মহারাষ্ট্রে নির্বাচনে ব্যাপকভাবে পরাজিত হওয়ার হওয়ার পর ইভিএম হ্যাকিংয়ের অভিযোগ করে আসছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাঁদের অভিযোগ ছিল রাজ্যের শাসকদল ক্ষমতাসীন মহাযুতি জোট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) হ্যাক করে ভোটে বিপুলভাবে জয়লাভ করেছে। এবার সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কিরণ কুলকার্নি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়।
কুলকার্নি মঙ্গলবার এএনআইকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘ইভিএমে ব্যবহৃত চিপগুলি এককালীন ব্যবহার করা যায়। যার ফলে মেশিনে কারচুপি করা অসম্ভব। আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ইভিএমে হ্যাকিং করা বা কারচুপি করা যাবে না। এর একটি সহজ কারণ আছে। প্রথমত, এটি একটি স্বতন্ত্র মেশিন। কোনও নেটওয়ার্ক বা বাইরের গ্যাজেটের সঙ্গে কোনও সংযোগ নেই। সুতরাং, হ্যাকিং বা টেম্পারিং সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, এতে ব্যবহৃত চিপটি এককালীন প্রোগ্রামেবল, তাই কোনও রিপ্রোগ্রামিং করা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) এমন একটি পদ্ধতিতে কাজ করে, যার মাধ্যমে ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেল (ভিভিপ্যাট) গণনা এবং ইভিএমে প্রাপ্ত ভোটের মিল করে দেখার সুযোগ থাকে। এই পরিসংখ্যানগুলিতে যে কোনও অসঙ্গতি নেই, তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রক্রিয়াটি পালন করা হয়। কুলকার্নি বলেন, চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগে ভিভিপ্যাট স্লিপ এবং ইভিএম ভোটের মাধ্যমে ভোটের সংখ্যার তুলনা করার এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ইভিএম নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ভুল বোঝাবুঝির কোনও প্রয়োজন নেই, যখন ভোট গণনা করা হয় এবং সমস্ত ইভিএমে ভোট গণনা শেষ হয়, তখন ফলাফল ঘোষণার আগে একটি পদ্ধতি থাকে। যা ভারতের নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্ধারিত। পদ্ধতিতে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের সমস্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা সংগ্রহ করে একটি লটারি করা হয়। পর্যবেক্ষক এবং রাজনৈতিক দলের সকল প্রার্থীর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই লটারি হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৫টি ভোটকেন্দ্র নির্বাচন করা হয় এবং ৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ভিভিপ্যাট মেশিন গণনা কেন্দ্রে আনা হয়। সকলের উপস্থিতিতে ভিভিপ্যাট স্লিপ বের করে গণনা শেষ করা হয়। স্লিপ অনুযায়ী, কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন তা গণনা করা হয়। এই সংখ্যাটি ইভিএম-এ দেওয়া ভোটের সঙ্গে মিলে যায়। এটি লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, এই দুটি পরিসংখ্যানে কোনও অসঙ্গতি নেই। এবং মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল।’
এর আগে, মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (সিইও) এস চোকলিঙ্গম মঙ্গলবার মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বৈদ্যুতিন ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বৈধতা সম্পর্কে বিরোধীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন যে, ভোটার-ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রায়াল (ভিভিপ্যাট) স্লিপগুলির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট ইভিএম নম্বরগুলির মধ্যে কোনও মিল পাওয়া যায়নি।
এক বিবৃতিতে, মহারাষ্ট্রের সিইও ব্যাখ্যা করেছেন যে, ভারতের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুসারে, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের এলোমেলোভাবে নির্বাচিত পাঁচটি ভোটকেন্দ্র থেকে ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনা বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, ‘২৩শে নভেম্বর, গণনা প্রক্রিয়া চলাকালীন, গণনা পর্যবেক্ষক বা প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সামনে, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এলোমেলোভাবে নির্বাচিত পাঁচটি ভোটকেন্দ্রের ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনা করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র রাজ্যের ২৮৮টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ১৪৪০টি ভিভিপ্যাট ইউনিটের স্লিপ কাউন্ট সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল ইউনিটের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ চোকলিঙ্গম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ডিইওদের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ভিভিপ্যাট স্লিপ কাউন্ট এবং ইভিএমে কন্ট্রোল ইউনিট কাউন্টের মধ্যে কোনও অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি।”
প্রসঙ্গত ২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর মহা বিকাশ আগাদি (এমভিএ) জোটের অংশীদাররা ইভিএম-এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিজেপির নেতৃত্বে মহাযুতি জোট মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করে, যেখানে বিজেপি ২৮০ সদস্যের বিধানসভায় ১৩২ টি আসন নিয়ে বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে এর সহযোগী-একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে শিবসেনা এবং অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বে এনসিপি যথাক্রমে ৫৭টি এবং ৪১ টি আসনে জয়লাভ করে।
তবে, নির্বাচনে মহা বিকাশ আগাদি (এমভিএ) একটি বড় ধাক্কা খেয়েছে। কারণ এই নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ১৬টি আসন পেয়েছে। এবং তার জোট শরিক শিবসেনা (ইউবিটি) ২০টি আসনে জয়লাভ করেছে। আর এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী) মাত্র ১০টি আসন দখল করেছে।