পহেলগামে জঙ্গি হামলার জেরে দেশজুড়ে জঙ্গি দমনের উদ্যোগ শুরু করেছে ভারতীয় সেনা বাহিনী ও পুলিশ-প্রশাসন। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা যেসব জঙ্গিদের বাড়ি রয়েছে, সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের বাড়িঘর। ভারত-পাক সীমান্তে চরম উত্তেজনা। যেকোনও মুহূর্তে দুই দেশের মধ্যে গুলি বিনিময় বা যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য এইসব সীমান্ত এলাকা থেকে কাশ্মীরবাসীদের উপযুক্ত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এই পরিস্থতিতে উপত্যকার সাধারণ মানুষের হয়ে মুখ খুললেন জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। নিরপরাধ কাশ্মীরিরা যেন হেনস্থার শিকার না-হন, এ বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রথমে কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহেবুবা সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি কেন্দ্রকে সতর্কভাবে পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, জঙ্গি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সংবেদনশীল হতে হবে। দেখতে হবে সাধারণ নিরাপরাধ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এর পর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহও সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্টে লেখেন, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হোক। তাদের প্রতি কোনও দয়া দেখানো চলবে না। কিন্তু নিরীহ সাধারণ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
প্রসঙ্গত পহেলগাম কাণ্ডের পর কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। এমনকি ন’জন জঙ্গির বাড়ি ধ্বংসও করেছে সেনাবাহিনী। জানা গিয়েছে, জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত ওই ন’জন তাদের পরিবারের সঙ্গে ওইসব বাড়িতে থাকতো। উল্লেখ্য, জঙ্গি আদিল হুসেন ঠোকরের মা শাহজাদা বানু তাঁর ছেলের উদ্দেশে আফসোস করে বলেন, ‘তুই আত্মসমর্পণ কর, যাতে বাড়ির অন্য লোকেরা বেঁচে থাকতে পারে।’
এরকম বাড়ি ভাঙার এবং যথেচ্ছ ধরপাকড়ের ঘটনার কথা উল্লেখ করে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি লেখেন, হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গিদের বাড়ির সঙ্গে সাধারণ মানুষেরও বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, পহেলগামে জঙ্গি হানার প্রতিবাদে বহু কাশ্মীরি মোমবাতি হাতে মিছিল করেছেন। সেখানে তাঁরা স্লোগান দিয়েছেন, ‘আমরা ভারতীয়’ এবং ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্থানীয় মসজিদগুলি থেকেও তার আহ্বান জানানো হয়। অনেকেই মনে করছেন, বহু বছর কাশ্মীরে এই দৃশ্য দেখা যায়নি। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ সমাজ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং নিরীহ মানুষকে এইভাবে হত্যা করার প্রতিবাদে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।’ তাঁর আবেদন, সরকার সংবেদনশীলভাবে পদক্ষেপ নিক। নিরাপরাধ কাশ্মীরিরা যেন হেনস্থার শিকার না হন।