• facebook
  • twitter
Wednesday, 6 August, 2025

কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশী যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ল কপ্টার, মৃত ৭

কেদারনাথ ধাম থেকে গুপ্তকাশীর দিকে যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ল হেলিকপ্টার। ওই কপ্টারটিতে পাইলট-সহ মোট ৭ জন ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

কেদারনাথ ধাম থেকে গুপ্তকাশীর দিকে যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ল হেলিকপ্টার। কপ্টারটিতে পাইলট-সহ মোট ৭ জন ছিলেন। আরোহীদের মধ্যে ছিল এক শিশুও। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। উত্তরাখণ্ড পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) নীলেশ ভার্নে জানিয়েছেন, এই দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কী কারণে এই দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, হেলিকপ্টারটিতে থাকা ৬ জন যাত্রীর মধ্যে পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং একজন শিশু। যাত্রীরা উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও কপ্টারে ছিলেন এক পাইলট। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, কপ্টার দুর্ঘটনার তদন্ত হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে, ডিজিসিএ ইতিমধ্যেই চারধামে হেলিকপ্টার পরিষেবা স্থগিত দিয়েছে।

উত্তরাখণ্ড প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেদারনাথ ধাম থেকে যাত্রীদের তুলেছিল ওই কপ্টার। সবাইকে নিয়ে গুপ্তকাশী ফিরছিল। কেদারনাথ উপত্যকার আবহাওয়া গত কয়েক দিন ধরেই খারাপ রয়েছে। এর জেরেই কপ্টারটি রাস্তা হারায় এবং ভেঙে পড়ে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।

আরেকটি সূত্রের খবর, রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হেলিকপ্টারটি কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশীর উদ্দেশে টেক অফের কিছুক্ষণ পরেই ভেঙে পড়ে। সূত্র জানিয়েছে, আরিয়ান অ্যাভিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের হেলিকপ্টারটি কেদারনাথ যাওয়ার পথে গৌরীকুণ্ড এবং ত্রিযুগীনারায়ণের মধ্যে ভেঙে পড়ে। এরপরই আগুন ধরে যায় কপ্টারটিতে।

রুদ্রপ্রয়াগ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আধিকারিক নন্দন সিং রাজওয়ার বলেন, ‘খারাপ আবহাওয়ার কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকায় গৌরীকুণ্ডের জঙ্গলের উপরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৬ জন তীর্থযাত্রী এবং এক পাইলট রয়েছেন।’

মৃতদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। ২ বছরের শিশুকন্যা-সহ তার বাবা ও মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা মহারাষ্ট্রের ওয়ানির বাসিন্দা। মৃতদের নাম রাজকুমার জয়সওয়াল, শ্রদ্ধা জয়সওয়াল এবং তাঁদের শিশুকন্যা কাশী রাজকুমার জয়সওয়াল। রাজকুমার এবং শ্রদ্ধা তাঁদের মেয়েকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডে গিয়েছিলেন।

হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন রাজবীর সিংহ চৌহানের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা রাজবীর ভারতীয় সেনায় কর্মরত ছিলেন ১৫ বছর। লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদ থেকে অবসর নিয়ে ২০২৪ সাল থেকে কেদারনাথে একটি বেসরকারি হেলিকপ্টার পরিষেবা সংস্থায় যোগ দেন তিনি।

সমাজমাধ্যমে ভেঙে পড়া কপ্টারের কিছু ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, কপ্টারের পিছন দিকের লেজের অংশ ভেঙে নীচের দিকে বেঁকে রয়েছে। মাথায় ঘুরছে ব্লেড। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক স্টেটসম্যান। প্রসঙ্গত, কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশীর মধ্যে যাত্রী পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হেলিকপ্টার। কেদারের পুণ্যার্থীরা অনেকেই কপ্টার ব্যবহার করেন।

এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার খবর খুবই দুঃখজনক। রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধারকারী দল উদ্ধার অভিযান চালায়। সমস্ত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমি বাবা কেদারের কাছে প্রার্থনা করি।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক, রবিবার সকালে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ- গৌরীকুণ্ড-গুপ্তকাশী থেকে আরও একটি দুর্ঘটনার খবর এসেছে। এক শিশু এবং এক পাইলট সহ ৭ জনকে নিয়ে ভেঙে পড়েছে একটি হেলিকপ্টার।’

উল্লেখ্য, চলতি বছর মে মাসে উত্তরকাশীর গঙ্গানির কাছে ভেঙে পড়ে একটি হেলিকপ্টার। দেরাদুন থেকে গঙ্গোত্রী ধাম যাওয়ার পথে ঘটেছিল সেই দুর্ঘটনা। ওই ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং একজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন। গত ২ মে কেদারনাথের দরজা পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর এই নিয়ে পঞ্চমবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ল তীর্থযাত্রীদের হেলিকপ্টার।

এদিকে গত ১২ জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইক যাওয়ার পথে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিমানটি সামনের বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খায় এবং প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। বিমানে ২৪২ জন আরোহীর মধ্যে ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা সবমিলিয়ে অন্তত ২৭৯। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার উত্তরাখণ্ডে কপ্টার ভেঙে মৃত্যু হল ৭ জনের।