আগামী সপ্তাহে ব্রাজিলে ব্রিকস সম্মেলন হতে চলেছে। আন্তর্জাতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ৬ ও ৭ জুলাই ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে বসবে ব্রিকস সম্মেলন। সেই সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে প্রথমে ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এরপর আরও ৫ নতুন সদস্য দেশ যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে সদস্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-এ। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। জানা গিয়েছে, এই সফরে ব্রাজিলের পাশাপাশি ঘানা, ত্রিনিদাদ, আর্জেন্তিনা ও নামিবিয়ায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২ জুলাই দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৯ তারিখে দেশে ফেরার কথা তাঁর।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর মূলত দু’টি লক্ষ্য মাথায় রেখে। একটি হল সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বাকি দেশগুলিকে একত্রে সম্মিলিত বার্তা দেওয়া। দুই, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, নামিবিয়ার মতো দেশগুলি থেকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের জোগান নিশ্চিত করা। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরই পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানাতে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল ভারত। এবার এই বিষয়টি ব্রিকস সম্মেলনেও তুলতে চাইছে দিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের একাধিক সূত্রে খবর, রিও ডি জেনেরিওর শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের অন্যতম লক্ষ্য হল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করানো। সেদিক থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফর চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে। এসসিও সম্মেলনের অসমাপ্ত কাজ ব্রিকস সম্মেলনে পূরণ করতে চায় ভারত।
গত সপ্তাহে চিনের কুইংদাওতে অনুষ্ঠিত এসসিও সম্মেলনের ঘোষণায় পহেলগামের হত্যাকাণ্ড এবং সেই হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে নিন্দার কোনও কথা স্থান পায়নি। ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করে ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। পাকিস্তান ভারতের প্রস্তাবের জোরালো আপত্তি তুলেছিল। তার জেরে ভারতের প্রতিনিধি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেননি। দিল্লি এবার আশাবাদী, সম্মেলনের যৌথ ঘোষণাপত্রে পহেলগাম কাণ্ডের নিন্দা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপের কথা বলা হবে। এই প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (অর্থনীতি) দাম্মু রবি জানান, দিল্লি আশাবাদী যে, ব্রাজিলের সভাপতিত্বে ব্রিকস সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারতের পদক্ষেপের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে ব্রিকস-এর অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের কোনও মতপার্থক্য নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিদের হাতে ২২ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করাতে পারেনি দিল্লি। পাকিস্তান যেভাবে ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে তা তুলে ধরতে ৩২টি দেশে সংসদীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু কোনও দেশই পাকিস্তানের নিন্দায় মুখর হয়নি। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রেও ব্রাজিলের সঙ্গে বোঝাপড়া আরও দৃঢ় করতে পারে ভারত।
এছাড়াও নামিবিয়া, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল এই তিনটি দেশেই লিথিয়াম, গ্রাফাইটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ভান্ডার রয়েছে। এই তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে খনিজগুলির জোগান নিশ্চিত করতে কথা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে সোনা আমদানির ক্ষেত্রে ঘানার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল ভারত। প্রসঙ্গত, এই দেশে প্রায় তিন দশক পর কোনও প্রধানমন্ত্রী সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে ঘানার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতি কমাতে সে দেশে নতুন কোনও বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে খবর, মোদীর এই সফরে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তেল, গ্যাস, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হবে।
ব্রিকস সম্মেলনে চিন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে শি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দেবেন না। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অথবা বিদেশ মন্ত্রী প্রতিনিধিত্ব করবেন। পাকিস্তান ব্রিকসের সদস্য নয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রাজিলে ব্রিকস সম্মেলনের মঞ্চকে ভারত কতটা কাজে লাগাতে পারে সেদিকে তাকিয়ে কূটনৈতিক মহল। ফলে মোদীর এই সফর চ্যালেঞ্জিং বলেই মনে করা হচ্ছে।