অযােধ্যা-বিবাদের চূড়ান্ত রায়, বিতর্কিত জমি মন্দিরের, মসজিদের জন্য আলাদা ৫ একর

শতাব্দী প্রাচীন এই অযােধ্যায় জমি বিবাদের মূলে ছিল যােড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ, যাকে ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল হিন্দু ধর্মের অতি উৎসাহীরা।

Written by SNS New Delhi | November 10, 2019 12:54 pm

সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি এস এ বোবড়ে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়, বিচারপতি অশােক ভূষণ ও বিচারপতি এস আবদুল নাজির। (Photo: Twitter @barandbench)

১৮৮৫ সাল থেকে চলে আসা বিতর্কের উপর শনিবার যবনিকা পতন হল দেশের শীর্ষ আদালতে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চ এদিন এক ঐকমত্যের রায়ে জানিয়ে দিল অযােধ্যায় বিতর্কিত জমির মালিকানা হিন্দুদের হাতে থাকবে। এই মামলায় মুসলিমদের মসজিদ নির্মাণের স্বার্থে ৫ একর জমি অযােধ্যার কোনও উপযুক্ত স্থানে দেওয়ার কথাও ঘােষণা করা হয়েছে। যে বিতর্কিত জমি হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছে আদালত, তা করতে হবে সরকার নিযুক্ত একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে।

এদিনের এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রকে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে, যার মাধ্যমে অযােধ্যায় গড়ে উঠবে রামমন্দির। আদালত জানিয়েছে, এই মামলায় অন্যতম আবেদনকারী রাম লাল্লা (বালক রাম)-কে ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমির মালিকানা তুলে দেওয়া হচ্ছে। বিতর্কিত জমির উপর রাম লাল্লার অধিকার সিদ্ধ করা নির্ভর করছে দেশে শান্তি, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার উপর।

সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতির পক্ষে রায় পড়তে গিয়ে প্রধান বিচারপতি এদিন বলেন, অযােধ্যা বিতর্ক ভারত নামক দেশের ধারণার মতােই প্রাচীন। অযােধ্যা রায়ে এদিন সুপ্রিম কোর্ট ‘সুন্নী ওয়াকফ বাের্ড’কে অযােধ্যার কোনও উপযুক্ত জায়গায় ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকারকে। কারণ আদালত মনে করেছে, যা ভুল হয়েছে, সেই ভুল শুধরে নেওয়ার প্রয়ােজন আছে। সহনশীলতা এবং পারস্পরিক সহাবস্থান রাষ্ট্রের এবং নাগরিকদের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের পরিচায়ক।

সরকারকে নির্দেশ দিয়ে শীর্ষ আদালত বলেছে, সরকার চালিত একটি ট্রাস্ট বা বাের্ড গঠন করতে হবে আগামী তিন মাসের মধ্যে এবং এরই মাধ্যমে রামমন্দিরের নির্মাণের কাজ শুরু হবে অযােধ্যায়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শতাব্দী প্রাচীন এই অযােধ্যায় জমি বিবাদের মূলে ছিল যােড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ, যাকে ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল হিন্দু ধর্মের অতি উৎসাহীরা। কারণ এদের বিশ্বাস ছিল যে, মসজিদের জায়গা হল রামের জন্মস্থান। সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ে এদিন জানিয়েছে, বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলাটা ছিল বেআইনি।

বিচারপতিদের মতে, হিন্দুপক্ষ বিতর্কিত মসজিদ-মন্দির জমির উঠোনের উপর নিজেদের স্বত্ত্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, অপরদিকে সুন্নী ওয়াকফ বাের্ড সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আর্কেওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) একটি রিপাের্টের উল্লেখ করে বলেছে যে, মসজিদের নীচে একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যদিও এটা বলা হয়নি যে সেটা ছিল এক মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। আদালত জানিয়েছে ভগবান রাম যে ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় জন্মেছিলেন, হিন্দুদের এই আস্থা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। সেখানে সীতারসুই, রামচবুতরা এবং ভান্ডার গৃহের অস্তিত্বও প্রমাণ করে, সেই জায়গার ধর্মীয় মাহাত্ম্য। কিন্তু জমির মালিকানা যেহেতু আস্থা এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারে না, তাই এগুলিকে আমরা দিকনির্দেশিকা হিসেবেই ব্যবহার করতে পারি বলে অভিমত প্রকাশ করেছে সাংবিধানিক বেঞ্চ। আদালতের মতে, এটি হল উন্মাদনা শান্ত করার সময়। আমাদের উপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল, সেই দায়িত্ব পালন করে আমরা নিশ্চিন্ত বােধ করছি।

প্রসঙ্গত, অযােধ্যার জমি বিতর্ক মামলার শুনানি টানা ৪০ দিন ধরে চলেছে সাংবিধানিক বেঞ্চে। এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি এস এ বোবড়ে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড়, বিচারপতি অশােক ভূষণ ও বিচারপতি এস আবদুল নাজির। এর আগে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অযােধ্যা জমি বিতর্ক মামলার রায় দিতে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তিনভাগে ভাগ করেছিল এই বিতর্কিত জমি। একটি অংশ দেওয়া হয়েছিল সুন্নী ওয়াকফ বাের্ডকে, অপর দু’টি অংশ ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল নির্মোহী আখাড়া এবং রামলাল্লার মধ্যে। সেই রায়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট কার্যত কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এলাহাবাদ হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিন পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল। সেই আবেদনের টানা ৪০ দিন ধরে শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ এদিন চূড়ান্ত রয়ে ঘােষণা করেছে।