সিপিআই ছেড়ে ধরলেন রাহুলের হাত কংগ্রেস ছাড়া বাঁচবে না দেশ: কানহাইয়া

২০১৯-এর লােকসভা নির্বাচনের আগে সিপিআইয়ে যােগ দিয়ে বেগুসরাই কেন্দ্রে বিজেপির গিরিরাজ সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন কানহাইয়া।

Written by SNS Delhi | September 29, 2021 5:59 pm

সিপিআই ছেড়ে রাহুলের হাত ধরলেন কানহাইয়া (Photo:SNS)

কংগ্রেসে যােগ দেওয়ার পর শতাব্দী প্রাচীন এই দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন কানহাইয়া কুমার। উল্লেখ্য, ২০১৯-এর লােকসভা নির্বাচনের আগে সিপিআইয়ে যােগ দিয়ে বেগুসরাই কেন্দ্রে বিজেপির গিরিরাজ সিংয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন কানহাইয়া। তাকে ঘিরে বাম তথা বিরােধী শিবিরে বিপুল উন্মাদনা, প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে উঠলেও, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কানহাইয়া কুমার বড়সড়াে ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান।

মঙ্গলবার শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেস দলে যােগ দিয়ে কানহাইয়া বলেন, ‘এটা শুধু পার্টি নয়, এটা একটা ভাবনা। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দল কংগ্রেস। আমি গণতান্ত্রিক শব্দটার উপর জোর দিচ্ছি কারণ আমি একা নই, অনেকে মনে করেন দেশ কংগ্রেস ছাড়া বাঁচবে না। তবে কি কানহাইয়ারও সিপিআইতে দমবন্ধ হয়ে আসছিল?

সে কারণেই তিনি রাহুল গান্ধির সঙ্গে চলতি মাসের প্রথম দিকে দেখা করেছিলেন। অবশেষে জল্পনা সত্যি করে এদিন কংগ্রেসের হাত ধরলেন কানহাইয়া। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মােদি সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে গােটা দেশের নজর কেড়েছিলেন কানহাইয়া।

দলিত নেতা মেভানির আত্মপ্রকাশ হয় ২০১৭-র গুজরাত বিধানসভা ভােটে বিজেপির দাপট, আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যুবশক্তির মুখ হয়ে ওঠা হার্দিক পটেল, অল্পেশ ঠাকুরের সঙ্গে। সেবার উত্তর গুজরাতের বাদাম বিধানসভা কেন্দ্র জয়ী হন তিনি।

এদিন গুজরাতের দলিত নেতা তথা নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেবানিরও কানহাইয়ার সঙ্গেই কংগ্রেসে যােগ দেওয়ার কথা ছিল। যদিও তা সম্ভব হয়নি। তবে কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে জিগনেশ বলেন, আমি নির্দল বিধায়ক। কোনও দলে যােগ দিলে হয়তাে বিধায়ক পদে থাকতে পারব না।

কিন্তু বিধায়ক হিসেবে না হােক, আদর্শের দিক থেকে আমি কংগ্রেসের শরিক। আসন্ন গুজরাত বিধানসভা ভােটে কংগ্রেসের প্রতীইে লড়ব। পাঞ্জাবে দলিত চরণজিত চন্নিকে মুখ্যমন্ত্রী করার পর জিগনেশও দলে এলে দলিতদের কাছে নতুন বার্তা যেত কানহাইয়া, জিগনেশের মতাে তরুণ নেতা কংগ্রেসে এলে জাতীয় রাজনীতিতে এই বার্তা দেওয়া যাবে, যুবসমাজের কাছে কংগ্রেসের আবেদন গ্রহণযােগ্যতা কমেনি।

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সুস্মিতা দেব, জিতিন প্রসাদ, প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর মতাে তরুণ প্রজন্মের বেশ কয়েকজন কংগ্রেস ছাড়ায় যে ধাক্কা লেগিছেল, তা পুষিয়ে দেওয়া যাবে কানহাইয়া, জিগনেশের মতাে মুখ অন্তর্ভুক্ত হলে।

এতদিন কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে নিদেনপক্ষে তৃণমূলে যােগ দেওয়ার হিড়িক দেখা গিয়েছিল কংগ্রেসের দলত্যাগী নেতাদের মধ্যে। অনেকদিন পর উলটপুরান ঘটল। বিজেপি থেকে না হলেও, বামেদের থেকে কংগ্রেসে অনেকদিন নাম রয়েছে এমন নেতার যােগদান দেখা যায়নি।

সেই ঘটনাই ঘটল এদিন রাহুল গান্ধির হাত ধরে। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝােতা রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। এ ক্ষত্রে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ছিল সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

কিন্তু সেই বামেদের শরিক দল সিপিআই ছেড়ে অবশেষে কংগ্রেসকেই আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিল কানহাইয়া কুমার। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্রিগেড়ে কানহাইয়া কুমারের আসার কথা শােনা গিয়েছিল।

কিন্তু সেদিনও তিনি আসেননি। সলতেটা অনেকদিন ধরে পাকাচ্ছিল। অবশেষে অনেকদিন পর বড়সড় কোনও তরুণ বাম নেতার অভিষেক হল কংগ্রেসে। এ যেন ভাড়া বাড়ি পাল্টানাের মতাে ব্যাপার। সিপিআই থেকে কংগ্রেসে যাওয়ার আগে পুরনাে দলের বিহার রাজ্য দফতর থেকে এসি মেশিন খুলে নিয়ে গেলেন কানহাইয়া কুমার।

মঙ্গলবারই তার ও জিগনেশ মেবানির আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যােগ দেওয়ার কথা ছিল। সেই জল্পনা সত্যি করে এদিন কংগ্রেসেই যােগ দিলেন কানহাইয়া কুমার। তার সঙ্গেই যােগ দেন গুজরাতের নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেবানিও।

যদিও সিপিআই নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত ছিল দল ছাড়বেন না কানহাইয়া। কানহাইয়া যােগ দেওয়ার আগের মুহূর্তেও দলের রাজ্য সম্পাদক বলেছিলেন, “আমি এখনও আশাবাদী কানহাইয়া কংগ্রেসে যােগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বদলাবেন। কারণ কানহাইয়া একজন বামপন্থী মনােভাবাপন্ন মানুষ। এই ধরনের মানুষ নিজের আদর্শে অটল থাকলে, সেটাই স্বাভাবিক।”

শহিদ ভগৎ সিংয়ের জন্মবার্ষিকীতে কানহাইয়াদের কংগ্রেসে স্বাগত জানান কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধি। রাহুলের উপস্থিতিতেই কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন তরুণ এই দুই নেতা।