স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)-এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি)-এর সর্বশেষ সংস্কারগুলিতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হবে মাত্র ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং এর ফলে রাজকোষ ঘাটতিতে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিএসটি হার পুনর্গঠনের ফলে সরকারের বার্ষিক মোট আর্থিক প্রভাব ধরা হয়েছিল ৪৮ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রধান খরচ ও বৃদ্ধির সম্ভাবনা এই ক্ষতিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে, ফলে প্রকৃত ক্ষতি হবে যথেষ্ট অল্পই।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জিএসটি কাউন্সিলের ৫৬তম বৈঠকে বিদ্যমান চার-স্তরের কাঠামোর পরিবর্তে একটি সহজ দুই-স্তরের ব্যবস্থা আনা হয়েছে, যেখানে স্ট্যান্ডার্ড হার রাখা হয়েছে ১৮% এবং নিম্ন স্তর ৫%। এর পাশাপাশি নির্বাচিত কিছু পণ্য ও পরিষেবার জন্য ৪০% হারে ডিমেরিট রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এসবিআই জানিয়েছে, এই পুনর্গঠন ব্যাঙ্কিং খাতের উল্লেখযোগ্য উপকার সাধন করবে খরচ দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। এছাড়াও তারা উল্লেখ করেছে যে, ২০১৭ সালে চালু করার সময় কার্যকর জিএসটির হার ছিল ১৪.৪%, তা এখন কমে দাঁড়াবে ৯.৫%-এ।
Advertisement
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রায় ২৯৫টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের করহার ১২% থেকে কমিয়ে ৫% বা শূন্য করা হয়েছে। এর ফলে চলতি আর্থিক বছরে ওই শ্রেণির কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) ২৫ থেকে ৩০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। সামগ্রিকভাবে, ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে হার পুনর্গঠনের ফলে সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি ৬৫ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
Advertisement
এরকম বিস্তৃত সংস্কারের ফলে এর প্রভাব ভারতের প্রতিটি পরিবার ও ব্যবসার উপর পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে চালুর পর থেকে জিএসটি-র সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুনর্গঠন ঘোষণা করেছে জিএসটি কাউন্সিল। ‘নেক্সট-জেন জিএসটি’ নামে পরিচিত এই নতুন ব্যবস্থা জটিল বহু-স্তরের কাঠামোকে ভেঙে এনে দিয়েছে একটি সহজ দুই-হার ব্যবস্থা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, অটোমোবাইল, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পরিষেবায় কর কমিয়েছে।
জীবনবিমা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমায় পুরোপুরি মকুব হবে জিএসটি। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর (ঘটনাচক্রে সে দিন নবরাত্রি) থেকে নতুন হারে জিএসটি প্রযুক্ত হবে বলেও জানান তিনি। তাঁর দাবি কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্যতিক্রম (বিলাসসামগ্রী, নরম পানীয়, সিগারেট, গুটকা-পানমশলার মতো দ্রব্য) ছাড়া আর কোনও ক্ষেত্রেই ৪০ শতাংশ জিএসটি থাকছে না। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে জিএসটি চালুর পর থেকে তাতে পাঁচটি (৫, ১২, ১৮, ২৮ এবং কিছু পণ্যে শূন্য) হার ছিল এতদিন পর্যন্ত। এ বার ১২ এবং ২৮ শতাংশ জিএসটি উঠে গেল।
এই সংস্কার পরিবার, ব্যবসা এবং কৃষকদের জন্য ব্যাপক স্বস্তি আনবে, কারণ কর হার হ্রাস এবং সরলীকৃত দুই-হার কাঠামো প্রযোজ্য হচ্ছে। ৫৬তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের পর বক্তব্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই এই সংস্কার করা হয়েছে। প্রতিদিনের ব্যবহার্য পণ্যে করের হার কঠোর পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হার ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে… শ্রমনির্ভর শিল্পকে যথেষ্ট সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কৃষক এবং কৃষি ব্যবস্থা যেমন উপকৃত হবে, তেমনই উপকৃত হবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও। এছাড়াও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিগুলিকে।’
এসবিআই জানিয়েছে, এই পদক্ষেপটি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘টেকসই উন্নয়নের’ দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। জিএসটি সংস্কারের এই সিদ্ধান্তটি উপভোক্তা, শিল্প এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক এবং স্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, এই জিএসটি কর হার কমাতে রাজ্যের তরফে কতটা ক্ষতি হচ্ছে তার কোনও মূল্যায়ন এখনও করা হয়নি।
Advertisement



