চাঁদের দেশে পাড়ি ভারতের

ইসরাের ঘড়ি মােতাবেক সােমবার দুপুর ঠিক ২-৪৩ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে পাড়ি দিল চন্দ্রযান-২।

Written by SNS Sriharikota | July 23, 2019 1:43 pm

সােমবার দুপুর ঠিক ২-৪৩ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে পাড়ি দিল চন্দ্রযান-২। (Photo: IANS)

অবশেষে এল সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ। ইসরাের ঘড়ি মােতাবেক সােমবার দুপুর ঠিক ২-৪৩ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে পাড়ি দিল চন্দ্রযান-২ । লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ গােলার্ধ, বা চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক। বিশ্বে প্রথম কোনাে মহাকাশযান চাঁদের অন্ধকার দিকে পাড়ি দিচ্ছে, ফলে এই অভিযান নিয়ে গােটা বিশ্বেরই নজর ছিল।

গত ১৫ জুলাই মধ্যরাতে এটির উৎক্ষেপনের দিন ঠিক ছিল। কিন্তু যাত্রা শুরুর ঠিক ৫৬ মিনিট আগে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বাতিল করে দিতে হয়েছিল ৯৭৮ কোটি টাকার এই অভিযান। সে কারণেই ইসরাের দ্বিতীয় চেষ্টার দিকে আরও বেশি করে নজর ছিল মহাকাশ গবেষকদের।

গতকাল সন্ধে (৬-৪০ থেকে) ইসরাের সদর দফতরে চালু করে দেওয়া হয়েছিল কাউন্টডাউনের ঘড়ি। প্রথম অভিযান বাতিল হওয়ার এক সপ্তাহ পরে সফলভাবে মহাকাশে চন্দ্রযান-২ কে পাঠিয়ে দিল ইসরাে। 

ইসরাের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাকাশযানের যাত্রাপথ সরলরেখায় ঘটে না এবং তা একমাত্রিকও নয়। ফলে তার যাত্রাপথ নির্ভর করে বিজ্ঞানীদের তৈরি করে দেওয়া জটিল অঙ্কনির্ভর চলন নির্দেশের ওপর। মুলত সেটিই একটি মহাকাশযানকে সুষ্ঠুভাবে মহাকাশের কক্ষপথে পাঠানাের মূল কথা।

৭ সেপ্টেম্বর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখবে প্রজ্ঞান ও বিক্রম। ৪৩.৪৩ মিটারের জিএসএলভি মার্ক-৩ ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট। ভারতই বিশ্বের চতুর্থ দেশ যারা চাঁদের মাটিতে কোনাে রােভার পাঠাবে।

এদিন চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ সরাসরি দেখার জন্য সােশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ স্ট্রিমিং-এর ব্যবস্থা করেছিল ইসরাে। রকেট যদি সােজাসুজি ওঠে, তাহলে তিন থেকে চার দিনের মতাে সময় লাগে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকতে। কিন্তু ইসরাের কাছে স্যাটার্ন ফাইভের মতাে অত শক্তিশালী রকেট নেই। টানা ১৪ দিন চাদের মাটিতে নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের তথ্য হাতে পাবে ইসরাে।

কাজ শেষ করতে হবে ১৪ দিনেই। কারণ পৃথিবীর সাড়ে চোদ্দ দিন চাঁদের একদিনের সমান। আর ওই সময়টুকুই সােলার সেল সক্রিয় থাকবে স্বয়ংক্রিয় দুটি যানের। সব মিলিয়ে ৫৪ দিন লাগবে চন্দ্রযান-২ এর চাঁদের মাটি ছুঁতে। ৬ সেপ্টেম্বরের বদলে ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদের বুকে বিক্রমকে নামাবে চন্দ্রযান।

অভিযান সাত দিন পিছলেও বিক্রম ও প্রজ্ঞানের চাঁদের বুকে নামা পিছচ্ছে মাত্র একদিন।

শ্রীহরিকোটায় এদিন আকাশ সকাল থেকেই খানিকটা মেঘাচ্ছন্ন ছিল। তবে ইসরাের বিজ্ঞানীরা সকলেই জানিয়েছিলেন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশের জন্য চন্দ্রযান-২ এর গতি রুদ্ধ হবে না, তবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হলে রকেটের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

ইসরাের এই সাফল্যের দিনে বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন ইসরাের চেয়ারম্যান কে সিভান। উৎক্ষেপণের পরেই বাহুবলী রকেট ধীরেধীরে তার গতি বাড়াতে শুরু করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ৪৪ মিটার উঁচু এই দীর্ঘ রকেটকে মহাকাশের দিকে ঠেলে দেয়।

চন্দ্রযানে বসানাে হয়েছে ক্যামেরা। ফলে কীভাবে সেটি উঠে যাচ্ছে, তা একেবারে কেন্দ্রীয় স্থল থেকে প্রত্যক্ষ করতে পারছেন বিজ্ঞানীরা।

জিওসিঙ্কোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক ৩ (জেএসএলভি-৩) ওরফে বাহুবলী ইঞ্জিনের (৬৪০ ট ) মাধ্যমে উৎক্ষেপিত হল অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে।

উল্লেখ্য, গত সােমবারে প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য ওই রকেটকে উৎক্ষেপণ করা যায়নি। সেদিন চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের ঘন্টাখানেক আগে তরল জ্বালানি চালিত রকেটের একটি ভাল্বে ত্রুটি ধরা পড়ে । ভাল্ব থেকে লিক করছিল হিলিয়াম গ্যাস। উৎক্ষেপণের ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে রুখে দেওয়া হয় বাহুবলীর যাত্রা।

ইসরাের এক আধিকারিক জানান, শেষ মুহূর্তে ওই ত্রুটি ধরা না পড়লে ১০০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্নভঙ্গ হতে পারতাে। গুরুতর সমস্যা থাকা সত্ত্বে সৌভাগ্যক্রমে ওই ত্রুটি ধরতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা।

এতদিনের পরিশ্রম জলে চলে যেতে পারতাে। ইসরাের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, প্রযুক্তিগত ত্রুটি সারানাে হয়ে গিয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনাে সমস্যা নেই বলে জানান তারা। তবে, আবহাওয়া খারাপ হলে বেগ পেতে পারে চন্দ্রযান যাত্রা।

বিজ্ঞানীরা জানান, বৃষ্টিতে রকেট উৎক্ষেপণে কোনাে সমস্যা নেই। কিন্তু বজ্রবিদ্যুৎ আবহে ক্ষতি হতে পারে রকেটের। আপাতত শ্রীহরিকোটায় আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল। বাহুবলী রকেটে চড়ে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী তথা ইসরাের প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম সারাভাইয়ের নামে নামকরণ হয় ওই ল্যান্ডারের। এই ল্যান্ডারের সঙ্গে রয়েছে রােভার ‘প্রজ্ঞান’ যে চাঁদ থেকে ছবি ও তথ্য পাঠাতে সাহায্য করবে। চন্দ্রযান-২ সফল যাত্রা হলে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিনের পরেই চাঁদে যান পাঠানােয় ভারত চতুর্থ স্থানে চলে আসবে।

এই প্রােজেক্টে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার কোটি টাকা। যা একটি হলিউড সিনেমার সমান। এমনকী নাসার কোনাে প্রােজেক্টে ২০ গুণ কম খরচে পাড়ি দিচ্ছে চন্দ্রযান-২। বলাই যায়, এমন সস্তায় চাঁদে পাড়ি দেওয়ার প্রথম দিশা দেখাতে চলেছে ভারতই।