• facebook
  • twitter
Sunday, 27 April, 2025

ভারত শান্তি চাইলেও পাকিস্তান ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ই ফিরিয়ে দিয়েছে: মোদী

ফ্রিডম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মোদীর আলোচনায় উঠে আসে দেশ ভাগের মতো তিক্ত পরিস্থিতির কথাও। মোদীর বক্তব্য, দেশভাগ একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা।

আমেরিকার পডকাস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী। ফাইল চিত্র

আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তান শান্তির বুলি আওড়ালেও আদতে তারা যে শান্তি চায় না, তা বারবার অভিযোগ জানিয়েছে ভারত। বিশেষত গত তিন দশক ধরে ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিরা পাকিস্তানের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জমানায় ভারত-পাকিস্তান বাস পরিষেবা চালু করে বাজপেয়ী যখন মৈত্রীর হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময় কার্গিল দখল করে যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে পাক সেনাবাহিনী। এবার বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি খেদ প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি সম্পর্ক মসৃণ করার চেষ্টা করেও পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সফল হননি।

আমেরিকার পডকাস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী জানিয়েছেন, ভারত সব সময় শান্তি চেয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান তার পরিবর্তে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগেও পাকিস্তানকে বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদী মানসিকতা যে পাকিস্তানের গভীরে গেঁথে রয়েছে, তা গোটা বিশ্ব আজ বুঝতে পারছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিদ্ধ করে মোদী বলেন, এর জন্য শুধু ভারতই নয়, গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেখানেই জঙ্গি হামলা হোক না কেন, কোনও না কোনও ভাবে তার যোগসূত্র মেলে পাকিস্তানে। ৯/১১ হামলার কথাই দেখুন, ওই হামলার মূলচক্রী ওসামা বিন লাদেন। তিনি কোথা থেকে এলেন? তিনি পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।’

প্রসঙ্গত সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমেরিকা সফরের সময়ে এই সাক্ষাৎকারটি নেন ফ্রিডম্যান। প্রায় তিন ঘণ্টার সেই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে রবিবার। সেই সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছেন, ক্ষমতায় আসার সময়ে তিনিও পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার সময়ে বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানকে। তাঁর লক্ষ্য ছিল, যাতে নতুন ভাবে সম্পর্ক শুরু করা যায়। কিন্তু শান্তি ফেরানোর প্রতিটি চেষ্টার বদলে অপর প্রান্ত থেকে ‘বিরোধিতা’ এবং ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ মিলেছে। মোদীর কথায়, ‘এটি ছিল সম্পর্ক মসৃণ করার অর্থাৎ সদিচ্ছার একটি ইঙ্গিত।’ কূটনৈতিক স্তরে এমন ইঙ্গিত গত কয়েক দশকের মধ্যে আর দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করলেও ভারত ‘কাঙ্ক্ষিত ফল’ পায়নি বলেও সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

ফ্রিডম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মোদীর আলোচনায় উঠে আসে দেশ ভাগের মতো তিক্ত পরিস্থিতির কথাও। মোদীর বক্তব্য, দেশভাগ একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। তা সত্ত্বেও ভারত সেই দেশভাগের মতো দুঃখজনক পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে এগোতে শুরু করে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে। তারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ বেছে নেয়নি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, পাকিস্তান নিজেদের মতো থাকবে, সেই সঙ্গে আমাদেরও নিজেদের মতো থাকতে দেবে। কিন্তু তারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে এগোয়নি। বার বার তারা ভারতের বিরুদ্ধে গিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।’

তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানের প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা বিশ্বাসঘাতকতা করলেও সেদেশের সাধারণ মানুষ শান্তির পক্ষে। ভারত পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘আশা করি পাকিস্তানের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা শান্তির পথ বেছে নেবে। আমি বিশ্বাস করি পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও শান্তি চান। কারণ, তাঁরাও এই বিবাদ এবং অস্থিরতার মধ্যে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই অবিরাম চলতে থাকা সন্ত্রাসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, যেখানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, এমনকি নিরীহ শিশুরাও মারা যাচ্ছে।’