রবিবারও অব্যাহত উড়ান সঙ্কট। টানা ছ’দিনে বিমান বিপর্যয়ে নাকাল যাত্রীরা। রবিবারও দিল্লি এবং মুম্বই বিমানবন্দর থেকে ২২০টি বিমান বাতিল করা হয়েছে। সূত্র অনুযায়ী মুম্বই বিমানবন্দর থেক ইন্ডিগোর ১১২টি এবং দিল্লি থেকে বাতিল হয়েছে ১০৯টি বিমান। রবিবার মোট ৬৫০টি বিমান বাতিল করার কথা জানিয়েছে ইন্ডিগো। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দাবি করেছে ওই বিমান সংস্থা।
ইন্ডিগোকে শনিবার নোটিস ধরিয়েছিল কেন্দ্র। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তারপর রবিবার বিমান সংস্থা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, বোর্ড অফ ডিরেক্টরের সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বিমান সঙ্কট কী ভাবে সামলানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ গঠন করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ম্যানেজমেন্ট প্রতিদিন সেই গ্রুপের কাছে রিপোর্ট দেবে। ইন্ডিগোর মুখপাত্র জানিয়েছেন সঙ্কট কাটানোর পথ বের করাই ছিল এই বৈঠকের লক্ষ্য।
Advertisement
পরিষেবার ৯৫ শতাংশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে সংস্থা দাবি করেছে। ১৩৮টি রুটের মধ্যে ১৩৫টিতে পরিষেবা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ দিন ফের একবার ক্ষমা চান কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে ইন্ডিগো আরও জানিয়েছে, রবিবার হায়দরাবাদে ১১৫টি, মুম্বইয়ে ১১২টি, দিল্লিতে ১০৯টি, চেন্নাইয়ে ৩৮টি এবং অমৃতসরে ১১টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এ ছাড়াও ছোট শহরগুলিতেও বাতিল হয়েছে একাধিক ফ্লাইট। উল্লেখ্য, প্রতিদিন দেশজুড়ে ২,৩০০টি ফ্লাইট চালায় ইন্ডিগো। তবে এ দিন ১,৬৫০টি ফ্লাইট চলছে বলে জানিয়েছে সংস্থা।
Advertisement
ফ্লাইট বাতিলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল যাত্রীকে রবিবার রাত ৮টার মধ্যে টিকিটের ভাড়া ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বেসামরিক বিমান মন্ত্রক। সেই নির্দেশ মানল বিমানসংস্থাটি। ছয় দিনের বিশৃঙ্খলার পর রবিবার যাত্রীদের টিকিট বাবদ ৬১০ কোটি টাকা ফেরাল ইন্ডিগো। এইসঙ্গে ৩ হাজার ব্যাগ ফেরত দিয়েছে বিমানসংস্থাটি। ইন্ডিগো বিপর্যয়ের পরেই একাধিক এয়ারলাইন সংস্থার ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে এয়ারফেয়ার ক্যাপ আরোপ করেছে মন্ত্রক। বেঁধে দেওয়া হয়েছে ভাড়ার সীমা।
ইন্ডিগোর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রকে দুষলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মোটা অঙ্কের নির্বাচনী চাঁদা পেয়েছে বলেই চুপ রয়েছে কেন্দ্র। চাঁদার জন্য যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে মোদী সরকার আপস করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, রাহুল ভাটিয়া এবং তাঁর সংস্থা ইন্টার গ্লোব মোট ৫৬ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিল নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে। এর মধ্যে বিজেপি একাই ৩১ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। কংগ্রেস মাত্র ৫ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। এমনকী বিমান সংস্থাগুলি যে সময়ে কোভিড-লকডাউনের জন্য আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল, তখনও ইন্ডিগো চারটি রাজনৈতিক দলকে মোট ৫৬ কোটি টাকা চাঁদা দেয়। কংগ্রেসের এই অভিযোগ রীতিমতো গুরুতর।
যদিও কেন্দ্র এখন ইন্ডিগো নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে। ডিজিসিএ প্রাথমিকভাবে মনে করছে, কেন্দ্রের নতুন বিধি আগে থেকেই সংস্থাকে জানানো হয়েছিল। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল ইন্ডিগোর। তবে সংস্থা সেটা করেনি। সেকারণেই এই অব্যবস্থা এবং মানুষের ভোগান্তি। কেন আগে থেকে পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত করা হল না, সেই প্রশ্ন তুলে ইন্ডিগোকে নোটিস দিয়েছে ডিজিসিএ। শোনা যাচ্ছে ইন্ডিগো-কে একাধিক স্তরে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। সংস্থার উপর মোটা অঙ্কের জরিমানা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যে পরিমাণ উড়ান চালানোর অনুমতি তাঁদের দেওয়া হয়েছে, সেটা আরও কমানোর ভাবনা রয়েছে কেন্দ্রের।
Advertisement



