বাজেটে বিশেষ নজর এবার বিহারে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এদিন মধুবনী শাড়িতে সংসদে প্রবেশের পরই গুঞ্জন শুরু হয়। পরে সেই গুঞ্জনই সত্য হয়। গতবারের মতো এবারও মোদী সরকারের বাজেটে বিশেষ নজর দেওয়া হল এনডিএ শাসিত বিহারের দিকে। চলতি বছরের শেষেই বিহারে বিধানসভা ভোট। তার আগে বাজেটে বিহারের জন্য ভাণ্ডার উপুড় করে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘বিহার ভোটমুখী বাজেট’ বলে ব্যাখ্যা করেছে রাজনৈতিক মহল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শনিবার বাজেট পেশের দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা তাঁর অষ্টম বাজেট বক্তৃতার জন্য সংসদে আসেন একটি মধুবনি আর্টের শাড়ি পরে। মধুবনি শিল্পের জনক বিহারের মিথিলা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পরনের শাড়িটি পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত দুলারি দেবী বিহার সফরের সময় নির্মলাকে উপহার দিয়েছিলেন।
২০২৫-২৬ এর কেন্দ্রীয় বাজেটে বিহারের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন। বাজেটে অর্থমন্ত্রী বিহারের জন্য মাখানা বোর্ড তৈরি, পশ্চিম কোশি খালের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং আইআইটি পাটনার সম্প্রসারণের কথা বলেছেন। পাটনা আইআইটির পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আরও একাধিক ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। নির্মলা সীতারামন শনিবার বাজেট বক্তৃতায় বিহারে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড টেকনোলজি’ গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, পাটনা বিমানবন্দর সম্প্রসারিত হবে। পাটনা বিমানবন্দরের উন্নতির জন্য বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। মগধভূমের শিল্প ও পরিষেবা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য চারটি নতুন গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর এবং বিহতায় একটি ব্রাউনফিল্ড বিমানবন্দর নির্মাণের কথা বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।
বিহারে মাখানা চাষিদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ বোর্ড গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন নির্মলা। যদিও ইতিমধ্যেই পরিবেশবিদদের একাংশের অভিযোগ, জলাভূমিগুলিতে মাখানা চাষের ফলে জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বাদাম উৎপাদন, ও প্রক্রিয়াকরণের উন্নতির জন্য বিহারে একটি মাখানা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্র পশ্চিম কোশি খালের জন্য রাজ্যকে আর্থিক সহায়তা দেবে। এর ফলে মিথিলা অঞ্চলের ৫০ হাজার হেক্টর জমি উপকৃত হবে। কেন্দ্র ৫টি আইআইটি-তে অতিরিক্ত পরিকাঠামো তৈরি করবে এবং আইআইটি পাটনার উন্নয়নে সাহায্য করবে।
বছরের শেষে নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে লোকসভায় মোদী সরকারের তৃতীয় মেয়াদের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে নজর ছিল পূর্ব ভারতের এই রাজ্যের দিকে। জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেও এনডিএর বিধায়ক সংখ্যার হিসাবে বৃহত্তম দল বিজেপি। এবার বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে শক্তিবৃদ্ধিই যে মোদীর ‘পাখির চোখ’ নির্মলার বাজেটেই তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিরোধী নেতৃত্বের একাংশ।
গত বছর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে এনডিএ-তে শামিল হন নীতীশ। লোকসভা ভোটে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন একক ভাবে জিততে পারেনি বিজেপি। নির্ভর করতে হয়েছে শরিকদের উপর। সেখানে গুরুত্ব বেড়েছে জেডিইউ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল টিডিপির। বাজেটে সেই সমীকরণের প্রতিফলনও দেখা গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জেডিইউ-এর কার্যকরী সভাপতি সঞ্জয় ঝা বিহারে মাখানা বোর্ড গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানান৷ এটি কৃষক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন তিনি। এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির জন্য এটি একটি গেম চেঞ্জার হয়ে উঠবে বলে উল্লেখ করে সঞ্জয় ঝা এক্স-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মূল্য সংযোজন এবং বিপণন বাড়াবে, মিথিলা এবং বিহারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনবে।’
চিরাগ পাসওয়ান এক্স-এ পোস্ট করে লেখেন, ‘বিহারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড টেকনোলজি, এন্টারপ্রেনারশিপ এবং ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠা সমগ্র পূর্বাঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করবে এবং কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণমান উন্নত করে আয় বৃদ্ধি করবে৷’
অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘এটা স্বাভাবিক যেহেতু বছরের শেষের দিকে সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এনডিএ-র অন্য স্তম্ভ, অন্ধ্রপ্রদেশকে কেন এত নিষ্ঠুরভাবে উপেক্ষা করা হল?’