রাজস্থানে সরকার বাঁচাতে মরিয়া কংগ্রেস

কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের পর এবার কি রাজস্থানে সরকার ফেলতে তৎপর বিজেপি? রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের অভিযোগ সেরকমই।

Written by SNS Jaipur | July 13, 2020 11:03 pm

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। (Photo: IANS)

কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের পর এবার কি রাজস্থানে সরকার ফেলতে তৎপর বিজেপি? রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের অভিযোগ সেরকমই। এদিকে, তাঁকেই টার্গেট করে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট আবার অভিযোগ করেছেন যে, তাঁকে কোনঠাসা করার চেষ্টা চলছে। এতে তিনি এতটাই চটেছেন যে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে অভিযোগ জানাতে ইতিমধ্যে দিল্লিতেও গিয়ে হাজির হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ ১২ জন বিধায়ক।

আবার অপর একটি সূত্রের দাবি, বিজেপির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন সচিন। মাস কয়েক আগেই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের সঙ্গে সঙঘাতে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন কংগ্রেসের আর এক তরুণ জনপ্রিয় নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। এর ফলে রাজ্যের শাসনভারই হারাতে হয় কংগ্রেসকে।

এবার কি তবে রাজস্থানের পালা? যদিও সচিন পাইলট কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর এখনও আস্থা রেখেই চলছেন বলে খবর। কিছু না-হলেও ২৩ জন বিধায়কের সমর্থন তাঁর সঙ্গে রয়েছে বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন সচিন। ১০-১২ জন বিধায়ক তো শনিবারই দিল্লি পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে তাঁরাও নিজেদের সমস্যার কথা জানাবেন।

সূত্রের খবর, তাঁর সঙ্গে কোনও অবিচার হবে না বলে সচিনকে ইতিমধ্যেই আশ্বস্ত করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অধৈর্য হয়ে তিনি যাতে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করেন, সচিনকে সেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাঁর বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার খবর উড়িয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির দাবি, এটা কগ্রেসের অন্দরের কোন্দল।

এদিকে, শোনা যাচ্ছে সচিন অনুগামী বিধায়কদের গুরুগ্রামের আইটিসি গ্রান্ড ও দিল্লির আইটিসি মৌর্যে রাখা হয়েছে। সচিন ও তাঁর অনুগামীদের দীর্ঘ সময় ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে আরও বেশি করে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। যদিও সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ঘুটি সাজাতে শুরু করেছেন অশোক গেহলট। তিনি রবিবার রাত ৯ টায় বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে কংগ্রেসের সব বিধায়ক ও সরকারকে সমর্থন দেওয়া নির্দল বিধায়কদেরও।

সচিনকে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরানোর জন্যও তৎপর হয়েছে গেহলট শিবির। রাজস্থানে উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা কপিল সিব্বাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের দলের জন্য চিন্তিত। আমাদের আস্তাকল থেকে ঘোড়া বেরিয়ে যাওয়ার পরই কি আমরা জেগে উঠব? মধ্যপ্রদেশের পুনরাবৃত্তি কি এবার রাজস্থানে? মুখ্যমন্ত্রী বনাম উপমুখ্যমন্ত্রীর লড়াইয়ে উত্তর ভারতের এই রাজ্যেও ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম কংগ্রেসের।

নিজেদের আনুগত্য প্রকাশের জন্য রবিবার মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের বাসভনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন কয়েকজন মন্ত্রী এবং বিধায়ক। অন্যদিকে, জয়পুর থেকে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটের অনুগামী হিসেবে পরিচিত শিবিরের কয়েকজন বিধায়ক। এর মধ্যে আছে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও।

শনিবারই বিজেপির বিরুদ্ধে রাজস্থানে নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়ার চক্রান্তের অভিযোগ এনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। দল ভাঙানোর জন্য পদ্ম শিবির থেকে কংগ্রেস বিধায়কদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ-সহ নানা সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে বিজেপি।

তাদের পালটা বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রাজ্যের উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। এদিন সকালে জয়পুরে মুখ্যমন্ত্রী গেহলটের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন রাজস্বমন্ত্রী হরিশ চৌধুরী, শ্রমমন্ত্রী তিকারম জুল্লি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রঘু শর্মা-সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং একঝাঁক বিধায়ক।

পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাবুলাল নাগর সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল থেকে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছি এবং তাঁর নেতৃত্বর উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। বিধায়করা গেহলটের নেতৃত্বের উপরে তাঁদের পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন। রাজ্যে কংগ্রেস সরকার ফেলে দেওয়ার কথিত চক্রান্ত নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে গত শুক্রবার গেটলট, সচিন পাইলট এবং শাসকদলের মুখ্য সচেতককে নোটিশ পাঠিয়েছিল রাজস্থান পুলিশ।

যার পরে উত্তর ভারতের ওই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা নেয়। পুলিশের নোটিশ পাঠানোর বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না পাইলট শিবির। এটিকে তাঁরা অপমান হিসেবে দেখছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পুলিশের এই নোটিশ বিশেষ কোনও বার্তাবাহী নয়। আরও অনেকের মতে সচিন এবং কংগ্রেস প্রদেশ সভাপতির কাছেও চিঠি গিয়েছিল।

রাজ্যে সরকার বাঁচাতে খোদ ময়দানে নামতে বাধ্য হয়েছেন রাহুল গান্ধি। রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা দলের তরুণ মুখ সচিন পাইলটকে তিনি দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব মেটাতে রাহুল চেষ্টা চালাচ্ছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে তিনি বিধায়কদের বৈঠক একতে বলেছেন বলে সূত্রের খবর। যার পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার রাত নিজের বাসভবনে পরিষদীয় দলের বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী।