প্রবল শীতে ঝাড়খণ্ডে ১১তম মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন হেমন্ত

ঝাড়খণ্ডের ১১তম মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন জেএমএম-এর বিধায়ক হেমন্ত সােরেন। তিনি দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন।

Written by SNS Dhanbad | December 30, 2019 4:00 pm

ঝাড়খণ্ডের ১১তম মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন হেমন্ত সােরেন। (Photo: IANS)

ঝাড়খন্ডের মহাজোটের ঝাড়খন্ড মুক্তি মাের্চা (জেএমএম)-এর বিধায়ক দলের নেতা হেমন্ত সােরেন রবিবার রাঁচির মােরাবাদী ময়দানে দুপুর ২:২০ মিনিটে ১১তম মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন। হেমন্ত সােরেন দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন। ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল দ্রোপদী মুর্মু হেমন্ত সােরেনকে শপথবাক্য পাঠ করান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আরও তিন মন্ত্রী শপথ নিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের দলের নেতা তথা পাকুড়-এর কংগ্রেস বিধায়ক আলমগীর আলম, লােহার দাগার কংগ্রেস বিধায়ক রামেশ্বর ওঁরাও, আরজেডি-র বিধায়ক সত্যানন্দ ভােক্তা। সত্যানন্দ ভােক্তা ২০১৪ পর্যন্ত বিজেপি’তে ছিলেন। পরে বিজেপি ছেড়ে আরজেডি’তে যােগ দেন।

উল্লেখ্য, গত ২৩ ডিসেম্বর ঝাড়খন্ড বিধানসভার ফলাফল ঘােষণা হয়। ঝাড়খন্ডের মােট ৮১টি আসনের মধ্যে মহাজোট (আরজেডি, কংগ্রেস ও জেএমএম) পায় ৪৭টি আসন। এর মধ্যে জেএমএম একাই ৩০টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের তকমা পায়। অন্যদিকে বিজেপি পায় মাত্র ২৫টি আসন। ফলে জেএমএম এর সরকার গঠনের রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়।

বিহার থেকে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হিসেবে গঠন হবার পর গত ১৯ বছরে এই নিয়ে ১১জন মুখ্যমন্ত্রী হন। হেমন্ত সােরেন দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন। গত ১৩ জুলাই ২০১৩ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন হেমন্ত সােরেন। ঝাড়খন্ডের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপি’র বাবুলাল মারান্ডি। পরে তিনি বিজেপি ছেড়ে নিজের পার্টি জেবিএম গঠন করেন। এই নির্বাচনে জেবিএম ৩টি আসন পেয়েছে। হেমন্ত সােরেনের সরকারকে বিনা শর্তে বাইরে থেকে সমর্থন দিচ্ছে তারা।

গত ১৯ বছরে ঝাড়খন্ডে তিনবার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। প্রথমবার একমাত্র বিজেপির রঘুবর সরকারই পাঁচ বছর সরকার চালাতে পেরেছিল। সেই কারণে হেমন্ত সােরেনের কাছে সরকার চালানাে একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। এছাড়াও বেশ কিছু ইস্যু আছে যেগুলির ওপর ঝাড়খন্ডের মানুষের নজর থাকবে এই সরকারের ওপর। জেএমএম এর মধ্যে অনেক বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে। হেমন্ত সােরেনের কাছে চ্যালেঞ্জ হিসাবে স্থানীয় নীতি, চাকরির নীতি বদলানাে, স্থানীয়দের ৭৫ শতাংশ সংরক্ষণ দিতে হবে। ২৫ কোটি পর্যন্ত স্থানীয়দের টেন্ডার দিতে হবে। চাষিদের ঋণ মকুব করতে হবে। চাষি শ্রমিকদের সংরক্ষণ ও স্বরােজগারের জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান দিতে হবে। সরকারি চাকরিতে পিছিয়ে থাকাদের সংরক্ষণ ও আদিবাসীদের ২৮ শতাংশ ও দলিতদের ১২ শতাংশ সংরক্ষণ দিতে হবে। পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী করতে হবে। এছাড়াও একগুচ্ছ চ্যালেঞ্জ হেমন্ত সরকারের কাছে থাকবে।

কংগ্রেস, আরজেডি ও জেএমএম-এর মহাজোটের সরকার গঠিত হল। এই তিন দলের নীতি ও সিদ্ধান্ত মেনে হেমন্ত সােরেন সরকার কতটা চ্যালেঞ্জের মুখােমুখি হয়ে সফলতা পাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। রাজনৈতিক মহলের বুদ্ধিজীবীরা এটা মনে করছে।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, উদ্ধব ঠাকরে, শরদ পাওয়ার, পশ্চিবঙ্গের মন্ত্রী মলয় ঘটক, বিধায়ক মইনুল হক সহ অন্যান্য ৩২ জনকে রাজকীয় অতিথি ঘােষণা করেছিল। এর মধ্যে অনেকেই আসেননি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাতেই রাঁচিতে এসে গিয়েছিল। হেমন্ত সােরেনের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। হেমন্ত সােরেনকে শাল দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাগত জানান।

এদিনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উল্লেখযােগ্য উপস্থিতি হেমন্ত সােরেনের বাবা শিবু সােরেন। যিনি জেএমএম-এর কর্ণধার। হেমন্ত সােরেনের মা রুপি সােরেন, কংগ্রেসের রাহুল গান্ধি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশােক গেহলট, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলা, ডিএমকে সভাপতি এম কে স্ট্যালিন, আর নব জেডি’র নেতা তেজস্বী যাদব, ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস, আপ পার্টির এম পি সঞ্জয় সিং, সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, কংগ্রেস নেতা আর পি এন সিং ও অনেকে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর হেমন্ত সােরেন সভামঞ্চ থেকে বেরিয়ে সােজা চলে যান মহাত্মা গান্ধির মূর্তির পাদদেশে। সেখানে তিনি গান্ধিমূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তারপর তিনি সিদো-কানহু পার্কে গিয়ে সিদো-কানহুর মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর মাঝে হেমন্ত সােরেন কচিকাঁচাদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি রাজভবনে যান। সেখান থেকে মন্ত্রী পরিষদের জন্য সচিবালয়ে যান।

হেমন্ত সােরেনের শপথ গ্রহণের দিনকে ‘সংকল্প দিবস’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি সহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, ডিএমকে এম কে স্ট্যালিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে হাজির ছিলেন। হেমন্ত সােরেনকে রাজ্যপাল দ্রোপদী মুর্মু শপথ বাক্য পাঠ করান। পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা আলামগির আলম, রামেশ্বর ওঁরাও, আর জে ডি বিধায়ক সত্যানন্দ ভােক্তা মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সােরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরােধী নেতাদের লক্ষণীয় ঐক্যবদ্ধ উপস্থিতি দেখতে পাওয়া গেল।

রাহুল গান্ধি টুইট করে লেখেন, ‘ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সােরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলাম। নতুন সরকার স্থানীয় জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে নজর দেবে। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখােপাধ্যায়, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন টুইট করে সােরেনকে শুভেচ্ছা জানান।

টাটা ইন্সটিটিউট অফ সােশ্যাল সায়েন্সেস, অক্সফোর্ড ইউনির্ভাসিটির বিশেষজ্ঞ টিম, সােশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার ও পরিবর্তিত প্রচার কৌশল হেমন্ত সােরেনকে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে।