• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

শান্তির পথে আসুন, সব পক্ষকে আবেদন মোদীর

মণিপুরে মোদী, কটাক্ষ বিরোধীদের

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রায় আড়াই বছর পর হিংসা বিধ্বস্ত মণিপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘ ২৮ মাস পর গোষ্ঠীহিংসায় দীর্ণ মণিপুরে গিয়ে সেখানকার সব সংগঠনকে শান্তির পথে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৩-এর ৩মে থেকে ২০২৫-এর ১৩ সেপ্টেম্বর – এই দীর্ঘ সময় ধরে নানা টালবাহানার পর অবশেষে মণিপুরের মানুষকে নিজ মুখে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, সরকার মণিপুরের পাশে রয়েছে। শুধু তাই নয়, মোদী বলেছেন, দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে মণিপুর। মোদী সরকার আগামী দিনে মণিপুরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

২০২৩-এর মে মাস থেকে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে মণিপুর। রক্তাক্ত হয়েছে, মানুষের প্রাণ গিয়েছে, ঘরছাড়া হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়কালে মোদী নীরব থাকায় বার বার বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মোদীকে। অবশেষে শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ মিজোরাম থেকে বিমানে মণিপুরে রাজধানী ইম্ফলে পৌঁছন মোদী। ইম্ফল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মণিপুরের গভর্নর অজয়কুমার ভাল্লা এবং সে রাজ্যের মুখ্যসচিব পুনীতকুমার গোয়েল। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে কুকি অধ্যুষিত চুড়াচাঁদপুরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বাদ সাধে প্রবল বৃষ্টি।

Advertisement

অবেশেষে সড়কপথে ৬৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে চুড়াচাঁদপুরে পৌঁছন মোদী। ভারী বৃষ্টির কারণে সভাস্থলেও জল জমে যায়। দ্রুত জল বার করার কাজে নামতে হয় প্রশাসনকে। তার মধ্যেও সেখানে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। সেখানে আয়োজিত জনসভা থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের কাছে হিংসা বন্ধের আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি সব সংগঠনের কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে শান্তির পথে আসুন। মণিপুরের উন্নতির জন্য ভারত সরকার কাজ করে চলেছে।’ অশান্তির ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্যজনক যে এখানে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ভারত সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি।’

Advertisement

হিংসায় বাস্তুচ্যুত মানুষের থাকার জন্য ২৮০টিরও বেশি ত্রাণশিবির তৈরি করেছে মণিপুর সরকার। তেমনই কয়েকটি ত্রাণশিবির ঘুরে দেখেন মোদী। তিনি বলেন, ‘আমি ঘরছাড়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার বিশ্বাস, মণিপুর নতুন ভোরের অপেক্ষায় রয়েছে। মানুষ শান্তির পথ খুঁজে নিয়েছে। আমি যেসব প্রকল্পের শিলান্যাস করেছি তা মণিপুরের মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন করবে। বিশেষ করে পাহাড়ের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন।’

চুড়াচাঁদপুরের পর ইম্ফলেও শান্তি ফিরিয়ে আনার বার্তা দিয়েছেন মোদী। ইম্ফলেও আশ্রয়শিবিরে গিয়ে ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কুকি-জো অধ্যুষিত মণিপুরের পাহাড়ি এলাকা এবং মেইতেই অধ্যুষিত উপত্যকার মানুষের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলার ডাক দেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মণিপুরের মানুষদের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন। সেই রাজ্যেই হিংসাত্মক ঘটনা ‘অনভিপ্রেত’ বলে উল্লেখ করেন মোদী। ইম্ফলে এদিন তিনি ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের ফাঁকে ইম্ফলে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মীরা। কংগ্রেস ভবনের ঠিক বাইরে এবং চুড়াচাঁদপুরের কাংলা দুর্গের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলের কাছে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ সামাল দিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাজ্য কংগ্রেসের সদর দপ্তরের ভিতরে আটকে রাখার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করে।

মেইতেই এবং কুকি জনজাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষে গত ২ বছরে মণিপুরে গোষ্ঠীহিংসায় ২৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ ঘর হারিয়েছেন। মণিপুরের অশান্তির মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন বীরেন সিং। বর্তমানে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে। কিন্তু এই ২ বছরে অশান্ত মণিপুর নিয়ে নীরব ছিলেন মোদী। বিরোধীরা বার বার দাবি করেছে, কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যাচ্ছেন না? মণিপুর নিয়ে কোনও কথা কেন বলছেন না? ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে বার বার প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি যাননি, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনও আলোচনাতেও বসেননি।

২০২৪ সালের ৩ জুলাই রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে স্বল্প সময়ের বক্তব্যে মোদী দাবি করেছিলেন, মণিপুরে হিংসা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত জুলাইয়ে মোদীর মণিপুর সফরের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। তবে সে বারও তিনি যাননি।

দীর্ঘ সময় পর মণিপুর সফর নিয়ে বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে মোদীর সফরকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বুড়ি ছুঁতে সেখানে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের প্রতি এটা এক ধরনের অপমান।কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কথায়, ওখানে যা ঘটেছে, তা উনিই ঘটতে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে উনি চলতে দিয়েছেন হিংসা, এটাও দুর্ভাগ্যের। ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রীরই এই ধরনের রেকর্ড নেই। মণিপুর কংগ্রেসের সভাপতি কেইশাম মেঘচন্দ্র সিংয়ের দাবি, মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনও আগ্রহ নেই, তাঁর এই সফর শুধু শিলান্যাসের জন্য।

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল মোদীর মণিপুর সফর নিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘ দিন সেখানে সমস্যা চলছে। তবে উনি এখন যাচ্ছেন, তাও ভাল।’ তবে রাহুলের মতে, ‘এখন এটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। এখন আসল বিষয় ভোটচুরি।’

Advertisement