• facebook
  • twitter
Monday, 14 July, 2025

মণিপুরে হিংসায় উসকানি

মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং-এর অডিও ক্লিপের ফরেন্সিক রিপোর্ট তলব সুপ্রিম কোর্টের

ফাইল চিত্র

গোষ্ঠী হিংসায় দীর্ণ মণিপুর। কুকি ও মেইতেইদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকায় মাঝেমধ্যেই স্ফুলিঙ্গের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। অশান্ত এই উত্তর-পূর্বের রাজ্যের গোষ্ঠী হিংসায় এবার নাম জড়িয়েছে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের। বীরেন সিং-ই গত বছর মণিপুরের গোষ্ঠী হিংসায় ইন্ধন জুগিয়েছিলেন এমন নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। একটি অডিও ক্লিপ ঘিরে শোরগোল উঠেছে। যাকে ঘিরে কুকিদের দাবি, ওই অডিওতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের নিজের স্বীকারোক্তি রয়েছে।

কুকি গোষ্ঠীর মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। সংগঠনটি বিতর্কিত অডিও ক্লিপের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপের ফরেন্সিক রিপোর্ট তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, ওই অডিও ক্লিপটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে সরকারি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি তথা সিএফএসএল-কে। সিল করা খামে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৪ মার্চ। সোমবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি হয়েছে।

সোমবার মামলার শুনানির শুরুতে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার জানান, যেহেতু সম্প্রতি এন বীরেন সিংয়ের ডাকা একটি ডিনার পার্টিতে তিনি উপস্থিত ছিলেন, তাই তাঁর মামলা থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। তবে মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বিচারপতির ডিনার পার্টিতে থাকা নিয়ে কোনও আপত্তি তোলেননি।

অভিযোগে বলা হয়েছিল, মণিপুরে গোষ্ঠীসংঘর্ষের সময় বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং তাতে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন এবং উসকানিমূলক কথা বলেছিলেন। ট্রুথ ল্যাবের পরীক্ষা করা সেই অডিও টেপ এদিন আবেদনকারীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। ট্রুথ ল্যাবের রিপোর্ট বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠস্বর ৯৩ শতাংশ সঠিক। এই অডিও টেপে শোনা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মেইতেই সম্প্রদায়ের কাউকে রাজ্যের অস্ত্রভাণ্ডার লুটের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং তার পরে যাতে তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করে সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করছেন।

শুনানির শুরু হতেই প্রশান্তভূষণ দাবি করেন, বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রুথ ল্যাব’-এর করা ফরেন্সিক পরীক্ষায় ওই অডিও ক্লিপের কণ্ঠের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের কণ্ঠস্বরের শতকরা ৯৩ ভাগ মিল পাওয়া গিয়েছে। এর পরেই অডিও ক্লিপটি সরকারি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি তথা সিএফএসএল-এর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। অডিওটির আবার ফরেন্সিক পরীক্ষা করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশান্ত ভূষণ আরও জানান, ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এক ব্যক্তি ঘটনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশটি রেকর্ড করেছিলেন এবং পরে তা ফাঁস হয়ে যায়। ভূষণের দাবি, এতেই বোঝা যায় যে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী এই সংঘর্ষে মদত ও উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। ভূষণ আদালতে বলেছিলেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, এই অডিও ক্লিপের গ্রহণযোগ্যতা কতদূর প্রমাণসাপেক্ষ তার তথ্য জোগাড় করে আনতে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী তিনি অডিও অংশটি ট্রুথ ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেই রিপোর্ট তিনি আবেদনের সঙ্গে পেশ করেছেন বলে দাবি করেন।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ঘিরে উত্তপ্ত রয়েছে মণিপুর। মাঝে কিছু দিনের বিরতি থাকলেও গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়