শান্তির জন্য প্রার্থনা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান হিংসার ঘটনার মধ্যেই দেশে সম্প্রীতি ও সুরক্ষার জন্য রবিবার একটি বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছে ইসকন।ইসকন বিশ্বজুড়ে তাদের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘এই রবিবার, ১ডিসেম্বর বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে ইসকনের ভক্ত এবং বাংলাদেশের সমস্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য।’ ইসকনের সদস্যদের প্রার্থনা, ‘বাংলাদেশের সমস্ত ভক্ত এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা এবং বর্তমান সামাজিক উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক এবং বাংলাদেশের মাটিতে স্থায়ী সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হোক।’
ইসকন-এর যোগাযোগ মন্ত্রী অনুত্তমা দাস বলেন, ‘ইসকন একটি শান্তিপূর্ণ সংগঠন। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, কিছু লোক যারা ইসকনকে ভালোভাবে জানে না, তারা আমাদের এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।’ অনুত্তমা দাস আরও বলেন, ‘ইসকন-এর সমর্থনে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’
সম্প্রতি ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সে দেশের হাই কোর্টে মামলা করে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তা খারিজ করে দেয় আদালত। এদিকে চিন্ময়-সহ ১৭ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এক মাসের জন্য ‘ফ্রিজ়’ করার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের তদারকি সরকার। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমসূত্রে খবর, ইসকনের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠছে বিশ্বজুড়ে। ইসকনের প্রাক্তন সদস্য চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে । আগামী বুধবার তাঁকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করানোর কথা। চিন্ময়ের গ্রেফতারির পর থেকেই প্রতিবাদ আরও জোরালো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওপার বাংলায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য রবিবার দেশে দেশে শান্তিপ্রার্থনা এবং কীর্তনের আয়োজন করছে ইসকন। ভারত, বাংলাদেশ-সহ এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইসকনের মন্দিরের ভক্তদের ইসকন মন্দিরে শান্তিপ্রার্থনায় যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ইসকন।
যদিও বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য, দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদে রয়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের ‘হস্তক্ষেপ’ পছন্দ করছে না মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্রপুঞ্জেও বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন ভাবে ধর্ম পালন করার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য।
এদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও বলেছে বিদেশ মন্ত্রক। ব্রিটেনের সংসদেও বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।