মোদি-শাহকে ক্লিনচিট দিলেও কমিশনে মতানৈক্য

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযােগের রায় দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের প্যানেলের একজন সদস্য মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন, এই খবর প্রকাশ হতেই কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম শনিবার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, অবশেষে মােদি-শাহের ভীতি এবার কাটতে চলেছে।

Written by SNS New Delhi | May 5, 2019 6:48 am

মোদি এবং অমিত শাহ (Photo: RAVEENDRAN/AFP/Getty Images)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযােগের রায় দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের প্যানেলের একজন সদস্য মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন, এই খবর প্রকাশ হতেই কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম শনিবার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, অবশেষে মােদি-শাহের ভীতি এবার কাটতে চলেছে।

চিদম্বরম একটি টুইটে লিখেছেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের প্যানেলের একজন সদস্য অপর দুই সদস্যের সঙ্গে মােদি-শাহের বক্তব্য নিয়ে ক্লিনচিট দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন এখনও যে বেঁচে আছ তার প্রমাণ দেওয়া শুরু করেছে।

এরপর চিদম্বরম লিখেছে, নির্বাচন কমিশনের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদ মাধ্যমও এবার মােদি শাহের ভীতি কাটিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা শুরু করবে। প্রসঙ্গত, বিরােধীদের অভিযােগ খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং বিরােধীদের তোলা মােদি-শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযােগে দু’জনকে ক্লিনচিট দিয়েছে কমিশন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের বিরুদ্ধে বিরােধী দলগুলির আনা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযােগ তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ সম্প্রতি খারিজ করে দিলেও, সেই রায় কমিশনের  মতৈক্যের ভিত্তিতে হয়নি। সেই রায়ে মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন কমিশনের তিন সদস্যের মধ্যে একজন সদস্য বলে সূত্রের খবরে জানা গেছে।

তবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও বিষয়ে প্রদত্ত রায় মতৈক্যের ভিত্তিতেই হওয়া বাঞ্ছনীয় কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে রায় নিয়ে মতৈক্য না হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়কেই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়।

নরেন্দ্র মােদি এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে অভিযােগ খারিজের যে রায় ঘােষিত হয়েছে, তাতে কিন্তু একজন সদস্যের মিতানৈক্যের কোনও উল্লেখ করা হয়নি। উক্ত সূত্রের খবর, পাঁচটি ক্ষত্রে মােদি এবং অমিত শাহকে অভিযোগ থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে মতানৈক্য দেখিয়েছেন তিন সদস্য বিশিষ্ট প্যানেলের একজন সদস্য বা নির্বাচন কমিশনার।

য়ে তিনজন কমিশনারের প্যানেল নরেন্দ্র মােদি এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযােগ খতিয়ে দেখতে বসেছিলেন, তাঁরা হলেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনলি আরােরা, নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা এবং সুশীল চন্দ্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের পাঁচটি অভিযােগ দায়ের করেছিল বিরােধী দলগুলি।

প্রথম অভিযােগ ছিল, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে দুটি পৃথক নির্বাচনী জনসভায় মােদি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত শহিদ জওয়ানদের নামে ভােট চেয়েছিলেন।

অপর অভিযােগ ছিল রাহুল গান্ধি কেরলের ওয়ানডে লােকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে লড়ার জন্য মনােনয়নপত্র দাখিল করলে রাহুল গান্ধিকে কটাক্ষ করে মােদি মহারাষ্ট্রে তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ওয়ানডে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপস্থিতির জন্য লােকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাহুল উত্তরপ্রদেশের আমেথি ছাড়াও দ্বিতীয় কেন্দ্রটি বেছে নিয়েছে যাতে জয় সুনিশ্চিত করা যায়।

তৃতীয় অভিযােগ ছিল, ওয়ানাড কেন্দ্রকে ঘিরে অমিত শাহের বক্তব্য নিয়ে। নাগপুরে একটি নির্বাচনী জনসভায় অমিত শাহ মন্তব্য করেছিলেন ওয়ানডে একটি মিছিল বেরুলে এটা বলা মুশকিল মিছিলটি ভারতের নাকি পাকিস্তানের।

এইসব অভিযােগে খতিয়ে দেখে রায় দিতে গিয়ে প্রত্যেকটিতে প্যানেলের একজন সদস্য তাঁর বাকি দুই সদস্যের সঙ্গে মতানৈক্য দেখিয়েছেন। এই তিনটি অভিযােগ খতিয়ে দেখে রায় দিতে গিয়ে একজন সদস্য মতানৈক্য দেখালেও দুটি অভিযােগের ক্ষেত্রে রায়ে মতৈক্য ছিল প্যানেলের তিন সদস্যের। এই দুটি ঘটনা হল রাজস্থানে মােদি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন ভারত তার পরমাণু অস্ত্র দীপাবলীর জন্য রাখেনি এবং দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ এক জনসভায় বলেছিলেন পাকিস্তানকে ভারত যথােচিত জবাব দিয়েছে।

বিরােধী দলগুলি ২০১৯ সালের নির্বাচনে মােদি এবং শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযােগ করলেও নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে অস্বাভাবিকভাবে বিলম্ব করেছে বলে বার বার বিরােধীরা নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযােগ এনেছে।

শহিদ জওয়ানদের নামে ভােট চাওয়ার অভিযােগের নিষ্পত্তি করতে কমিশনের লেগেছে ২১ দিন। কমিশন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর গত চার দিনে ১৯টি অভিযােগের নিষ্পত্তি করেছে। এবং কমিশন তাঁদের রায়ের কোনওটাতেই মােদি এবং শাহকে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য সতর্ক পর্যন্ত করেনি বলে অভিযোগ বিরােধীদের।