পৃথিবীজুড়ে ব্রেন-ইটিং অ্যামিবার সংক্রমণে মৃত্যুর হার পৌঁছে গিয়েছে ৯৫ শতাংশে। সেখানে ভারতের কেরালায় জোরদার নজরদারি ও রোগ সনাক্তকরণ ব্যবস্থার ফলে ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা সংক্রমণের হার দেখা গিয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ।
গত বছর কেরলে এই রোগে আক্রান্ত ৩৯ জনের মধ্যে প্রাণ হারান ৯ জন। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন বর্তমানে দু’রকমের অ্যামিবা সংক্রমণ সনাক্ত করা হয়েছে। প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস (পিএএম)। এটি হল এই রোগের অত্যন্ত আগ্রাসী রূপ। এই সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশেরও বেশি। এই বছর কেরলে এই রোগে আক্রান্ত ৭১টি কেসের মধ্যে ৫টি হল প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস। অপর সংক্রমণটি হল গ্রানুলোমাটাস অ্যামিবিক এনসেফালাইটিস (জিএই)। এটি এই রোগের তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়ী রূপ। এই সংক্রমণে ঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত করা গেলে এবং চিকিৎসা করা হলে রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু যে সমস্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাঁদের শরীরে আগে থেকে অন্য জটিল রোগ বাসা বেধেছে তাঁদের প্রাণ বাঁচানো কঠিন।
Advertisement
কেরল স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক ডাক্তার হরিকুমার এস জানিয়েছেন, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৭১টি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন। তিনি আরও বলেন যে, এই অ্যামিবার সংক্রমণ শুধুমাত্র কেরলেই সীমাবদ্ধ নয়। চণ্ডীগড়ের পিজি হাসপাতালে এবং দেশের অন্যান্য জায়গাতেও অনেকগুলি সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে। বেশিরভাগ রাজ্যে ঠিকভাবে পরীক্ষা না হওয়ার দরুণ রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না। কেরলে ভালোভাবে পরীক্ষা হওয়ার ফলে বেশি কেস সনাক্ত হচ্ছে। চলতি বছরে ৭১ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ৩ জন এসেছেন তামিলনাড়ু থেকে এবং ১ জন এসেছেন কর্ণাটক থেকে। কেরলের চিকিৎসকেরা এই রোগ সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারার কারণ হিসেবে দেখছেন মিল্টেফোসিন নামের একটি ওষুধের ব্যবহারকে। তার সঙ্গে রয়েছে মস্তিষ্কের চাপ নিয়ন্ত্রণ, আইসিইউ স্তরের চিকিৎসা, দ্রুত রোগ সনাক্তকরণের ব্যবস্থা। পিএএম-এর সংক্রমণ আটকাতে কেরল ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির মধ্যে এগিয়ে রয়েছে।
Advertisement
এই রোগটি দেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং মস্তিষ্কের টিস্যুকে নষ্ট করে। এর ফলে মস্তিষ্ক ফুলে ওঠে এবং রোগী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণ হারান। এটি একটি বিরল রোগ এবং সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয় শিশু, কিশোর এবং তরুণরা। ‘ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা’র বিজ্ঞানসম্মত নাম নাইগ্লেরিয়া ফোলেরি। এই অ্যামিবা বসবাস করে বদ্ধ এবং মিষ্টি জলে। দূষিত জল নাকের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং এই রোগের সংক্রমণ হয়। এই দূষিত জল পান করলে অবশ্য এই রোগের সংক্রমণ হয় না।
তাই যারা পুকুর বা হ্রদের মিষ্টি জলে সাঁতার কাটেন, ডুব দেন বা স্নান করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কেরল সরকারের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেও এই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে, কারণ জলের উষ্ণতা বাড়লে এই জীবাণুগুলির বংশবিস্তারের প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়। যদিও একটি স্বস্তির বিষয় হল এই সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
Advertisement



