মোদিকে নেহরুর চিন-নীতি বদলের পরামর্শ ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহের

লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষ প্রশ্নে জওহরলাল নেহরু এবং নরেন্দ্র মোদির চিন নীতির সামঞ্জস্য তুলে ধরলেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ।

Written by SNS New Delhi | June 24, 2020 1:47 pm

রামচন্দ্র গুহ (File Photo: IANS)

লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষ প্রশ্নে জওহরলাল নেহরু এবং নরেন্দ্র মোদির চিন নীতির সামঞ্জস্য তুলে ধরলেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ । দুই ভিন্ন মতাদর্শের প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী এই দেশ সম্পর্কে কেমন একই বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি নিয়েছিলেন, তা তুলে ধরেই বিখ্যাত ইতিহাসবিদের পরামর্শ, বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নীতি বদলের সময় এসেছে।

গুহের মতে, মতাদর্শগতভাবে তো বটেই, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহের প্রশ্নে ভারতের প্রথম ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ব্যবধান বিস্তর। তাঁর মতে, সমালোচকদের প্রতি মোদির যে আচরণ, নেহরু কোনও দিনই সে পথে হাঁটতেন না। কিন্তু চিননীতি প্রশ্নে দু’জনের সামঞ্জস্য তুলে ধরতে ১৯৫৪ সালে নেহরুর চিন সফরে কথা টেনে এনেছেন প্রবীণ ইতিহাসবিদ।

বেজিংয়ে বিরাট সভার আয়োজন করেছিলেন মাও জেদঙ এবং চৌ এন লাই। আতিথেয়তায় মুগ্ধ নেহরু ভারতে ফিরে কলকাতার এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘চিনের মানুষ যুদ্ধ চান না। তাঁরা নিজেদের দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে ব্যস্ত। ভারতকে চিনের মানুষ ভালোবাসে এবং এই দেশের সঙ্গে তাঁরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়, আর তাই এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিনে অসাধারণ আতিথেয়তা পেয়েছি আমি।’

তার আগে ২০১৪-এর সেপ্টেম্বরে জিনপিংয়ের ভারত সফরে সবরমতীর ধারে দোলনায় দুলেছেন দুই রাষ্ট্রনেতা। তার পর মে মাসে প্রথম চিন সফরে গিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের গুণগান করেছেন মোদি। আর ২০১৯-এর অক্টোবরে মহাবলীপুরমে মোদি-জিনপিংয়ের ডাবের জল খাওয়া কূটনীতির স্মৃতি তত টাটকা!

গুহের দাবি, মোদি’র ছ’বছরের শাসনকালে জিনপিংয়ের সঙ্গে কমপক্ষে ১৮ বার দেখা করেছেন তিনি। নেহরুর ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই’-এর মতো ‘উহান স্পিরিট’, ‘চেন্নাই কানেক্ট’ স্লোগান তুলেছেন। কিন্তু ১৯৫৯-এর সেপ্টেম্বরে সীমান্তে যে ভাবে ইন্দো-চিন সংঘর্ষ লেগেছিল, ঠিক তেমনই মোদি-জিনপিং ব্রোম্যান্সের পর এপ্রিল থেকে সীমান্তে ঝামেলা শুরু করে চিন। 

গুহের প্রশ্ন, সে সময় আরএসএস নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায় যে ভাবে নেহরুর বন্ধুত্বপূর্ণ চিনা নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন, তেমন মেদির ক্ষেত্রে পারতেন কি? গুহের মতে, মোদির চিননীতি নেহরুর থেকেও অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনিও নেহরুর মতোই ভালোমানুষি দেখানো প্রতিবেশীকে বিশ্বাস করে ধাক্কা খেলেন। 

গুহ মনে করেন, ১৯৬২-এর মতো এখন পুরোদস্তুর যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের আবহে দেশের অর্থনীতি, সামাজিক পরিস্থিতির যা হল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক যে তলানিতে ঠেকেছে, তাতে মোদির কাছে চ্যালেঞ্জটা কঠিন। আর তাই তাঁর প্রামর্শ, কোনও দেশের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কে বিচারে নয়, দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, নীতি ও কঠোর বাস্তব মাথায় রেখে চিন নীতি বদলের কথা ভাবুন।