বাংলার রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ভোট সবসময়ই বড় শক্তি। সেই ভোটকে মাথায় রেখেই কি এসআইআর–এর প্রক্রিয়া সামনে আনা হচ্ছে? এমন প্রশ্ন তুলেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘নাগরিকত্ব’ এবং ‘এসআইআর’ — দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এই দুটিকে একসঙ্গে মেলানো হলে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।
দীর্ঘদিন নির্বাচন কমিশনে কাজ করা জহর সরকারের মতে, এসআইআর চালুর মাধ্যমে বিজেপি ও তৃণমূল— উভয়েই ভোটব্যাঙ্কের অঙ্ক কষছে। তাঁর অভিযোগ, ‘বিজেপি শুরু থেকেই বলছে এসআইআর সম্পূর্ণ হলে বাংলাদেশিরা বাদ যাবে। অপরদিকে শাসক দল নিজেদের সংখ্যালঘু ও বাংলার সংস্কৃতির রক্ষক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।’
Advertisement
জহর সরকারের যুক্তি, বিজেপির ধারনা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট তাদের দিকে আসে না। তাই যাদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা যায়, তাদের নাম কাটানোর রাজনৈতিক পরিকল্পনাই বিজেপির উদ্দেশ্য হতে পারে। আবার শাসক দলও নানা কেলেঙ্কারির পর নিজেদের অবস্থান সংহত করতে চাইছে এই সংখ্যালঘু ভোটের ভরসায়। কিন্তু বাস্তবে সংখ্যালঘুদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে বলেই তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, ‘সংখ্যালঘুরাও তোলাবাজির শিকার, ওদেরও অনেক রাগ আছে।’
Advertisement
তবে আতঙ্ক বাড়ানোর কিছু নেই বলেই দাবি জহর সরকারের। তাঁর মতে, প্রকৃত বাংলাদেশিদের সংখ্যা খুবই কম, বরং যাঁরা বসবাসের জায়গা বদলেছেন অথচ পুরনো কেন্দ্র থেকে নাম কাটাননি, সেই সব ডুপ্লিকেট ভোটারই বেশি। তার সঙ্গে মৃত ভোটারদের নামও এখনও তালিকায় থেকে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। সেই কারণেই অনেক নাম বাদ পড়তে পারে। কিন্তু তাকে বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া ভুল বলেই মত তাঁর।
জহর সরকার মনে করিয়ে দিয়েছেন, নাগরিকত্বের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র দপ্তরের। আর এসআইআর নির্বাচন কমিশনের একটি নিয়মিত পরিকাঠামো— দুটিকে এক করে রাজনৈতিক প্রচার চালানো উচিত নয়।
তিনি বলেছেন, প্রকৃত ভোটারদের অধিকার যেন কোনওভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয়— এই দায়িত্ব প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলির সকলের। কারণ, ভোট শুধুই সংখ্যা নয়, এটি নাগরিকের সম্মান এবং সাংবিধানিক অধিকার।
Advertisement



