তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শনিবার নতুন ইতিহাস গড়লেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। দেশের একমাত্র অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা অষ্টমবার বাজেট পেশ করলেন তিনি। প্রতিবছরই বাজেট পেশের দিন সবার লক্ষ্য থাকে তাঁর নজরকাড়া শাড়ি এবং অবশ্যই সাজসজ্জায়। তবে এবার টানা অষ্টমবার বাজেট পেশে নতুন রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি কী সাজে ধরা দেবেন তিনি তা নিয়ে সবারই আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। এবারও তিনি ছিলেন অনন্য। ক্রিম রঙের মধুবনী শাড়িতে ঝলমলে দেখিয়েছে দেশের বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রীকে। শাড়িতে সোনালি সুতোর কাজ, যেখানে নক্সায় ফুটে উঠেছে মাছের মোটিভ। ক্রিম রঙা শাড়ির সঙ্গে ছিল লাল ব্লাউজ।হাতে সোনার বালা, গলায় চেন আর কানের দুলে ছিমছাম সাজ।চিরাচরিত ‘বহি-খাতা’-র বদলে এবার হাতে ছিল লাল রঙের ট্যাব। এই ট্যাবের সাহায্যেই বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
অষ্টম বাজেট পেশের দিন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের পরনের এই মধুবনী শাড়িটি তাঁকে ভারতের পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত দুলারি দেবী উপহার দিয়েছিলেন। মিথিলা আর্ট ইনস্টিটিউটে একটি নির্মলা একটি ঋণ প্রকল্পের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন, তখনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় দুলারি দেবীর। সেদিন অর্থমন্ত্রী মধুবনী শিল্প পরিদর্শন করেন এবং দুলারি দেবীর সঙ্গে বিহারের মধুবনী শিল্পকলা নিয়ে মতবিনিময় করেন। দুলারি দেবী নির্মলাকে এই শাড়িটি উপহার দিয়ে বাজেটের দিন পরার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শিল্পীর সেই বাসনা পূর্ণ করে শিল্পের মর্যাদা দিলেন নির্মলা।
বিহারের মিথিলার নিজস্ব শিল্পকলা মধুবনী। শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে প্রকৃতি ও ভারতীয় পুরাণের গল্পগাথা ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা। এই শাড়ি তার শিল্পকার্য অনুযায়ী বেশ উঁচু দরের। দামেও বটে, কদরেও। মহিলাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছে এই শিল্পকলার শাড়ি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পরনের শাড়িটি পদ্মশ্রী প্রাপ্ত দুলারি দেবীরই তৈরি। ২০২১ সালে পদ্ম সম্মানে ভূষিত হন দুলারি দেবী।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট প্রস্তাব পেশের এক-এক বছরে ছিল এক-এক রকমের শাড়ি। প্রতিবছরই বাজেট পেশের দিন তাঁর পরনের শাড়ি ভারতীয় সংস্কৃতি, হস্ত ও কুটির শিল্প ও কৃষ্টির পরিচয় দেয়, যার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। অনেকে আবার বলে থাকেন তাঁর শাড়িতেই নাকি ধরা পড়ে বাজেটের প্রকৃতি।
২০২৪-এর জুলাইয়ে সীতারমনের পরনে ছিল ক্রিম রঙের মঙ্গলগিরি শাড়ি। অন্ধ্রপ্রদেশের এই শাড়িতে ছিল লালচে-বেগুনি রঙের পাড়, সঙ্গে সিল্কের ব্লাউজ। মঙ্গলগিরি শাড়ির সঙ্গেই সেবার বাজেটেও ছিল এনডিএ-র শরিক দল তেলুগু দেশম পার্টির রাজ্যের জন্য বিশেষ ব্যয়বরাদ্দ। সীতারামন ঘোষণা করেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পোলাবরম সেচ প্রকল্পের টাকা দেবে কেন্দ্র এবং তা সম্পূর্ণ করবে। অন্ধ্রের সেচপ্রকল্পে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এর আগে ২০২৪ সালেই অন্তর্বর্তী বাজেট পেশের সময় সীতারমনের পরনে ছিল তসরের উপর তুঁতের সঙ্গে সাদা সুতোর কাঁথা স্টিচের শাড়ি। সঙ্গে সুতোর কাজেরই মানানসই ব্লাউজ। গোটা শাড়ি জুড়ে ছিল লতাপাতা আঁকা। মূলত বাংলার শান্তিনিকেতনের দিকে কাঁথা স্টিচের এই শাড়ি তৈরি হয়। কাঁথা শিল্প বাংলার এক সূচি শিল্প, যা সাধারণত তসর সিল্কের উপর হাতে সেলাই করে তৈরি হয়। নির্মলা সীতারামন এই শাড়ি পরে এই শিল্পেরই প্রসার ও জনপ্রিয়তা তুলে ধরেন। নীল শাড়ি পরার কারণ হিসেবে অনেকে ব্যাখ্যা করে থাকেন, সেবার সরকারের জলসম্পদ, জলজ উৎপাদন এবং মৎস্য উৎপাদনকে চাঙ্গা করার প্রকল্প ছিল। মৎস্য বিভাগকে ২৫৮৪.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব এনেছিলেন অর্থমন্ত্রী, যা তার আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি এবং সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল।
২০২৩ সালে নির্মলা পরেছিলেন মেরুন রঙের সিল্কের শাড়ি। কর্নাটকের ধারওয়াড় এলাকার ইল্কাল সিল্ক শাড়ি। কালো-সোনালি পাড়ের শাড়িটিতে কাসুটি কাজ করা ছিল। এই শাড়িও পুরোপুরি হাতে বোনা তাঁতে তৈরি হয়। উল্লেখ্য, সীতারামন স্বয়ং কর্নাটক থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সদস্য। এই শাড়িতে রথ, ময়ূর এবং পদ্মফুল আঁকা ছিল।
২০২২ সালে নস্যি এবং সাদার মিশেলে বোমকাই শাড়ি পরেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ওড়িশার গঞ্জাম জেলার তাঁতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই শাড়ি পরেছিলেন সীতারমন। ২০২১ সালে অফ হোয়াইট পচামপল্লি, ইক্কত স্টাইলের সিল্ক পরে দেখা যায় নির্মলাকে। হায়দরাবাদের পচমপল্লি গ্রামের হাতে বোনা তাঁতে তৈরি হয় এই শাড়ি। ২০২০ সালে হলুদ এবং নীল সরু পাড়ের সিল্ক শাড়ি পরেন অর্থমন্ত্রী। হলুদ রঙ সমৃদ্ধির প্রতীক, দেশের গৌরবময় ঐতিহ্য- ও সমৃদ্ধ শিল্প-সংস্কৃতির পরিচায়ক ছিল তাঁর এই শাড়ি। ২০১৯ সালে প্রথমবার সংসদে বাজেট পেশ করেন নির্মলা সীতারমন। গাঢ় গোলাপি রঙের সঙ্গে সোনালি পাড়ের মঙ্গলগিরি সিল্ক ছিল নির্মলার পরনে।
চলতি বছরেই বিহারে নির্বাচন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সেই কারণেই এবার বেছে নিয়েছেন মধুবনী শাড়ি, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।