রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমালো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার আমলে দ্বিতীয়বারের মতো রেপো রেট কমানো হল। ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পর এপ্রিলে ফের রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয়েছে। এর ফলে রেপো রেট কমে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এর প্রভাব পড়তে পারে গৃহঋণ ও গাড়ি ঋণের ইএমআই-এর ক্ষেত্রে। বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রা নীতি কমিটি তথা এমপিসি সুদের হারে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের কথা ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পরে এটি ৬.২৫ শতাংশ থেকে কমে ৬.৬ শতাংশ হয়েছে। এটি টানা দ্বিতীয়বার রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত। এর ফলে অনেকটাই স্বস্তিতে মধ্যবিত্তরা। আশা করা হচ্ছে, রেপো রেট কমানোর পর ব্যাঙ্কগুলি গৃহ ঋণ-সহ বিভিন্ন ধরণের ঋণের সুদের হার কমাতে পারে।
রেপো রেটের ভিত্তিতেই আরবিআই বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়। এটি কমলে ব্যাঙ্কগুলিরও অর্থ ধার করার খরচ কমে যায়, আর তারা গ্রাহকদের ঋণের উপর কম সুদ আরোপ করতে পারে। ফলে হোম লোন, অটো লোন-সহ বিভিন্ন ঋণের ইএমআই কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
অন্যদিকে গোল্ড লোন সংক্রান্ত নিয়ম নীতি আরও কঠোর করতে চলেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গত এক বছরে এই খাতে অভাবনীয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে গোল্ড লোন নিয়ে বিস্তৃত নির্দেশিকা আনা হবে বলে জানিয়েছেন আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা।
২০২৫ সালের জানুয়ারির হিসেব অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক ও নন-ব্যাঙ্কিং অর্থনৈতিক সংস্থাগুলির দেওয়া সোনার ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৭৬.৯ শতাংশ বেশি। সোনার দাম বাড়ার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এই ব্যবসাও। ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলির জন্য এটি লাভজনক হয়ে উঠেছে, কারণ যিনি ঋণ গ্রহীতা, তিনি ঋণ শোধ করতে না পারলে সেই সোনা নিলামে তোলা হয়। বর্তমানে, আবার ঋণ নেওয়ার জন্য বা সময়সীমা বাড়াতে হলে ঋণ গ্রহীতাদের মূল টাকা এবং সুদ সম্পূর্ণ মিটিয়ে দিতে হয়।
তবে গোল্ড লোন নিয়ে পর্যালোচনা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেশ কিছু অনিয়মেরও খোঁজ পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ঋণ সংগ্রহ এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ, গ্রাহকের অনুপস্থিতিতে সোনার মূল্য নির্ধারণ, ঋণগ্রহীতার বিস্তারিত বিবরণ যাচাই না করা, ঋণের ব্যবহারের উপর নজরদারির ঘাটতি, ঋণের খেলাপ হলে সোনা নিলামের সময় স্বচ্ছতার অভাবের মতো বিষয়গুলি। এই সমস্ত অনিয়ম দূর করতে আরবিআই সমস্ত ব্যাঙ্ক ও সংস্থাগুলিকে তাদের সোনার ঋণ সম্পর্কিত নীতি, পদ্ধতি এবং রীতিনীতি সামগ্রিকভাবে পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে। কোথায় ত্রুটি রয়েছে তা চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরবিআই আরও বলেছে, যেহেতু সোনার ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে, তাই এই ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে, তৃতীয় পক্ষ বা আউটসোর্স পরিষেবার উপর নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করতে হবে।
এদিকে বুধবারই আরবিআই-এর তরফে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাসে পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে দাবি করা হয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতি ৬.৭ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। বুধবার আরবিআই গভর্নর জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে সার্বিক ভাবে ভারতের রিয়েল জিডিপি থাকবে ৬.৫ শতাংশ। প্রথম কোয়ার্টারে তা থাকবে ৬.৫ শতাংশ, দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ৬.৭ শতাংশ, তৃতীয় কোয়ার্টারে ৬.৬ শতাংশ এবং চতুর্থ কোয়ার্টারে ৬.৩ শতাংশ।