নিজেদের দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার কীভাবে সুরক্ষিত করা সম্ভব সেদিকে নজর দিক বাংলাদেশ— পশ্চিমবঙ্গে সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে ঘিরে অশান্তির ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্যের এভাবেই তীব্র প্রতিবাদ জানাল ভারত। নয়াদিল্লির স্পষ্ট বক্তব্য, ‘বাংলাদেশের মন্তব্য অযৌক্তিক। ঢাকায় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে ভারতের উদ্বেগের সঙ্গে তুলনা টানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ শুক্রবার ঢাকার কড়া সমালোচনা করে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতিও জারি করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বাংলা তথা ভারত সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে পদক্ষেপ করার অনুরোধ করা হয়েছিল। এই মন্তব্যের পরই ক্ষুব্ধ দিল্লি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বিবৃতি জারি করে বিদেশ মন্ত্রক। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্যকে আমরা খারিজ করছি। ভারতে যা ঘাটেছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থার তুলনা টানা মিথ্যা প্রচেষ্টা। বাংলাদেশে এই ধরণের অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।
সম্প্রতি কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় বাংলাদেশি যোগ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে দুষ্কৃতীরা সীমান্ত টপকে ওই রাজ্যে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ইউনূস প্রশাসন। সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় বাংলাদেশ জড়িত বলে রটনার চেষ্টা চলছে। আমরা এই অভিযোগ সম্পূ্র্ণ অস্বীকার করছি।’
একইসঙ্গে তিনি ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতকে পরামর্শ দেন। শফিকুল বলেন, ‘আমরা মুসলিমদের উপরে অক্রমণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এই ঘটনার জেরে মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।’
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো প্রসঙ্গে রণধীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ অযাচিত ও অনধিকার মন্তব্য না করে নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার দিকে নজর দিক।’
বাংলাদেশ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হিংসার ঘটনা সামনে আসতে থাকে। তখন হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় সরব হয়েছিল ভারত। বাংলাদেশ সরকারের কাছে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে মোদী সরকার। সন্ন্যাসী চিণ্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ পুলিশ। তাঁর এই গ্রেপ্তারিরও নিন্দা করা হয়।
এপ্রিলে ব্যাঙ্ককে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈকেও বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি ওঠে।