর্থবারের জন্য বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রাথী হিসেবে শতাব্দী রায় তাঁর মনোনয়নপত্র পেশ করেন৷ পরদিন ২৩ এপ্রিল দেবাশিস ধর বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন৷ আর ওইদিনই জেলার রামপুরহাটের হাঁসনে নির্বাচনী জনসভায় এসে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবাশিস ধরের ভোটে প্রার্থী হওয়া নিয়ে স্পষ্টতই বলেন, ওনাকে, ‘নো ডিউ সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়নি৷ তাই উনি প্রার্থী হতে পারেন না৷ অপরদিকে দেবাশিস ধর বলেন, তিনি রাষ্ট্রপপতির কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন৷ তাঁর কোনও সমস্যা নেই৷ আর এরই মধ্যে ২৫ এপ্রিল দেবাশিস ধর যখন সাঁইথিয়ার পুনুর গ্রামে ভোট প্রচারে ব্যস্ত তখন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় রাজ্য বিজেপি নেতা তথা দলের রাঢ়বঙ্গের সহ-আহ্বায়ক দেবতনু ভট্টাচার্যকে নিয়ে সিউড়ি জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে দেবতনু ভট্টাচার্যকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে জানান, তাঁরা বিকল্প একজন প্রার্থী রাখলেন এবং ২৬ এপ্রিল মনোনশনপত্র পরীক্ষার দিনে দেখা গেল যে, নির্বাচন দফতর দেবাশিস ধরের মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন৷ তারপরই দেবাশিস ধর জানান, তিনি এ ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন৷ আর এনিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শতাব্দী রায় বলেন, উনি যে দলেরই হোন না কেন, এটা খারাপ লাগছে৷ এতদিন ধরে উনি প্রচার করলেন৷ একটা মানসিক প্রস্তুতি তো থাকে সবার৷ সেই জায়গা থেকে মনোবল ভেঙে যায়৷ যদিও উনি প্রার্থী থাকলেও আমিই জিততাম৷ এখনও আমিই জিতব৷ বিজেপির যিনি প্রার্থী হলেন, সেই দেবতনু ভট্টাচার্য এর আগে একবার হাওড়ার আমতা বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, দল তাঁকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলেছে, তাই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন৷ দু’আঙুলে জয়সূচক চিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেন, কে প্রার্থী হলেন সেটা বড় কথা নয়৷ সকলেই নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থী৷ তাঁকে সামনে রেখে যিনি প্রার্থী হবেন, তিনিই জিতবেন৷