• facebook
  • twitter
Sunday, 23 March, 2025

জাতিগত সংঘর্ষের দায় নিয়ে পদত্যাগ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর

মণিপুর হিংসায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো বারবার। হিংসার দায় নিয়েই এবার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন এন বীরেন সিং।

ফাইল ছবি

ত ২ বছরে বারবার হিংসায় উত্তপ্ত হয়েছে মণিপুর। এই হিংসায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো বারবার।হিংসার দায় নিয়েই এবার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন এন বীরেন সিং। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর ইম্ফলে ফিরেই ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। এদিন বিকেলে রাজ্যপাল অজয়কুমার ভল্লার সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপিনেতা সম্বিত পাত্রও। দীর্ঘ সময় ধরে জাতিহিংসায় উত্তপ্ত উত্তরপূর্বের রাজ্য। কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়া অসংখ্য মানুষ। বিরোধীরা বারবার এই অশান্তির কারণে আঙুল উঠেছিল মণিপুরের গেরুয়া সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে। সোমবার মণিপুর বিধানসভার অধিবেশন বসার কথা ছিলো। এই অধিবেশনে তাঁর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ চাইবার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন বিরোধীরা। সেই চাপের মুখে পড়েই শেষমেশ বীরেন সিং ইস্তফা দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

পদত্যাগপত্রে বীরেন সিং লিখেছেন, ‘এত দিন মণিপুরের মানুষের সেবা করতে পেরেছি, এটা আমার কাছে সম্মানের। মণিপুরবাসীর স্বার্থরক্ষার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ করা এবং নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।’
মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩ মে। মাঝে কিছু দিন বিরতির পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিলো। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একাধিক বাড়িঘর। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলেছিলো মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েক জন বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছিলো উন্মত্ত জনতা। রাজ্যের ৫জেলায় কার্ফু জারি করা হয়েছিলো। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবাও। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সূত্র মতে, মণিপুরে এ পর্যন্ত কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গৃহহীন আরও অনেকে। প্রায় দু’বছর ধরে চলমান জাতিগত সংঘর্ষের কারণে কুকি ও মেইতেই—দুই সম্প্রদায়ই বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছিল।

এই পরিস্থিতিতে ২০২৪-এর শেষ দিন মণিপুরে রক্তক্ষয়ী হিংসার জন্য রাজ্যের সমস্ত নাগরিকের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন বীরেন সিং। ইম্ফলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সর্বসাধারণের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ছিলো, ‘গোটা বছর দুর্ভাগ্যজনক কেটেছে আমাদের। গত বছরের ৩ মে থেকে যা ঘটে চলেছে রাজ্যে তার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি আমি। অনেকেই প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেকে ঘরছাড়া হয়েছেন। আমি অনুতপ্ত। ক্ষমা চাইছি। কিন্তু গত তিন-চার মাসের শান্তি পরিস্থিতি দেখে আমার আশা যে ২০২৫-এর মধ্যে রাজ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে।’ এইসঙ্গে রাজ্যের ৩৫টি উপজাতি গোষ্ঠীকে মিলমিশে থাকার বার্তাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

বিক্ষিপ্ত অশান্তি চলতেই থাকে মণিপুরে। এই পরিস্থিতিতে বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছিল কংগ্রেস। ফলে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটির সম্ভাবনা ছিল। যদিও কনরাড সাংমার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি সমর্থন প্রত্যাহারের পর সরকার টিকিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যা ছিলো বিজেপির কাছে। কিন্তু, সূত্রের খবর, একাধিক বিধায়ক দলের হুইপ অমান্য করে অনাস্থা ভোটে বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারতেন। এমনকি প্রায় ১২ জন বিধায়ক মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী বদলের পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে মণিপুর বিধানসভার অধ্যক্ষের সঙ্গেও বীরেন সিংয়ের মতপার্থক্য সামনে চলে এসেছিলো। এরপরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পরই মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন বীরেন সিং। তবে বীরেন সিং পদত্যাগ করলেও তিনি এখনই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ছেন না। তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন রাজ্যপাল অজয় ভাল্লা।