• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

কার্বাইড বন্দুকে এবার মালদহে জখম ১০ শিশু ও কিশোর

ই ধরনের ঘটনায় চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটির' তরফে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি জরুরি আবেদন জারি করা হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশের পর এবার বাংলা। কার্বাইড গান বা ‘দেশি ফায়ার ক্র্যাকার গান’-এর আঘাতে আহত মালদহের ১০ শিশু ও কিশোর। মালদহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কার্বাইড গানের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গিয়েছে। এই কার্বাইড গানের বিস্ফোরণে মধ্যপ্রদেশে ইতিমধ্যে ৩২০ জনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি বাংলায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা।

জানা গিয়েছে, মালদহ জেলা হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে।  ১০ জনের মধ্যে এক শিশুকে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসার জন্য নেপালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন ১৩ বছর বয়সি আকাশ বিশ্বাস নাম এক কিশোর জানিয়েছে, ইউটিউব দেখে বাড়িতে প্লাস্টিকের বোতল ও কার্বাইড দিয়ে বন্দুক বানিয়েছিল। আগুন ধরানোর সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ হয়। চোখে-মুখে আঘাত লাগে তার। জল দিয়ে ধোওয়ার পরেও ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিলো না সে। অন্যদিকে হবিবপুরের ২০ বছরের এক তরুণ কিশোর বিশ্বাসও একই বিপদের শিকার। গ্রামের এক যুবকের বানানো কার্বাইড গান বিস্ফোরণে চোখে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে তাঁরও। মালদহ জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, ‘গাজোলের ভৈরব রায় নামে এক শিশুর রেটিনার ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। এই ধরনের বিস্ফোরক খেলনা থেকে শিশুদের দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।’

Advertisement

এই ধরনের ঘটনায় চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটির’ তরফে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি জরুরি আবেদন জারি করা হয়েছে। সেই আবেদনে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই বাজি কোনও খেলার বিষয় নয়। এটি একধরনের বিস্ফোরক। কার্বাইড-ভিত্তিক এবং ইম্প্রোভাইজড বিস্ফোরক আতশবাজি হওয়ায় অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হোক এটিকে।
অন্যদিকে, ‘কার্বাইড গান’ বা ‘দেশি ফায়ার ক্র্যাকার গান’-এর আঘাতে মধ্যপ্রদেশে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০-তে । শুক্রবার আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। আগেই অবশ্য এই বিস্ফোরক বাজিটিকে রাজ্যজুড়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার।  মুখ্যমন্ত্রী যাদব জানিয়েছেন, কার্বাইড বন্দুকগুলিকে অস্ত্র আইন (১৯৫৯), বিস্ফোরক আইন (১৮৮৪) এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইন (১৯০৮) এর অধীনে নিষিদ্ধ বিস্ফোরক হিসেবে গণ্য করা হবে।
জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশ থেকেই ‘কার্বাইড গান’-এর আতঙ্ক শুরু। দীপাবলির রাতেই দৃষ্টি হারান ১৪ শিশু। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ১১৪ জন শিশু ও কিশোরকে। আহতদের বয়স ৭–১৪ বছরের মধ্যে। জল মেশানো ক্যালসিয়াম কার্বাইডকে পিভিসি পাইপে ভরে গ্যাস লাইটার দিয়ে অগ্নি সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে এই বাজিতে। গ্যাস লাইটারে চাপ দিলেই কানফাটানো শব্দে বিস্ফোরণ। তাতেই মারাত্মক আহত হচ্ছে চোখ এবং শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ । আহতদের মধ্যে চোখের আঘাতের সংখ্যাই বেশি। ভোপাল এবং এর আশপাশের অঞ্চল থেকেই ১৮৬টি ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে। এরপরেই রয়েছে গোয়ালিয়র। সেখানে ৩৫টি ঘটনা ঘটেছে। জানা গিয়েছে, প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে আহত হয়েছে শিশুরা। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অনেকের দৃষ্টিশক্তি ফিরতে প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

Advertisement

রাজ্যের সব জেলায় নির্দেশ জারি করে অবিলম্বে কার্বাইড বন্দুক তৈরি করা, বিক্রি এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার, এই বাজির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচারও শুরু করেছে। এই ‘কারবাইড গানে’র বিক্রির বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ভোপালে ছ’টি, বিদিশায় আটটি এবং গোয়ালিয়রে একটি এফআইআর করেছে।

Advertisement