• facebook
  • twitter
Saturday, 2 August, 2025

জম্মু-কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে রিপোর্ট পেশ করছেন তৃণমূল প্রতিনিধিদল

আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ আমাদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের প্রতি, যাঁরা সম্প্রতি সীমান্তবর্তী জেলা পুঞ্চ ও রাজৌরী সফর করেছে— যে সব এলাকা সম্প্রতি সীমান্তপারের গোলাগুলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পহেলগাম হত্যাকাণ্ড এবং তার প্রত্যাঘাত হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জেরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে কাটিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা। এই অবস্থায় উপত্যকাবাসীর হাল-হকিকত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে সেখানে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের পাঁচ সদস্য তিন দিনের সফরে কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।পাক সামরিক বাহিনীর অনৈতিক হামলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ খবর নেন তাঁরা। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও’ ব্রায়েন, মমতাবালা ঠাকুর, সাগরিকা ঘোষ, নাদিমুল হক ও রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপত্যকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছেন। আগামী মঙ্গলবার সেই রিপোর্ট পেশ করবেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সব ঠিক থাকলে দলনেত্রীর মমতার কাছে আগামী মঙ্গলবার তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন একটি রিপোর্ট পেশ করবেন।

তবে সেই রিপোর্ট পেশের আগেই শনিবার রাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজের সমাজমাধ্যমে কাশ্মীরের ওই প্রতিনিধিদলের প্রতি বার্তা দিয়ে লেখেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ আমাদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের প্রতি, যাঁরা সম্প্রতি সীমান্তবর্তী জেলা পুঞ্চ ও রাজৌরী সফর করেছে— যে সব এলাকা সম্প্রতি সীমান্তপারের গোলাগুলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতিনিধিরা শোকাহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাঁদের দুঃখে শামিল হন এবং এই গভীর বেদনার সময়ে সান্ত্বনা ও সহানুভূতির বার্তা পৌঁছে দেন।’

প্রসঙ্গত জঙ্গিহানা এবং ভারত-পাক সংঘর্ষের পর তৃণমূলই একমাত্র দল, যারা নিজেদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা জানার চেষ্টা করেছে।

সেজন্য মমতা সমাজমাধ্যমে আরও লেখেন, ‘প্রতিনিধিদলটি রাজৌরীর সরকারি মেডিক্যাল কলেজও পরিদর্শন করে, যেখানে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের সেবার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সঙ্কটের সময়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সহানুভূতির নিরাময়কারী স্পর্শ এবং আমাদের প্রতিনিধিদল ঠিক সেই মানবিক স্পর্শটাই তুলে ধরেছে— এ জন্য আমি গভীর ভাবে কৃতজ্ঞ। এই উদ্যোগ আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতিকে আবারও নিশ্চিত করে। যে প্রতিশ্রুতি বলে, আমরা, জনপ্রতিনিধিরা, সব সময় মানুষের পাশে থাকব তাঁদের দুঃসময়ে।’

জানা গিয়েছে, সংঘর্ষবিরতির আগে পাকিস্তানি সেনার গুলিবর্ষণে ১৭ জন সাধারণ কাশ্মীরবাসীর প্রাণহানি ঘটেছে। ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসভবনেরও। কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা জানতে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও তাঁর বর্ষীয়ান পিতা ফারুক আবদুল্লার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সূত্রের খবর, এই সমস্ত বিষয় বিস্তারিত উল্লেখ করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

এদিকে প্রতিনিধিদলে থাকা তৃণমূলের এক নেতা জানিয়েছেন, তাঁরা কাশ্মীর সফরে থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সব রকম আপডেট নিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবেন। কারণ, অনেক এমন বিষয় রয়েছে, যেগুলির কথা দলনেত্রীকে বিস্তারিত জানানো দরকার। তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কাশ্মীর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা বলেছেন। যদি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়, তবে সংসদে তৃণমূল নিজেদের সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরবে। সঙ্গে ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মুখ্যমন্ত্রীও সংসদীয় দলকে তাঁর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে ২৫ জন পর্যটক সহ ২৬ জন ভারতীয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রত্যাঘাত করে ভারতীয় বায়ুসেনা। গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা ৯টি জঙ্গিঘাঁটি। এরপর বদলা নিতে পাক সেনাবাহিনী ভারতের সীমান্তবর্তী বেশ কিছু জনবহুল শহর, সেনা ছাউনি ও ধর্মীয় স্থানে উদ্দেশ্যহীনভাবে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালালে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জবাবে ভারতীয় সেনা ও নৌবাহিনী ক্রমাগত হামলা চালিয়ে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে দেয়। বাধ্য হয়ে পাকিস্তান মাথা নত করে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু পাকিস্তানের অমানবিক এবং অনৈতিক যুদ্ধনীতির জেরে কাশ্মীরের মানুষ কেমন রয়েছেন, তা জানতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠান মমতা। সেই প্রতিনিধিদল তিন দিন কাশ্মীরে থেকে সেখানকার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী, হাসপাতালে ভর্তি আহত ও নিহতদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলেন।