অসমে ১৩টিরও বেশি অবৈধ কয়লাখনি সিল করে দেওয়া হল। অবৈধ র্যাট–হোল খনিগুলি বন্ধ করার পাশাপাশি নামডাং কোলিয়ারির বিট্টু পাহাড় থেকে এই ধরণের হোল খনননের যন্ত্রপাতিও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সিল করে দেওয়া হয় ২টি অস্থায়ী অফিস। এই কয়লাখনিগুলি বৈধ ছাড়পত্র না থাকা সত্ত্বেও কয়লা উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। চলতি মাসের শুরুতে অসমের খনিতে জল ঢুকে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের মত্যুর পর এবার অবৈধ খনি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে অসম সরকার।
পুলিশ এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে শনিবার এই কয়লাখনিগুলি সিল করে দেওয়া হয়। অসম সরকার এবং কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের যৌথ অভিযানে খনিতে কর্মরত ৩ জন শ্রমিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রীতম গগৈ, পুলিশ আধিকারিক জিপি সিং, কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের নর্থ ইস্টার্ন কোলফিল্ড এবং অসম পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থার আধিকারিকরা অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৬ জানুয়ারি মরিগাঁওয়ে অসম মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে অসমের উত্তর–পূর্ব কয়লা অঞ্চলের সমস্ত র্যাট–হোল খনি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই মতোই শনিবার সকালে অভিযান শুরু হয়।ইঁদুর যে কায়দায় গর্ত খোঁড়ে সেই কায়দায় ‘র্যাট-হোল মাইনিং’-এ গর্ত খোঁড়া হয়। খনি থেকে আকরিক উত্তোলনের কাজে একসময় এই পদ্ধতি নেওয়া হত। শাবল, গাঁইতি দিয়ে খুব সঙ্কীর্ণ গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে এগোতে হয় শ্রমিকদের। তবে এই প্রক্রিয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ এই ভাবে খোঁড়া সুড়ঙ্গ অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হয়। ফলে যে কোনও মুহূর্তে ধস নেমে শ্রমিকের মৃত্যু হতে পারে।
২০১৮ সালে মেঘালয়ের এমনই এক অবৈধ কয়লাখনিতে জল ঢুকে পড়ায় মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জন শ্রমিকের। একাধিক দুর্ঘটনার কারণে ‘র্যাট-হোল মাইনিং’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। তার পরেও এই পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়নি। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের নভেম্বরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারার সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধারের নানা চেষ্টা করা হলেও, শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সহায়তায় এই নিষিদ্ধ পদ্ধতির সাহায্যেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
গত ৬ জানুয়ারি অসমের দিমা হাসাওয়ের উমরাংসোর এক অবৈধ কয়লাখনিতে হঠাৎ জল ঢুকে পড়ে। ৩০০ ফুট গভীর খনির প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জল উঠে গেলে ভিতরে আটকে পড়েন কমপক্ষে ৯ জন শ্রমিক। উদ্ধারকারী দলের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ৪ জনের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বাকিদের এখনও খোঁজ মেলেনি।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃত ৪ শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। খনির ভিতরে আটকে থাকা শ্রমিকদের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। শনিবার অসমের খনি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী কৌশিক রাই ওই টাকার চেক শ্রমিকদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন।
প্রীতম গগৈ বলেছেন, অবৈধ খননকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। তদন্ত চলবে।