ভোটের আগে ফের রক্তাক্ত বিহার। প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হল বিজেপির কিষাণ মোর্চার নেতা সুরেন্দ্র কেওয়াতকে। শনিবার সকালে পাটনার কাছে একটি মাঠে কাজ করছিলেন তিনি। সেই সময় বাইকে করে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি চালায় দুই আততায়ী। গুরুতর আহত অবস্থায় পাটনা এমসে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি রুদ্ধশ্বাস খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য বিজেপিশাসিত এই রাজ্যে। তিন নিহতের একজন নামী ব্যবসায়ী, একজন বর্ষীয়ান চিকিৎসক ও অন্যজন মুদি দোকানের মালিক। শনিবার ব্যবসায়ী পুটু খানকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেখপুরা গ্রামে বর্ষীয়ান চিকিৎসক সুরেন্দ্র কুমারকে বাইকে করে আসা আততায়ীরা গুলিতে ঝাঁজরা করে দেয়। তার আগে শুক্রবার মুদি দোকানের মালিক বিক্রম ঝাকে গুলি করে খুন করে আততায়ীরা। এই তিনটি ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি।
পরপর এই ধরনের ঘটনায় বিহারের আইনশৃঙ্খলার তীব্র নিন্দা করছে বিরোধীরা। সমালোচনা করছে সরকারপক্ষের জোটসঙ্গীরাও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এলজেপি নেতা চিরাগ পাসওয়ান বলছেন, ‘আর কতগুলো খুনের সাক্ষী থাকবেন বিহারীরা? বিহার পুলিশের দায়িত্বটা কী, তা বোধগম্য হচ্ছে না।’
অন্যদিকে নীতীশ প্রশাসন দায় ঠেলতে চাইছে আরজেডির দিকে। বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী দাবি করেছেন, প্রশাসন সঠিক ভাবেই কাজ করছে। বিহারে কোনও সংগঠিত অপরাধের অস্তিত্ব নেই। তাঁর দাবি, ‘সরকার পদক্ষেপ করছে ঠিকই। আরজেডি এর সঙ্গে জড়িত… যেহেতু ভোট এগিয়ে এসেছে, তাই ওরা চাইছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে।’
এদিকে বিজেপি নেতা খুনের পর থেকেই আততায়ীরা পলাতক। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গিয়েছে, মুখ গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল আততায়ীদের। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। ইতিমধ্যেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পাটনা পুলিশের আধিকারিক কানহাইয়া সিংহ জানিয়েছেন, ‘সুরেন্দ্র কেওয়াত স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে ব্যক্তিগত শত্রুতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সম্প্রতি পাটনায় গুলি করে খুন করা হয় ব্যবসায়ী তথা বিজেপি নেতা গোপাল খেমকাকে। গত ৪ জুলাই পাটনায় নিজের বাড়ির সামনেই গুলি করে খুন করা হয়েছিল খেমকাকে। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত উমেশ রাই সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রাজনৈতিক মহলে স্বভাবতই উত্তেজনা ছড়িয়েছে এই খুনের ঘটনায়। বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। আরজেডি নেতা এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব এক্স-এ পোস্ট করে লিখেছেন, ‘বিজেপি নেতা খুন নিয়ে কী বলব? আর কাকেই বা বলব? এনডিএ সরকারের কেউ কি সত্য শুনতে বা ভুল স্বীকার করতে চান?’
অন্যদিকে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দ্রুত তদন্তে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। আততায়ীদের চিহ্নিত করতে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের মুখে একের পর এক খুনের ঘটনায় বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।