• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত, উত্তাল সংসদ

আমেরিকার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার সামরিক বিমানটি বুধবার বিকেলে পাঞ্জাবের অমৃতসরে অবতরণ করে

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আমেরিকায় বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসী ভারতীয়দের পুলিশ বিমানবন্দরে এনেছিল শিকলে বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে। বৃহস্পতিবার এই খবর প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে। এর পরই বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। বুধবার মার্কিন সেনাবাহিনীর বিমান ১০৪ জন ভারতীয়কে নিয়ে অমৃতসর বিমানবন্দরে নামে। ওই বিমানে ভারতীয়দের মধ্যে একজন, পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার হরদোরওয়াল গ্রামের বাসিন্দা যশপাল সিংও ছিলেন। তিনিও দাবি করেন, হাতকড়া পরানো হয়, পা বেঁধে দেওয়া হয় শিকলে। অমৃতসর বিমানবন্দরে নামার পরে তাঁদের শিকল ও হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সংসদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। দফায় দফায় মুলতুবি হয় লোকসভার বাজেট অধিবেশন। অশান্তির জেরে ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি হয় রাজ্যসভার অধিবেশনও। বিরোধীদের হট্টগোলে লোকসভা এবং রাজ্যসভা সাময়িকভাবে মুলতুবি করে দেন স্পিকার।

বুধবার বিমানে করে প্রথম দফায় ফেরত পাঠানো হয়েছে আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসী ১০৪ জন ভারতীয়কে। টেক্সাসের এল পাসো বিমানবন্দর থেকে আসা আমেরিকার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার সামরিক বিমানটি বুধবার বিকেলে পাঞ্জাবের অমৃতসরে অবতরণ করে। এঁদের মধ্যে কয়েকজনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকিরা বেআইনিভাবে মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকার ঢোকার চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, তার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ভারতের রাজনীতিতেও। বিশেষত যে প্রক্রিয়ায় প্রথম দফায় পশুর মতো করে হাতকড়া পরিয়ে, কোমরে দড়ি বেঁধে ভারতীয়দের মার্কিন সেনার বিমানে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদের দুই কক্ষ।

বৃহস্পতিবার সংসদের উভয়কক্ষের অধিবেশন শুরু হতেই হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। বিরোধীদের হট্টাগোলের জেরে অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। এরপর আবার দুপুর ১২টায় সংসদে অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই একইভাবে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধীরা। তাঁরা ভারতীয়দের আমেরিকা থেকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন বিরোধী সাংসদরা। এরপর তাঁরা ওয়েলে নেমেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এবং এই বিষয়ে আলোচনার দাবি জানান। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা আলোচনার দাবি খারিজ করে দিলে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা।

বিরোধীদের উদ্দেশে স্পিকার বলেন, ‘বিষয়টি গুরুতর। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কিন্তু অন্য দেশেরও নিজস্ব নিয়ম-কানুন আছে। পরিকল্পিতভাবে অধিবেশন অচল করবেন না।’ কিন্তু তাঁর আবেদন সাড়া না মেলায় দুপুর ২টো, তার পর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। সংসদের বাইরেও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। কংগ্রেসের তরফে সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে মুলতুবি প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সংসদের বাইরে এই ইস্যুতে বিক্ষোভে শামিল হন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, অখিলেশ যাদব প্রমুখ। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আমেরিকা ও বিজেপি সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল, এসপির এমপি ধর্মেন্দ্র যাদব, কংগ্রেসের গুরজিৎ সিং আউজলা এবং আরও কয়েকজন নিজেরাও হাতকড়া পরে বিক্ষোভ দেখান। কংগ্রেস সদস্য শশী থারুর বলেন, ‘অবৈধভাবে কোনও ভারতীয় সেদেশে বাস করলে তারা ফেরত পাঠাতেই পারে। কিন্তু যেভাবে সেনা বিমানে তাঁদের পাঠানো হয়েছে, তা যে শুধু অমানবিক তাই নয়, ভারতের পক্ষে অপমানজনক। প্রত্যেক ভারতীয়র সম্মানকে ধুলোয় মিশিয়েছে আমেরিকা।’

এদিকে প্রথম দফায় দেশে ফিরে আসা ১০৪ জনের মধ্যে রয়েছেন ৩৬ বছরের যশপাল সিং। পাঞ্জাবের গুরদাসপুরের বাসিন্দা যশপাল জানান, মার্কিন সামরিক বিমানে তাঁদের আনার সময়ে হাত-পা চেন দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ভারতে বিমান অবতরণ করার পরই তাঁদের সেই বাঁধন খোলা হয়। যশপাল বলেছেন, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম আমাদের আবার কোনও ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ আমাদের সকলের হাতকড়া এবং পা শিকলে বাধা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি, আমরা দেশে ফিরছি।’ তিনি এও জানিয়েছেন, আমেরিকা যাওয়ার পর তাঁদের ১১ দিন টানা ডিটেনশন সেন্টারে কাটাতে হয়েছিল।

এর আগে গুয়াতেমালা, পেরু, হন্ডুরাসের মতো দেশেও সামরিক বিমানে করে সে দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এই প্রথম ভারতীয় নাগরিকদের এভাবে ‘ডিপোর্ট’ করল আমেরিকা।